চিকিৎসাবিজ্ঞান দিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা
চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বা বিজয়ীদের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার (৭ অক্টোবর) থেকে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু হবে। চিকিৎসা শাস্ত্রের পাশাপাশি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তিতে অবদান রাখা ও অর্জনের জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
পুরস্কারের অর্থমূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রাউন (প্রায় ১.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) হলেও, এই স্বীকৃতি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর বই বিক্রির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি নোবেল বিজয়ীদের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দেওয়ার একটা বড় সুযোগ।
নোবেল পুরস্কার কী?
নোবেল পুরস্কার দেওয়ার প্রবর্তন করেছিলেন ধনী সুইডিশ উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেল। তিনি তার উইলে (ইচ্ছাপত্র) উল্লেখ করেছিলেন, তার সম্পত্তি মানবকল্যাণে বিশেষ অবদান রাখার জন্য পুরস্কার প্রদানের কাজে ব্যয় করা হবে। নোবেল ১৮৯৫ সালে মারা যান। তবে তার উইল নিয়ে আইনি লড়াইয়ের পর ১৯০১ সালে প্রথম নোবেল পুরস্কার প্রদান করা শুরু হয়।
নোবেল তার উইলে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যার জন্য পুরস্কার প্রদানের দায়িত্ব রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসকে দিয়েছেন। এছাড়া সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের দায়িত্ব সুইডিশ একাডেমিকে এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে পুরস্কার প্রদানের দায়িত্ব সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটকে দিয়েছিলেন। শান্তির জন্য পুরস্কার নরওয়ের পার্লামেন্ট থেকে প্রদান করা হলেও, নোবেল কেন শান্তি পুরস্কারের দায়িত্ব নরওয়েকে দিয়েছিলেন তা অজানা। তখন নরওয়ে এবং সুইডেন একটি রাজনৈতিক ইউনিয়নে ছিল।
১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেদের ৩০০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে এবং আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন করে। এই পুরস্কারটি নোবেল ফাউন্ডেশনের নিয়ম অনুযায়ী রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস প্রদান করে।
বিখ্যাত এবং কুখ্যাত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী
নোবেল পুরস্কারজয়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, নিলস বোর এবং মেরি কুরি; লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এবং আলবেয়ার কামু এবং নেলসন ম্যান্ডেলা ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র-এর মতো বিশ্বনেতারা।
তবে বেশ কিছু নোবেল পুরস্কার সময়ের সাথে সাথে বিতর্কিত হয়েছে। যেমন, ১৯৪৯ সালে এগাস মনিজকে তৎকালীন নিষিদ্ধ এবং অস্বীকৃত লোবোটমির চর্চার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
অনেকে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেলেও সেগুলোর অনেক সমালোচনা হয়েছিল, যেমন হেনরি কিসিঞ্জার, ইয়াসির আরাফাত, ইৎজাক রাবিন এবং শিমন পেরেজকে দেওয়া পুরস্কার। মহাত্মা গান্ধীকে ১৯৪৮ সালে তার মৃত্যুর আগে পুরস্কার না দেওয়াকেও অনেকেই একটি ভুল হিসেবে বিবেচনা করেন।
উৎসব
১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিবসে বিজয়ীদের হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। শান্তির জন্য পুরস্কারটি নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অসলোতে প্রদান করেন এবং বাকি পুরস্কারগুলো সুইডেনের রাজা স্টকহোমের কনসার্ট হলে প্রদান করেন।
সন্ধ্যায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ জনের মতো অতিথিকে স্টকহোম সিটি হলে একটি দৃষ্টিনন্দন ভোজের জন্য আমন্ত্রণ দেওয়া হয়। এই ভোজের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। খাবার প্রস্তুত করেন একজন প্রধান শেফ, যিনি একটি বড় রান্নার দলের নেতৃত্ব দেন। ২০০ জনেরও বেশি খানসামা বিভিন্ন খাবার এবং পানীয় অতিথিদের কাছে পরিবেশন করেন।
ভোজের কয়েক মাস আগে নির্বাচিত শেফদের থেকে বাছাই করা তিনটি মেনু নোবেল ফাউন্ডেশনের কাছে স্বাদ পরীক্ষার জন্য উপস্থাপন করা হয়। নির্বাচিত খাবার নোবেল ভোজের দিন পর্যন্ত গোপন রাখা হয়।