এআই মাত্র ৫ শতাংশ কাজ দখল করতে পারে: আর্থিক পতন নিয়ে চিন্তিত এমআইটি’র অর্থনীতিবিদ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যতোই আশাব্যঞ্জক হোক না কেন, এটি টিকবে না বলে মন্তব্য করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) বিশিষ্ট অধ্যাপক ড্যারন অ্যাসিমোগ্লু। তিনি বলেন, "বর্তমানে ব্যবসায়ীরা যে হারে এ খাতে বিনিয়োগ করছেন তাদের জন্য এটি একটি খারাপ খবর।"
যদিও সাক্ষাৎকারের প্রথমেই ড্যারন অ্যাসিমোগ্লু বলেন যে তিনি এআই'র বিপক্ষে নন। তিনি এআই বুঝেন। কিন্তু এ প্রযুক্তির প্রচার যেভাবে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির বিকাশকে প্রভাবিত করছে তা নিয়ে তিনি চিন্তিত। কারণ তিনি মনে করেন এটি ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে আর্থিক ঝুঁকি ফেলছে।
তার হিসাব অনুয়ায়ী, আগামী দশকগুলোতে সব চাকরির মধ্যে খুবই কম সংখ্যক অর্থাৎ মাত্র পাঁচ শতাংশ চাকরি এআই দখল করে নিতে পারে। কর্মীদের জন্য এটি একটি সুসংবাদ। তবে যেসব কোম্পানি এই প্রযুক্তিতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে তাদের জন্য এটি অত্যন্ত খারাপ খবর। কারণ এ কোম্পানিগুলো আশা করছে এআই উৎপাদন খাতে বড় ধরনের বিপ্লব আনবে।
তিনি বলেন, "এভাবে অনেক অর্থ অপচয় হবে। আপনি ঐ পাঁচ শতাংশ থেকে কোনো অর্থনৈতিক বিপ্লব পাবেন না।"
অ্যাসিমোগ্লু এখন ওয়াল স্ট্রিট এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বড় কোম্পানির নির্বাহী পর্যায়ে এআই নিয়ে অতিরিক্ত উন্মাদনার বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং সুপরিচিত কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। এমআইটির ইনস্টিটিউট প্রফেসর উপাধি পাওয়া অ্যাসিমোগ্লু এক দশক আগে প্রথম একাডেমিক ক্ষেত্রের বাইরে খ্যাতি অর্জন করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের জরিপে বেস্টসেলার বই 'হোয়াই নেশনস ফেইল'-এর সহলেখক তিনি। এআই এবং নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব খাতে বিশেষ করে অর্থনৈতিক কাজে তিনি দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এআই সমর্থকরা যুক্তি দেন যে এটি ব্যবসাগুলিকে অনেক কাজের অংশ স্বয়ংক্রিয় করতে এবং প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে নতুন যুগের সাফল্য আনতে সহায়তা করবে। এআই উত্থানের সাথে জড়িত কোম্পানি এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, বিভিন্ন কোম্পানি এবং সরকারের প্রযুক্তি সেবার চাহিদা বাড়তে থাকবে। ফলে আগামী বছরগুলোতে ডেটা সেন্টারের সরঞ্জাম আপগ্রেড করতে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে।
এ ধরণের দাবি সংশয় বাড়াতে শুরু করেছে। কারণ এআইতে বিনিয়োগগুলো মাইক্রোসফট ও অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের তুলনায় ব্যয় অত্যন্ত বাড়িয়েছে। তবে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীরা এখনও এআই ঢেউয়ের সুযোগ নিতে উচ্চ মূল্যে শেয়ার কিনতে প্রস্তুত।
অ্যাসিমোগ্লু আগামী কয়েক বছরে এআই-এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনটি সম্ভাব্য চিত্র কল্পনা করেছেন।
প্রথম এবং সবচেয়ে ইতিবাচক পরিস্থিতিতে, এআই নিয়ে অতিরিক্ত প্রচারণা ধীরে ধীরে কমে যাবে এবং প্রযুক্তির "পরিমিত" ব্যবহারে বিনিয়োগ স্থিতিশীল হবে।
দ্বিতীয় পরিস্থিতিতে, এআই নিয়ে উন্মাদনা আরও এক বা দুই বছর চলবে, যার ফলে প্রযুক্তি খাতে শেয়ারের মূল্যে পতন ঘটবে এবং বিনিয়োগকারী, নির্বাহী ও শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিটি নিয়ে হতাশ হয়ে পড়বে। এটিকে তিনি "এআই বসন্তের পরে এআই শীত" বলে অভিহিত করেছেন।
তৃতীয় এবং সবচেয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি হলো, বছরের পর বছর ধরে এআই নিয়ে উন্মাদনা অব্যাহত থাকবে, কোম্পানিগুলো হাজার হাজার চাকরি ছাঁটাই করবে এবং 'তারা কী করবে তা না বুঝেই' শত শত বিলিয়ন ডলার এআই-তে বিনিয়োগ করবে। পরবর্তীতে, যখন প্রযুক্তিটি সফল হবে না, তখন আবার কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করবে। এর ফলে পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে।
সর্বাধিক সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে অ্যাসিমোগ্লু মনে করেন, এটি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পরিস্থিতির মিশ্রণ হবে। বড় কোম্পানির নির্বাহী পর্যায়ে এআই প্রবৃদ্ধি থেকে পিছিয়ে পড়ার ভয় খুব বেশি, তাই তিনি মনে করেন প্রচারণা কমার সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, "যখন প্রচারণা বাড়ে, তখন পতন খুব একটা মসৃণ হয় না।"
শুধু দুই-তৃতীয়াংশ পরিসংখ্যানই এআইতে বিনিয়োগের উন্মাদনার মাত্রা প্রকাশ করে। মাত্র চারটি কোম্পানি- মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট, অ্যামাজন এবং মেটা প্ল্যাটফর্মস একত্রে এ সময়ের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূলধন বিনিয়োগ করেছে, যার বড় অংশই এআই খাতে ব্যয় করা হয়েছে।
অ্যাসিমোগ্লু বলেন, আজকের বড় ভাষাগত মডেল যেমন ওপেনএআই-এর চ্যাট জিপিটি অনেক দিক থেকে চমৎকার। তাহলে কেন এটি মানুষকে প্রতিস্থাপন করতে বা তাদের কাজকে অনেক সহজ করতে পারছে না? তিনি এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, নির্ভরযোগ্যতার সমস্যা এবং মানুষের মতো প্রজ্ঞা বা বিচার-বিবেচনার অভাব। তাছাড়া, এআই নির্মাণ বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মতো শারীরিক কাজও স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারবে না।
তিনি বলেন, "আপনার নির্ভরযোগ্য তথ্য বা এই মডেলগুলোর নির্দিষ্ট ধাপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য আপনার আগের মতো কর্মীর প্রয়োজন হবে। কয়েকটি ক্ষেত্রে, কিছু মানব তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে কোডিংয়ের মতো কাজ এআই করতে পারবে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি পারবে না।"
তিনি আরও বলেন, "এটাই বর্তমান বাস্তবতা।"