রাশিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি দক্ষিণ কোরিয়ার
রাশিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের 'অবিলম্বে সরানোর' আহ্বান জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির দাবি, এই সৈন্যদের ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সিউলের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার প্রায় ১ হাজার ৫০০ সৈন্য, যাদের মধ্যে বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাও আছেন, ইতোমধ্যে রাশিয়ায় পৌঁছেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জর্জি জিনোভিয়েভের সঙ্গে এক বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিম হং-কিউন এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেন এবং জানান, সিউল "সব ধরনের ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এর জবাব দেবে।"
জিনোভিয়েভ এই উদ্বেগের কথা রাশিয়াকে জানাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও দাবি করেন, মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যকার সহযোগিতা "আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যে থেকেই হচ্ছে"। তবে কোন সহযোগিতা কথা তিনি বলেছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
পরবর্তীতে সোমবার (২১ অক্টোবর) ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সহযোগিতা "তৃতীয় কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়" এবং এতে "অন্যদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।"
এ বিষয়ে পিয়ংইয়ং থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি। দক্ষিণ কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ করে আসছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি সে সীমাও ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করছে দক্ষিণ কোরিয়া।
কিছু দক্ষিণ কোরিয়ান সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, প্রায় ১২ হাজার উত্তর কোরিয়ান সৈন্য মোতায়েন করা হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম হং-কিউন বলেছেন, "এটি শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য নয়, পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও গুরুতর হুমকি।"
ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং উন জুন মাসে একটি নিরাপত্তা চুক্তি সই করার পরে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, কোনো দেশ আক্রমণ করলে তারা একে অপরকে সহযোগিতা করবে। গত সপ্তাহে পুতিন এই চুক্তির অনুমোদন দিতে একটি বিল সংসদে পেশ করেন।
ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুত্তে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের অংশগ্রহণ এই সংঘাতকে "নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে।" দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল রুত্তের সঙ্গে ফোনে আলাপ করার সময় ন্যাটোর সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দেন।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, যিনি বর্তমানে সিউল সফরে রয়েছেন, রাশিয়ার পদক্ষেপকে "উন্মত্ত ও অবৈধ" বলে অভিহিত করেছেন এবং সিউলের সঙ্গে মিলে লন্ডন এর জবাব দেবে বলে জানান। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানও উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে সামরিক সম্পর্ক গভীর হওয়ার সমালোচনা করেছে।
বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান জানান, চীন আশা করে সব পক্ষ উত্তেজনা কমাতে কাজ করবে এবং ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোবে।
কোরিয়া ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইন্সটিটিউটের মুন সিওং-মোক বলেন, উত্তর কোরিয়ার এই অংশগ্রহণ যুদ্ধের জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং আরও দেশকে সংঘাতে জড়াতে পারে।
মুন বলেন, "আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সম্ভবত রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং চাপ বাড়াবে। তবে উত্তর কোরিয়ার জড়িত থাকা সত্যিই কোন দেশের জন্য উপকৃত হবে কি না, তা দেখতে হবে।"
তবে অন্যদের মতে, ভাষাগত সমস্যা ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় রাশিয়ার জন্য উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের সামনের সারিতে একীভূত করা কঠিন হতে পারে।
ইউক্রেনের ডিফেন্স এক্সপ্রেসের সম্পাদক ভ্যালেরি রায়াবিখ বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, যা রুশ সৈন্যদের অন্যত্র যুদ্ধ করার জন্য মুক্ত করতে পারে। তবে তিনি মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা শীঘ্রই যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেবেন।
তিনি বলেন, "এই ইউনিটগুলোর অবিলম্বে সামনের সারিতে উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা আমি বাতিল করব।"