ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু, প্রতিবাদে ইসরায়েল জুড়ে বিক্ষোভ
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে বরখাস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর ফলে, ইসরায়েল জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের সূচনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) এক ঘোষণায় নেতানিয়াহু জানান, গাজা যুদ্ধ এবং লেবাননে পরিস্থিতি নিয়ে গ্যালান্টের ওপর আস্থা হারিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, "গত কয়েক মাসে এই আস্থা কমে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে আমি আজ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মেয়াদ শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের মধ্যে মতভেদ "অস্বাভাবিকভাবে" প্রকাশ্যে এসেছে এবং এটি "আমাদের শত্রুদের কাছে আনন্দের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এর থেকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা লাভ করেছে।"
এর কিছুক্ষণ পরেই গ্যালান্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) একটি পোস্টে বলেন, "ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সব সময় আমার জীবনের মিশন হিসেবে থাকবে।"
নেতানিয়াহু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজকে গ্যালান্টের স্থলাভিষিক্ত করে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। গিদেওন সারকে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এক্স-এ একটি পোস্টে কাটজ প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তিনি "যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ করবেন" এবং গাজায় আটককৃত বন্দিদের ফিরিয়ে আনবেন। এটিকে তিনি "সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধের মিশন" বলে উল্লেখ করেন।
এই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাজারো বিক্ষোভকারী ইসরায়েলের বাণিজ্যিক কেন্দ্র তেল আবিবে জড়ো হন। তারা শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন এবং আগুন জ্বালিয়ে দেন।
একই সময়ে শত শত বিক্ষোভকারী জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে জড়ো হন। এছাড়াও দেশটির বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানানো হয়।
দীর্ঘদিন থেকেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের মধ্যে মতবিরোধ চলছিল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় হামলা বন্ধ এবং হামাসের হাতে আটক বন্দিদের দেশে ফেরানোর জন্য একটি চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
গ্যালান্ট বলেছিলেন, এই যুদ্ধে স্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে। তবে নেতানিয়াহু বারবার বলেন, হামাসকে গাজার প্রশাসক এবং সামরিক শক্তি হিসেবে ধ্বংস না করা পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ করা যাবে না।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৪৩ হাজার ৩৯১ জন নিহত এবং ১ লাখের ওপর মানুষ আহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি আক্রমণ চালানো হলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন বলে আল জাজিরার ইসরায়েলি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি তালিকায় উল্লেখ করা হয়। এসময় প্রায় ২৫০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকেই গাজায় সামরিক অভিযান চালানো শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের কট্টরপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির ইয়োভ গ্যালান্টের বরখাস্ত হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করে এক্স-এ বলেন, "তার নেতৃত্বে সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন সম্ভব নয়।" এর আগেও বেন-গাভির গ্যালান্টকে পদ থেকে সরানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন গ্যালান্টকে "বিশ্বস্ত অংশীদার" হিসেবে উল্লেখ করে বলে, ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন "অটুট" থাকবে এবং নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের সঙ্গে "ঘনিষ্ঠভাবে" কাজ করবে।
এর আগে ২০২৩ সালের মার্চে বিচারব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে মতবিরোধের কারণে নেতানিয়াহু গ্যালান্টকে বরখাস্ত করেছিলেন। কিন্তু ব্যাপক জনবিক্ষোভের পর তাকে পুনর্বহাল করা হয়, যেটি "গ্যালান্ট নাইট" নামে পরিচিত।
গ্যালান্ট চেয়েছিলেন, নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলুক, ইসরায়েলের গাজায় বেসামরিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের কোনো পরিকল্পনা নেই।
ইসরায়েলের যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রিসভার মধ্যে সামরিক অভিযানের দিকনির্দেশনা নিয়ে বিরোধের প্রকাশ্য ইঙ্গিত ছিল এটি। যদিও সাধারণত এরকম বিরোধ দেখা যায় না।
গ্যালান্ট বলেন, "অক্টোবর থেকে আমি নিয়মিতভাবে এই বিষয়টি মন্ত্রিসভায় তুলে ধরেছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।"
তিনি একটি প্রস্তাবিত বিলেরও বিরোধিতা করেন, যেটি আল্ট্রা-অর্থোডক্স নাগরিকদের সামরিক সেবা থেকে অব্যাহতি দিত।
গ্যালান্ট এর আগে গাজার ওপর ইসরায়েলি শাসন কার্যকর করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকার করেছিলেন এবং বন্দি বিনিময়ের সমর্থক ছিলেন। এর ফলে, নেতানিয়াহুর সরকারের আল্ট্রা-অর্থোডক্স সদস্যদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়েছিল তার।