২৪ ঘণ্টায় ট্রাম্প কি আসলেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারবেন?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে এখন চূড়ান্ত ফল গণনা চলছে। ইতোমধ্যেই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। রাশিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধান প্রশ্ন হলো, নতুন হোয়াইট হাউস প্রশাসনের সঙ্গে ইউক্রেনের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা কেমন হবে এবং ট্রাম্পের বিজয় মস্কো ও কিয়েভের জন্য কী বার্তা বয়ে আনবে।
ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন, যদি তিনি জয়ী হন, তার আনুষ্ঠানিক অভিষেকের আগেই ২০ জানুয়ারির মধ্যে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের বক্তব্যকে নির্বাচনপূর্ব বক্তৃতা হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে ট্রাম্প এর আগেও এমন অপ্রথাগত বক্তব্য দিয়ে আলোচিত হয়েছেন।
যেমন, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প বেশ জোর গলায়ই ঘোষণা করেছিলেন যে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সমস্যা সমাধান করবেন। তবে হ্যানয়তে ট্রাম্প-কিম বৈঠকের সামগ্রিক ফলাফল ছিল, উভয় পক্ষ কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। যার অর্থ জটিল ভূরাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে এ রিপাবলিকানের তেমন কোনো সফলতা নেই।
তবে এবার নির্বাচনী প্রচারণায় আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে তার পরিকল্পনা কী সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।
তাছাড়া এটি কীভাবে কার্যকর হতে পারে তাও স্পষ্ট নয়। কারণ আগামী ২০ জানুয়ারি দুপুরের আগ পর্যন্ত ট্রাম্পের সেরকম কোনো ক্ষমতা নেই, বিশেষ করে, পররাষ্ট্র নীতিতে। কারণ সে পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন জো বাইডেন।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে ৪৭তম প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে (সরকার পরিচালনার জন্য) একটি টিম গঠন করতে হবে। ওয়াশিংটনে পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দুটি সরকার থাকার কোনো নিয়ম নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রে দ্বৈত ক্ষমতা সংক্রান্ত কোনো ঝুঁকিও নেই।
কী শর্তে ইউক্রেনের সংঘাত শেষ হতে পারে?
এখন ইউক্রেনের সংঘাত শেষ হওয়ার সম্ভাবনার দিকে নজর দেওয়া যাক। তাত্ত্বিকভাবে এটি শেষ করা সম্ভব। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, শর্ত কী হবে কিংবা বিজয়ী কে?
এই পর্যায়ে পশ্চিমা জোট (যার নিঃশর্ত ও নির্ভেজাল সদস্য ট্রাম্প) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শর্তে সংঘাতের অবসান করতে চায় না। কারণ উদাহরণস্বরূপ শর্তগুলো হতে পারে- কিয়েভের জোটনিরপেক্ষ অবস্থান, নতুন অঞ্চলের উপর রাশিয়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা এবং ইউক্রেনকে অস্ত্রমুক্ত এবং নাৎসিমুক্ত করা।
এসব শর্ত মেনে নেওয়ার অর্থ হলো, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য একটি রাজনৈতিক পরাজয়। অথবা এর আরেকটি অর্থ হতে পারে, সেটি হলো ওয়াশিংটন ও ব্রাসলস এতোদিন যা কিছু করেছে, তার সবই ব্যর্থ হয়েছে এবং এসবে কোনো সামরিক-রাজনৈতিক প্রভাব পড়েনি। তবে এটি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে নতুন মার্কিন প্রশাসন এই পথে হাঁটবে। আফগানিস্তানে হওয়া অপমানের কথা বিবেচনা করলে দেখা যেতে পারে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির মর্যাদার জন্য ক্ষতিকর।
যদি ট্রাম্প আসলেই ইউক্রেন সংঘাতের অবসান চান, তাহলে তার এমন এটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে, যেখানে দেখানো হবে যুদ্ধে রাশিয়াও জয়লাভ করেনি এবং ইউক্রেনও পরাজিত হয়নি। অর্থাৎ ইউক্রেন তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধরে রেখেছে।
এ বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে, যুদ্ধের অবসান চেয়ে কিয়েভের সবার আগে এগিয়ে আসা। যাতে এটি পুরোপরি মনে হয় যে, এটি পশ্চিমাদের উদ্যোগ নয়।
তবে সময়ই বলে দিবে যে বিদ্যমান বৈপরীত্যগুলো কার্যকরভাবে সমাধান করে ট্রাম্প সমস্যা সমাধান করতে পারবেন কিনা যেখানে পশ্চিমা বিশ্বও পরাজিত হবে না, রাশিয়াও বিজয়ী হবে না এবং ইউক্রেনও পরাজিত হবে না। আর এটি যত বড়ই পরিকল্পনা হোক না কেন, তা ২৪ ঘণ্টায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
আর নিশ্চই, যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টের হাতে প্রভাব খাটানোর জন্য অর্থনৈতিক ও সামরিক উপায় আছে। চাইলে নতুন হোয়াইট হাউস প্রশাসন মস্কোর ওপর চাপ আরও বাড়াতে পারে এবং অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কিয়েভকে হতাশাজনক পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে। অর্থাৎ, হোয়াইট হাউসের কাছে স্পষ্টই বিকল্প রয়েছে যা রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়েরই কষ্ট বাড়াতে পারে।
এখন মূল প্রশ্ন হলো, মস্কো এসব প্রস্তাবে রাজি হবে কিনা এবং ২০ জানুয়ারির আগে অবশিষ্ট সময়ে ক্রেমলিন পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে রাখার জন্য যুদ্ধে অটল থাকবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
অনুবাদ: সাদিয়া আফরিন রেনেসাঁ