জেন জি’রা বই পড়াকে সময়ের অপচয় হিসেবে দেখছে!
সম্প্রতি গবেষণায় একটি উদ্বেগজনক বিষয় উঠে এসেছে। অনেক শিক্ষার্থীই কলেজে উঠে পুরো বই পড়ে শেষ করার জন্য প্রস্তুত থাকে না। বক্তব্যটি অত্যন্ত ব্যাপক হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩ জন অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলেন প্রবন্ধটির লেখক রোজ হরোভিচ। অধ্যাপকরা প্রত্যেকেই একই কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তরুণ সমাজের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বিষয়ক সমালোচনা শতাব্দী ধরে চলে আসছে। তবে গত দশকে তরুণ সমাজের মধ্যে পড়ার আগ্রহের মধ্যে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা গেছে। বেশিরভাগ অধ্যাপকই জানিয়েছেন, তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাহিত্যের প্রতি মনোযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রজন্মগত পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন।
এটি কেন ঘটছে?
এর বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব। তাছাড়া অনেক সেকেন্ডারি ও হাই স্কুলগুলোতে পুরো বই খুব কমই পড়ানো হয়। তবে, প্রবন্ধে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দক্ষতাকে নয়, বরং মানসিকতার পরিবর্তনকে দায়ী করছেন রোজ। তিনি তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, আজকের প্রজন্মের পাঠে আগ্রহ নেই। তরুণরা বলছে, এসব বই গুরুত্বপূর্ণ নয়।
লেখক আরও বলেন, "অধ্যাপকরা মনে করেন, তাদের শিক্ষার্থীরা অলস না। তবে তারা হতবাক হয়েছেন, এখনকার কলেজ শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকে ও সবসময় উদ্বিগ্ন থাকে। আর তারা তাদের সময়সূচির বেশিরভাগ ব্যক্তিগত উন্নয়নের চেয়ে ভবিষ্যৎ চাকরির জন্য প্রাসঙ্গিক কাজে ব্যয় করে।"
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি অধ্যাপক জেমস শ্যাপিরো একটি ইমেইলে জানিয়েছেন, "আমি কলেজে সাহিত্য পড়াই। যেসব প্রতিবেদনগুলোতে বলা হচ্ছে, সাহিত্যকর্ম বুঝতে স্নাতকের ছাত্র-ছাত্রীদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে, এসব আমার কাছে অনেকটাই বাড়িয়ে বলা বলে মনে হয়। সময়ের সাথে আমি খুব কম পরিবর্তন দেখেছি। বরং বর্তমান ছাত্রদের পাঠের দক্ষতা অনেক বেশি তীক্ষ্ণ। তাছাড়া আমি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি। আমি ভাবতাম আমি এগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতাম।"
তিনি আরও বলেন, " নাটক বিষয়ে পড়াতে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে এবং কবিতা পড়াতে সময় কম লাগে। তবে আমার যে-সব সহকর্মীরা উপন্যাস পড়ান, তারা দেখছেন, ছাত্ররা এ বিষয়ে কম মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে। যেমন জর্জ এলিয়টের বিশাল উপন্যাস ড্যানিয়েল ডেরন্ডা বা মিডলমার্চ-এর উপর আগের মতো অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া যায় না। বিষয়টা এমন নয় যে ছাত্ররা বিষয়টিতে অভ্যস্ত নয়, সমস্যা হলো, তাদের সময় এবং মনোযোগের ওপর অনেক চাপ থাকে, যার ফলে তারা সাহিত্যকর্মে পুরোপুরি বা সহজে নিমজ্জিত হতে পারে না।"
১৯৭১ সালে, ৩৭ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীর কলেজ জীবনের একটি মূল লক্ষ্য ছিল আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়া। ৭৩ শতাংশ বলেছিলেন যে তারা কলেজে ভর্তি হয়েছেন জীবনের একটি অর্থপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশের জন্য। ২০১৫ সালের মধ্যে, এই পরিসংখ্যান প্রায় উল্টে গেছে। ৮২ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী বলছেন, কলেজে ভর্তি হয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়া তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ৪৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বলেছেন, তারা জীবনের একটি অর্থপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ করতে চান।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসিক্সের অধ্যাপক জোসেফ হাউলি বলেন, "শিক্ষক ও অভিভাবকরা মূলত প্রি-প্রফেশনাল কোর্সগুলোর ওপর জোর দিয়েছেন এবং মানবিক পাঠ্যক্রমের ওপর গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছেন। যার কারণে এ পরিস্থিতি একটি উপন্যাস পড়ে ঘণ্টা পার করে দেওয়াকে অযৌক্তিক বলে ধারণা দেয়।
তবে কিছু দৃষ্টিকোণ থেকে একটি আশাব্যঞ্জক উপসংহার টানা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন রোজ হরোভিচ। তিনি বলেন, আমরা যা মূল্যায়ন করি তা আমরা পরিবর্তন করি। তাই এটি যদি যুক্তিসংগত হয়ে থাকে তাহলে তা আবার সমাজে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে এ দায়িত্ব কেবল জেন জি প্রজন্মের নয়। যারা পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের সবাইকেই এ পরিবর্তনকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে।