ভাগাড়ে হারিয়ে যাওয়া ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিটকয়েনের হার্ড ড্রাইভ উদ্ধারে ব্রিটিশ নাগরিকের মামলা
এক দশক আগে বিটকয়েনের তথ্য ভর্তি একটি হার্ড ড্রাইভ ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ এক নাগরিক। পরবর্তীতে আজ পর্যন্ত সে দিশেহারা হয়ে ঐ হার্ড ড্রাইভটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন; যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড।
জেমস হওয়েল নামের এই ব্যক্তি নিউপোর্ট সিটি কাউন্সিলের কাছে কাছে ভাগাড়টি খননের দাবি জানিয়ে আসছেন। অন্যথায় এর পরিবর্তে সরকার থেকে ৪৯৫ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ পেতে মামলার আবেদন করছেন।
বিবাদমান বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হাইকোর্টের এক বিচারককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে হওয়েলের বিরুদ্ধে কাউন্সিলকে ঘুষ প্রদানের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কাউন্সিলের আইনজীবী ব্যারিস্টার জেমস গোদি জানান, হওয়েল বিটকয়েনের মোট মূল্যের ১০ ভাগ সিটি কাউন্সিলকে প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যাতে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে।
অন্যদিকে হওয়েলের আইনজীবী ডিন আর্মস্ট্রং কে.সি মনে করেন, বিষয়টিকে ঘুষ হিসেবে আখ্যায়িত করা দুঃখজনক ও ভিত্তিহীন। বিটকয়েন উদ্ধারে তার মক্কেলের ভাগাড়টি খননের অধিকার রয়েছে।
বিষয়টির শুনানির পর বিচারক কেইসার কেসি সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আগামীতে ফের শুনানি দিন ধার্য করবেন বলে জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয় হচ্ছে, হওয়েলের অভিযোগটি পরবর্তী বিচার পর্যায়ে যাবে কি-না।
এদিকে হওয়েল আইনি প্রস্তুতি গ্রহণের পরেই দাবিটি খারিজ করে দিতে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিল সিটি কাউন্সিল। কেননা কাউন্সিলের মতে, স্তুপ খনন করে বিটকয়েনের হার্ড ড্রাইভ খুঁজে বের করা তাদের কাজ নয়।
কাউন্সিল যুক্তি দিয়েছে যে, আইন অনুযায়ী ময়লার স্তুপে জমা করা বস্তুগুলো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি। সেক্ষেত্রে একটি হার্ড ড্রাইভ খুঁজতে গিয়ে ভাগাড়টি খনন করতে পরিবেশগত দিক বিবেচনায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
কাউন্সিলের আইনজীবী বলেন, "কাউন্সিল আইন মেনে চলে এবং তাই খননের অনুমতি দিতে বাধ্য নয়। কেননা তাদের মতে এটি জনস্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। বিটকয়েন নিয়ে উৎসাহীরা আইনের ঊর্ধ্বে নয়।"
কাউন্সিলের আইনজীবী মনে করেন, বিটকয়েন যেহেতু বহু বছর আগে ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হয়েছিল তাই এই সম্পর্কিত কোনো দাবি এখন আর কার্যকর নেই।
অন্যদিকে অভিযোগটি পূর্ণ মামলা হিসেবে পরিচালনা করার রায়ে হওয়েলের আইনজীবীরা জানান, হার্ড ড্রাইভের মালিকানা সম্পর্কিত বিষয়টি নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যেটাকে প্রমাণ করতে পারলেই মামলাটি অগ্রসর হবে।
হওয়েলের আইনজীবী যুক্তি দিয়েছেন যে, হার্ড ড্রাইভের জন্য খনন কাজ করা হলে সেটি হবে পরিকল্পিত। এই কাজ দক্ষতাসম্পন্নভাবে করা হবে।
আইনজীবী আর্মস্ট্রং বলেন, "মামলাটিকে সম্পূর্ণ বিচারে যেতে না দেওয়া হলে হওয়েলসের প্রতি গুরুতর অবিচার করা হবে। আমরা বিটকয়েনের মালিকানার উপর বেশ জোর অধিকার রাখি।"
জেমস হওয়েলের ঐ হার্ড ড্রাইভে ছিল ৮ হাজার বিটকয়েন। যে সময়ে এটি হারিয়ে যায় তখন এর মূল্য ছিল ৪ মিলিয়ন ডলার।
জেমস মূলত ভার্চুয়াল মুদ্রার বাজারে আসার প্রথম দিকে বিটকয়েনগুলো কিনেছিলেন। সেক্ষেত্রে কয়েনে এক্সেসের জন্য প্রাইভেট কোড তিনি ঐ হারিয়ে যাওয়া ড্রাইভটিতে সংরক্ষণ করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে তিনি ভুলবশত ড্রাইভটি ফেলে দেন।
এরপর জেমস হার্ড ড্রাইভটি খোঁজার জন্য খনন কার্যের অনুমতি নিতে নিউপোর্ট সিটি কাউন্সিল বরাবর আবেদন করেছিলেন। তবে নগর প্রশাসন তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তার সাথে আলোচনায় বসতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
সাতোশি নাকামোতো নামে পরিচিত এক অজ্ঞাত পরিচয়ের কম্পিউটার প্রোগ্রামার ২০০৯ সালে বিটকয়েনের প্রবর্তন করেন। এর আগে নিউপোর্ট সিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র ২০২১ সালে জানিয়েছিল যে, জেমসের পক্ষ থেকে ২০১৩ সাল থেকে বেশ কয়েকবার ময়লার ভাগাড় থেকে বিটকয়েন সম্বলিত হার্ডওয়্যার খুঁজে বের করার ব্যাপারে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে তাদেরও অত্র এলাকা খননের অনুমতি নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই বিটকয়েনের রমরমা অবস্থার তৈরি হয়েছে। একইসাথে আর্থিক বাজারের প্রত্যাশা, ট্রাম্প প্রশাসন ক্রিপ্টো–বান্ধব হবে।
সিডনির এটিএফএক্স গ্লোবালের প্রধান বাজার বিশ্লেষক নিক টুইডেল বলেন, "পরিষ্কারভাবেই এটা ট্রাম্পের জন্য হচ্ছে। কারণ তিনি এই শিল্পের খুবই সমর্থনকারী। এর মানে হলো ক্রিপ্টোর মজুত ও মুদ্রা উভয়ের চাহিদা আরও বাড়বে। নির্বাচনের ফল আসার পর বিটকয়েনের দাম প্রায় রেকর্ড পর্যায়ে ওঠার মানে হলো, এই মুদ্রার ওপরে কেবল খোলা আকাশ রয়েছে।"
প্রচারণা চালানোর সময় ট্রাম্প ডিজিটাল সম্পদ গ্রহণ করেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি 'এই গ্রহের ক্রিপ্টো রাজধানী' বানাবেন এবং বিটকয়েনের একটি জাতীয় মজুত গড়ে তুলবেন।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান