ময়লার স্তূপে ৫৯৮ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বিটকয়েন হার্ডড্রাইভ উদ্ধারে করা মামলা খারিজ
এক ব্যক্তি ৫৯৮ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বিটকয়েন হার্ডড্রাইভ আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার করতে যুক্তরাজ্যের নিউপোর্টের কাউন্সিলের বিরুদ্ধে মামলা করলেও, বিচারক তা খারিজ করে দিয়েছেন। খবর বিবিসি'র।
জেমস হাওয়েলস নামের ওই ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে তার প্রাক্তন সঙ্গী ভুলবশত একটি হার্ডড্রাইভ ফেলে দেন, যেখানে ৫৯৮ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের (প্রায় ৭২৯ মিলিয়ন ডলার) বিটকয়েন সংরক্ষিত ছিল। তিনি ওই আবর্জনার স্তূপ থেকে হার্ডড্রাইভটি উদ্ধারের জন্য সেই জমিতে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে মামলাটি করেন।
কিন্তু নিউপোর্ট কাউন্সিল হাইকোর্টের একজন বিচারকের কাছে দাবি জানিয়েছেন, এ মামলা খারিজ করা হোক। তারা জমিতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া এবং ৪৯৫ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণের দাবিও অস্বীকার করেন।
বিচারক কাইসার কেসি রায়ে বলেন, মামলার কোনো "যুক্তিসংগত ভিত্তি" নেই এবং পূর্ণাঙ্গ বিচারে বাদীর জয় পাওয়ার "বাস্তব সম্ভাবনা" নেই।
বিচারকের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় জেমস হাওয়েলস জানান, তিনি "অনেক হতাশ" হয়েছেন।
তিনি বলেন, "মামলা প্রথম শুনানিতেই খারিজ হওয়ায় আমাকে নিজের পক্ষ দাঁড় করানোর সুযোগই দেয়নি, বা কোনোভাবেই ন্যায়বিচারের সুযোগ পাইনি। পূর্ণ বিচারেই আরও অনেক কিছু ব্যাখ্যা করা সম্ভব ছিল এবং আমি সেটাই আশা করেছিলাম।"
তিনি আরও বলেন, "গত ১২ বছর ধরে নিউপোর্ট সিটি কাউন্সিলের সঙ্গে আমি প্রতিটি উপায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন আমাকে বলা হচ্ছে সময় শেষ। এটা খুবই অবমাননাকর।"
হাওয়েলস বলেন, "এটা লোভের ব্যাপার নয়, আমি লাভ ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু ক্ষমতার অবস্থানে থাকা কেউ আমার সঙ্গে সঠিকভাবে কথা বলছে না।"
তিনি মন্তব্য করেন, "এই রায় আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে, আমার জন্য আর কিছুই বাকি রাখেনি। এটা ব্রিটেনের ন্যায়বিচারের প্রতি মহান অবিচার।"
ডিসেম্বর মাসে শুনানিতে জানানো হয়, জেমস হাওয়েলস বিটকয়েনের একজন প্রাথমিক ব্যবহারকারী ছিলেন এবং সফলভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করেছিলেন। তার হারানো ডিজিটাল ওয়ালেটের মূল্য বেড়ে যাওয়ায়, হাওয়েলস হার্ডড্রাইভ খুঁজে বের করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দলের ব্যবস্থা করেন।
তিনি কাউন্সিল থেকে সাইটে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছিলেন এবং হার্ডড্রাইভ উদ্ধার হলে হারানো বিটকয়েনের একটি অংশ তাদের দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
২০০৯ সালে তিনি প্রায় কিছুই খরচ না করে বিটকয়েন মাইনিং করেছিলেন,এবং পরবর্তীতে সেটা ভুলে গিয়ে ফেলে দেন। ২০২৪ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে কাউন্সিলের পক্ষে আইনজীবী জেমস গডি কেসি যুক্তি দেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী হার্ডড্রাইভটি যখন আবর্জনার স্তূপে প্রবেশ করেছে, তখন তা কাউন্সিলের মালিকানায় চলে গেছে। তারা আরও বলেন, পরিবেশগত অনুমতিগুলোর কারণে হার্ডড্রাইভ খুঁজে বের করার জন্য সাইট খনন করা সম্ভব নয়।
বিটকয়েনের ১০ শতাংশ স্থানীয় সম্প্রদায়কে দান করার প্রস্তাব কাউন্সিলকে "ঝুঁকি নিতে" এবং "লাভের অংশ নেওয়ার জন্য সাইনআপ করতে" উৎসাহিত করছিল বলে জানান গডি কেসি।
লিখিত রায়ে বিচারক বলেন, "আমি এটাও মনে করি যে, মামলাটি বিচারে গেলে জয়ী হওয়ার কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই এবং এর বিচার করা উচিত নয়।"
ল্যান্ডফিল্ডে ১.৪ মিলিয়ন টন বর্জ্য রয়েছে। তবে হাওয়েলস দাবি করেন, তিনি হার্ডড্রাইভের অবস্থান ১ লাখ টন এলাকার মধ্যে সংকুচিত করেছেন।
হাওয়েলস ধারণা করছেন, আগামী বছর তার হার্ডড্রাইভের বিটকয়েনের মূল্য ১ বিলিয়ন পাউন্ড হতে পারে।
বিটকয়েন কী?
সাতোশি নাকামোতো (প্রকৃত নাম অজানা) নামে একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ২০০৯ সালে বিটকয়েনের প্রবর্তন করেন। এটিকে সাধারণত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি, ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এটি এমন একটি মুদ্রা যা পুরোপুরি ভার্চুয়াল, অর্থাৎ এর কোনো শারীরিক মুদ্রা বা নোট নেই।
এটি ব্যবহার করে পণ্য ও সেবা কেনা যায়। তবে, অনেক দোকান বিটকয়েন গ্রহণ করে না এবং কিছু দেশ, যেমন চীন ও সৌদি আরব, এটি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে।