নিজের সামরিক ঘাঁটি এবং আসাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নীরব রাশিয়া
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার (৮ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে বলেছে, 'সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আদেশ দেওয়ার পরে পদত্যাগ করেছেন এবং দেশত্যাগ করেছেন।'
তবে তিনি এখন কোথায় আছেন বা রাশিয়ান সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় রাখার পরিকল্পনা করছে কি না, তা জানায়নি মস্কো।
বিদ্রোহীরা রোববার দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ঘোষণা করেছে, তারা ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এবং স্বৈরাচারী আসাদ সরকারের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে।
দেশটির দুই জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রোববার সকালে আসাদ দামেস্ক থেকে অজ্ঞাত গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তার বর্তমান অবস্থান জানা যায়নি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, 'সিরিয়ায় সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর আসাদ প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়ে দেশত্যাগ করেন।'
গত মাসের শেষের দিকে বিদ্রোহীরা যখন আলেপ্পো পৌঁছায়, আসাদ তখন মস্কোতে অবস্থান করছিলেন বলে অসমর্থিত কিছু সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। এরপর তিনি সিরিয়া ফিরে আসেন।
ক্রেমলিন সে সময় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল এবং এখন রাশিয়া তাকে আশ্রয় দিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
২০১৫ সালে আসাদকে সাহায্য করতে হস্তক্ষেপ করেছিল মস্কো এবং সোভিয়েত পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যে তার সবচেয়ে বড় অভিযান ছিল এটি। এখনও সিরিয়ায় তার দুটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
সামরিক ঘাঁটি
ইউক্রেন নিয়ে তাৎক্ষণিক আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানের প্রতিক্রিয়া জানাতে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে কনফারেন্স ডাকে ক্রেমলিন।
এসময় সিরিয়ার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়া।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সিরিয়ায় রাশিয়ার দুটি সামরিক স্থাপনায় উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে, তবে সেগুলোর জন্য কোনো তাৎক্ষণিক ঝুঁকি নেই।'
মন্ত্রণালয় বলেছে, 'বর্তমানে তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো গুরুতর হুমকি নেই।'
রাশিয়া সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশে হমেইমিম বিমান ঘাঁটি পরিচালনা করে, এই ঘাটিটি তারা পূর্বে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালানোর জন্য ব্যবহার করেছে।
এছাড়া, তূর্তুস উপকূলে দাদের একটি নৌঘাঁটি রয়েছে।
তূর্তুসের ঘাঁটিটি রাশিয়ার একমাত্র ভূমধ্যসাগরীয় মেরামত ও সরবরাহ কেন্দ্র এবং সিরিয়াকে আফ্রিকায় তার সামরিক চুক্তিকারীদের চলাচলের জন্য এক ধরনের স্টেজিং পোস্ট হিসেবে ব্যবহার করেছে মস্কো।
পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশেষ করে তূর্তুসকে হারালে তা হবে মধ্যপ্রাচ্য, ভূমধ্যসাগর ও আফ্রিকায় রাশিয়ার শক্তি প্রদর্শনের সক্ষমতার ওপর মারাত্মক আঘাত।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট রুশ যুদ্ধ বিষয়ক ব্লগাররা সতর্ক করে দিয়েছে, বর্তমানে এই ঘাঁটিগুলো বিপজ্জনকভাবে খোলামেলা অবস্থায় রয়েছে, তা সে মস্কো যাই বলুক না কেন।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'সিরিয়ার ঘটনায় মস্কো অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল এবং সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।'
বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার এবং শাসনসংক্রান্ত সকল বিষয় রাজনৈতিক উপায়ে সমাধান করতে আহ্বান জানাচ্ছি।'
এতে বলা হয়েছে, 'রাশিয়া সিরিয়ার বিরোধীপক্ষের সব দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।'
সিরিয়ায় অবস্থানরত রুশ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে দূতাবাস।
দামেস্কে রুশ দূতাবাস রোববার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা 'ভালো আছেন'।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি