পূর্ব ইউক্রেনে দুটি নতুন গ্রাম দখলের দাবি রাশিয়ার
রাশিয়া জানিয়েছে, তারা পূর্ব ইউক্রেনের দুটি গ্রাম দখল করেছে। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরেই রুশ বাহিনী এই অঞ্চলে অগ্রসর হচ্ছিল।
রোববার (১২ জানুয়ারি) রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৈন্যরা পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের ইয়ান্তারনে গ্রামের দখল নিয়েছে। গ্রামটি কুরাখোভের প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। গত সপ্তাহে কুরাখোভে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র দখলের কথা জানিয়েছিল মস্কো।
এর আগে, রুশ সেনারা কুরাখোভের উত্তর-পশ্চিমে নতুন এলাকা দখলের কথা জানিয়েছিল। এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মিত্র দেশগুলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিশ্রুত অস্ত্র পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, তারা খারকিভ অঞ্চলের উত্তর-পূর্বে ওস্কিল নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত কালিনোভে গ্রাম দখল করেছে।
ওস্কিল নদী দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলে দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে ফ্রন্টলাইন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপি বরাত দিয়ে একজন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, রুশ বাহিনী নদী পেরিয়ে পশ্চিম তীরে একটি অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।
রুশ সেনারা কয়েক মাস ধরে ওস্কিল নদী পার হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। এই নদী কুপিয়ানস্ক শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। ২০২২ সালের প্রতিআক্রমণে ইউক্রেন এই শহরটি পুনর্দখল করেছিল।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সামরিক বিমানঘাঁটি, সেনা ও যানবাহনের ওপর ১৩৯টি স্থানে আক্রমণ চালিয়েছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে বিমান, ড্রোন, মিসাইল ও কামান।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া রাতভর ৯৪টি ড্রোন ছুড়েছে এবং তাদের ৬০টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এছাড়া, ইউক্রেনের ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে ৩৪টি ড্রোন "নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে"।
ড্রোনের ভগ্নাংশ খারকিভ, সুমি ও পোলতাভা অঞ্চলের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
খেরসনের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার ড্রোন হামলায় তিনজন আহত হয়েছে। রুশ গোলাবর্ষণে বিদ্যুৎ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রায় ২৩ হাজার বাড়ি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে।
খেরসন শহরের দনিপ্রোভস্কি এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। দনিপ্রো নদীর বিপরীত তীরে থাকা রুশ বাহিনী এ অঞ্চলে নিয়মিত গোলাবর্ষণ করে আসছে।
খেরসনের গভর্নর ওলেক্সান্দ্র প্রোকুদিন জানিয়েছেন, "গত ২৪ ঘণ্টায় খেরসন শহর ও এর আশপাশের প্রায় ৫০টি এলাকায় রুশ বাহিনী গোলাবর্ষণ করেছে। এতে দুটি বহুতল ভবন ও আটটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।"
রুশ নিয়ন্ত্রিত খেরসন অঞ্চলে একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় ৭৬ বছর বয়সী এক নারী নিহত হয়েছেন বলে রাশিয়া নিযুক্ত গভর্নর ভ্লাদিমির সালদো টেলিগ্রামে জানিয়েছেন।
মিত্রদের প্রতিশ্রুত অস্ত্র পাঠানোর আহ্বান জেলেনস্কির
রোববার এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মিত্রদের কাছে প্রতিশ্রুত অস্ত্র পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানান, গত সপ্তাহে রুশ বাহিনী শত শত আক্রমণ চালিয়েছে। এতে ৭০০ এর বেশি বোমা এবং ৬০০ এর বেশি আক্রমণকারী ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
জেলেনস্কি টেলিগ্রামে বলেন, "রাশিয়ার বিমান হামলার সক্ষমতা ও আকাশে প্রাধান্যের কারণেই যুদ্ধ চলছে।" তিনি উল্লেখ করেন, "ওয়াশিংটনের ন্যাটো সম্মেলন এবং ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা নিয়ে রামস্টেইনের বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।"
তিনি আরও জানান, ইউক্রেনে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও মিসাইল উৎপাদনের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
ক্রাসনোদারে তেল ছড়িয়ে পড়ার বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্স
রাশিয়ার দক্ষিণ ক্রাসনোদার অঞ্চলে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় রোববার একটি জরুরি টাস্ক ফোর্স পৌঁছেছে। কের্চ প্রণালীতে দুই ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংকার থেকে ছড়িয়ে পড়া তেল এক মাস পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ঘটনাকে "সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে গুরুতর পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি শুক্রবার পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
ক্রাসনোদার অঞ্চলের তামান বন্দরের কাছে পরিস্থিতি সবচেয়ে জটিল। সেখানে ভলগোনেফ্ট-২৩৯ ট্যাংকার থেকে জ্বালানি তেল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ছে। রুশ জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক মন্ত্রী আলেকজান্ডার কুরেনকভ জানিয়েছেন, ট্যাংকারের পেছনের অংশ থেকে বাকি তেল সরিয়ে ফেলা হবে।
পুতিনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিওরহি তাইখি রাশিয়ার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, "বিপর্যয়ের ভয়াবহতা লুকানো সম্ভব না হওয়ায় রাশিয়া এখন মিথ্যা 'উদ্বেগ' দেখানোর চেষ্টা করছে।"
তাইখি আরও বলেন, "রাশিয়া প্রথমে সমস্যাকে উপেক্ষা করেছে, পরে এটি সমাধানে অক্ষমতা স্বীকার করেছে এবং শেষ পর্যন্ত পুরো কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে এর পরিণতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি রাশিয়ার আন্তর্জাতিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতার আরেকটি উদাহরণ।"
কের্চ প্রণালি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট। এটি আজভ সাগরকে কৃষ্ণসাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। এটি ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি বিরোধপূর্ণ এলাকা।