আসাদের পতনের পর সিরীয় শরণার্থীদের আর রাজনৈতিক আশ্রয় মিলবে না ইউরোপীয় দেশগুলোয়
সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর যুক্তরাজ্যসহ একাধিক ইউরোপীয় দেশ সিরীয় নাগরিকদের আশ্রয়ের আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। খবর বিবিসির।
অস্ট্রিয়ার তত্ত্বাবধায়ক সরকার সব সিরীয় নাগরিকের আশ্রয়প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। তাদের দাবি, সিরিয়ার পরিস্থিতি যথেষ্ট বদলেছে।
অস্ট্রিয়ার মতো জার্মানি (যেখানে প্রায় ১০ লাখ সিরীয় নাগরিক বসবাস করেন), যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং গ্রিসও জানিয়েছে যে তারা আপাতত সকল সিরিয়ানদের আশ্রয়প্রক্রিয়া বন্ধ রাখবে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি সিরীয় নাগরিক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দেশত্যাগ করেছে।
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার, যিনি অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, 'অস্ট্রিয়ায় যারা আশ্রয় নিয়েছেন এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চান, তাদের আমরা সহায়তা করব'। তিনি আরও উল্লেখ করেন, 'সিরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে তাদের নির্বাসন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা সম্ভব হয়'।
বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় প্রায় ৯৫ হাজার সিরীয় নাগরিক বসবাস করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের শরণার্থী সংকটের সময় দেশটিতে এসেছেন। এই শরণার্থীদের প্রতি জনসাধারণের বিরূপ মনোভাব অস্ট্রিয়ার ডানপন্থী এবং রক্ষণশীল দলগুলোর প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে।
জার্মানির অভিবাসন এবং শরণার্থী বিষয়ক ফেডারেল অফিস সিরীয়দের সব মুলতুবি আবেদন স্থগিত রেখেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই অনিশ্চিত যে দেশটি নিরাপদ কি না, তা এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
বর্তমানে জার্মানিতে ৪৭,২৭০ সিরীয় নাগরিক তাদের আশ্রয়ের আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে যাদের ইতোমধ্যে আশ্রয় মঞ্জুর হয়েছে, তারা এই প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছেন।
জার্মানি মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে সবচেয়ে বড় সিরীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ের আবাসস্থল। দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ সিরীয় নাগরিক বাস করছেন, যার মধ্যে প্রায় ৭ লাখ শরণার্থী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার নিশ্চিত করেছেন যে যুক্তরাজ্য সিরিয়া থেকে আসা আশ্রয়ের আবেদনগুলোর সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে, কারণ হোম অফিস দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা করছে।
কুপার বলেন, আসাদ শাসনের পতনের পর দেশটির পরিস্থিতি 'অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে' এবং কিছু মানুষ ইতোমধ্যে সিরিয়ায় ফিরে যাচ্ছেন।
২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি সিরীয় নাগরিককে আশ্রয় প্রদান করা হয়।
এদের বেশিরভাগকেই মানবিক প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন করা হয়, যারা তুরস্ক ও লেবাননের মতো দেশ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।
২০১৯ সালে হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪৭ হাজার সিরীয় নাগরিক বসবাস করতেন। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা কমে প্রায় ৩০ হাজার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জার্মানির মতোই ফ্রান্সও অনুরূপ একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে এবং দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এদিকে, লেবানন ও জর্ডানে আশ্রয় নেওয়া হাজারো সিরীয় নাগরিক নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। তবে লেবাননের সীমান্তে যাতায়াত উভয় দিকেই চলছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদক জানান, লেবাননে প্রবেশ করতে চাওয়া সিরীয়দের সংখ্যা বাড়ছে, যা সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণ হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকে দেশে অস্থিতিশীলতা বা অপরাধ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন, তবে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে এমন কিছু হবে না।
লেবাননে ১০ লাখেরও বেশি সিরীয় শরণার্থী রয়েছে। তবে দেশটি তাদের প্রবেশে নিয়ম কঠোর করছে।