ভাড়া করা গাইড নিয়ে চীনে পর্বতারোহণ এখন জনপ্রিয়
ওয়েন্ডি চেন একবার পূর্ব চীনের বিখ্যাত পর্বত মাউন্ট তাইয়ে আরোহণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার ট্রেকিং করে এই স্বপ্ন পূরণের পথে তার সহযাত্রী হিসেবে কোনো বন্ধুকে পাচ্ছিলেন না। সেক্ষেত্রে পাঁচ হাজার ফিট উঁচু পর্বতটি আরোহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এসে তিনি বরং পর্বতারোহণে পারদর্শী এক তরুণকে অর্থের বিনিময়ে গাইড হিসেবে নেন।
চীনে অপরিচিত মানুষের গাইড হয়ে পর্বতের চূড়ায় উঠতে সাহায্য করার পেশা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। দেশটির সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে নিজেদের উচ্চতা, ফিটনেস ও পর্বতারোহণের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রচারণাও করেন অনেক গাইড। এই তালিকায় রয়েছেন তরুণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ইত্যাদি লোকজন। এক্ষেত্রে তারা প্রতি ট্রিপে ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ থেকে ৮৫ মার্কিন ডলার চার্জ নিয়ে থাকেন।
পর্বতারোহণে ট্রেক করার সময় ক্লায়েন্টরা যাতে ভীত না হয় সেটির সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন গাইডরা। একইসাথে উপরে উঠতে তারা ক্লায়েন্টকে গান, কৌতুকসহ নানা নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ, ক্লায়েন্টকে উঁচুতে উঠতে সহায়তা করা কিংবা ব্যাগ বহন করার মতো কাজে তারা সহযোগী হিসেবে থাকেন।
ওয়েন্ডিকে নিয়ে গাইড রাত আটটার দিকে পর্বতারোহণ শুরু করেন। যাতে করে তারা ভোরে সূর্যোদয়ের সময় চূড়ায় পৌঁছাতে পারেন। সেক্ষেত্রে ওয়েন্ডির ফিটনেস লেভেল পরীক্ষার পর গাইড সেই অনুযায়ী একটি রুট নির্ধারণ করেন এবং তার ব্যাকপ্যাকটি যাত্রাপথে বহন করেন।
চূড়ায় হিমশীতল বাতাস বয়ে যাওয়ার সময় ওয়েন্ডিকে একটি মোটা কোট দিয়েছিলেন গাইড এবং বাতাস থেকে আড়ালে রেখেছিলেন। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে আরোহণকারী যাতে নিজ দেশের জাতীয় পতাকাসহ একটি স্মরণীয় ছবি তুলতে পারেন তারও সকল প্রস্তুতি তিনি সম্পন্ন করে রেখেছিলেন। যদিও ঐ গাইড যে খুব ভালো ছবি তোলেন এমন না। তবে ৪৯ ডলারের বিনিময়ে সহযাত্রী করা এ গাইডের সেবায় ওয়েন্ডি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ওয়েন্ডি জানান, তিনি সচারাচর খরচে গাইড ভাড়া করেছিলেন। কিন্তু আরও বেশি খরচ করলে তিনি আরও সুদর্শন গাইড সঙ্গে নিতে পারতেন।
২০ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ক্রিস জ্যাং চলতি বছরের গ্রীষ্মে পর্বত আরোহণে গাইডের পেশায় যুক্ত হন। এক্ষেত্রে শেষ তিন মাসে এই কাজ থেকে তিনি প্রায় ২৮০০ ডলার আয় করেছেন। অন্যদিকে তার বন্ধুরা কাস্টমার সার্ভিসের মতো ইন্টার্নশিপ করে ২৮০ ডলারের মতো মাসিক বেতন পাচ্ছেন।
ক্রিস জানান, পর্বত আরোহণে গাইড হিসেবে কাজ করার ফলে তার বেশ ভালো আয় হয়। একইসাথে সারাদিন ডেস্কে বসে থাকার চেয়ে তুলনামূলক স্বাধীনভাবে বাইরে তিনি এই কাজটি করে থাকেন।
চেন উডি নামের আরেক শিক্ষার্থী এপ্রিল মাসেও সেলসপার্সন হিসেবে চাকরি করতেন। তবে সম্প্রতি ২৭ বছর বয়সি এই তরুণ পর্বত আরোহণের গাইডের পেশাকেই বেছে নিয়েছেন।
বর্তমানে চেনের প্রায় ৪০টি বুকিং রয়েছে এবং মাসে প্রায় ২৮০০ ডলারের মতো আয় করছেন। যা কি-না সরকারি তথ্যমতে চীনে গড় বেতনের দিগুণেরও বেশি।
চেন বলেন, "মূলত আমি প্রতিদিন পাহাড়ে উঠছি। কখনো কখনো দিনে দুই-তিনবার উঠে থাকি।"
পেশাটিতে চেনের মতো জনপ্রিয়রা সারাদেশ থেকে ক্লায়েন্ট পেয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে পরিবহণ ফি এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ক্লায়েন্টের সাথে টাকায় মিললে তারা যেকোনো পর্বত চড়তে গাইড হয়ে থাকেন।
ভালো অঙ্কের অর্থ আয় করা গেলেও কাজটি শারীরিকভাবে যে বেশ কষ্টকর সেটি অবশ্য চেন স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, "এর ফলে আমার হাঁটুতে খুব ব্যথা করে। তাই আমি হয়তো কেবল কয়েক মাস এটি করতে পারবো।"
পর্বত আরোহণে গাইড হওয়ার বিষয়টি জনপ্রিয় হলেও পেশাটিকে ঘিরে কিছু শঙ্কা রয়েছে। কেননা এই মার্কেটটি ঘিরে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বিশেষ করে অনভিজ্ঞ গাইড পর্বতারোহীদের নিয়ে পর্বত আরোহণের সময় বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এছাড়াও ক্লায়েন্টের অর্থ নিয়ে সেবা না দিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে চীনে তরুণদের মাঝে তীব্র বেকারত্ব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকেই একটা স্থায়ী চাকরি খুঁজছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে দ্রুত আয়ের জন্য তারা পর্বতারোহণে গাইড হিসেবে কাজ করছেন।
চেন উডি জানেন যে, সবসময় তিনি কাজটি করতে পারবেন না। তবে বর্তমানে তার এই কাজটি করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
চেন বলেন, "আমি পাহাড়ে চড়তে ও বিভিন্ন স্থানে যেতে ভালোবাসি। এটি থেকে আবার জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও পাচ্ছি।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান