‘বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পর্বতারোহণ’: সবচেয়ে কমবয়সি নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ ১৪ পর্বতশৃঙ্গ জয়
পৃথিবীতে আট হাজার মিটারের চেয়ে উঁচু আবিষ্কৃত পাহাড় রয়েছে মোট ১৪টি। সম্প্রতি এগুলোর সবকয়টির চূড়ায় ওঠার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন আদ্রিয়ানা ব্রাউনলি। এটিকে তিনি 'জীবনের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য মুহূর্ত' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিশ্বের ৬৪তম ব্যক্তি হিসেবে আদ্রিয়ানা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ১৪ পাহাড়ে উঠেছেন। একইসাথে এই গৌরব অর্জনে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ নারী।
২৩ বছর বয়সি লন্ডনের এই বাসিন্দা বলেন, "আমি পর্বতারোহণে ক্যারিয়ার গড়তে বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিগ্রি ত্যাগ করেছি। বন্ধুত্ব, স্বাভাবিক কিশোর জীবন ও আরও অনেক কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। সেক্ষেত্রে আমি আমার প্রাপ্য পেয়েছি। আশা করি আমি সারা বিশ্বের তরুণদের এই বলে অনুপ্রাণিত করতে পারবো যে, জীবনের সুনির্দিষ্ট কোনো পথ নেই।"
আদ্রিয়ানার সর্বশেষ পর্বতারোহণও খুব একটা সহজ ছিল না। এক্ষেত্রে তিনি ও তার দল গাইডের দড়ি সাময়িকভাবে হারিয়ে ফেলেছিলেন। এমনকি চূড়ান্ত শীর্ষে ওঠার সময় তিনি শারিরিকভাবে অসুস্থ বোধ করছিলেন।
তবে সকল বাধা পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় আহরণের সময় আদ্রিয়ানা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। ঐ মুহূর্তের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, "আমি তখনও চূড়ায় পৌঁছাইনি। আমি সেটি দেখতেও পাচ্ছিলাম না। তবে আমি জানতাম, আমি সেটি করতে পারবো।"
আদ্রিয়ানা ও তার দল ৯ অক্টোবর তিব্বতের শিশাপাংমার ৮,০২৭ মিটার চূড়ায় পৌঁছেছিলেন। সেদিন সম্পর্কে তিনি বলেন, "তখন ছিল সূর্যোদয় এবং আমরা একটি পরিষ্কার সুন্দর আকাশ দেখতে পাচ্ছিলাম।"
"এই ভেবে ফের কেঁদেছিলাম যে, আমি মাত্রই ৮ হাজার মিটার উঁচুর সব পাহাড়গুলোতে উঠেছি এবং ইতিহাস সৃষ্টি করেছি।"
আদ্রিয়ানা দ্বিতীয় ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। এক্ষেত্রে তার দেশের ভ্রমণপিপাসুরা সবসময়ই অসাধ্যকে সাধন করেছে বলে অভিহিত করেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই আদ্রিয়ানার পাহাড়ের প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি পর্বতারোহণে অংশ নেন।
ছোটবেলায় স্কুলের হোমওয়ার্কে আদ্রিয়ানা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে চড়ে বিখ্যাত হওয়ার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। কেননা পাহাড়; বিশেষ করে যেগুলো বেশ উঁচু, সবসময় তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
আদ্রিয়ানা মাত্র ২০ বছর বয়সে ২০২১ সালে তার শৈশবের স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। এরপর থেকে তিনি একের পর এক উঁচু পাহাড় খুব অল্প বয়সে জয় করতে থাকেন।
আদ্রিয়ানা বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী যিনি কে২ সামিট জয় করেছেন। একইসাথে তিনি আরও বৃহৎ চ্যালেঞ্জ নিতে অক্সিজেন ছাড়াই গাশারব্রুম-১ এর চূড়ার সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে আরোহণ করেছেন।
আদ্রিয়ানা বলেন, "নিজের জীবন থেকে কিছুটা দূরে যাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে এই পর্বতারোহণ। এটি আমাকে স্বাধীন অনুভূতি দেয় এবং সত্যিকার অর্থে নিজের সাথে সংযুক্ত বোধ করায়। তাই বারবার (পাহাড়ে) ফিরে যাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়।"
আদ্রিয়ানা ও তার দল বর্তমানে তিব্বত ভ্রমণ করছেন। যদিও তিনি ইতোমধ্যেই বহু পর্বতারোহীর চেয়ে অনেক বেশি অর্জন করেছেন। তবে তিনি এখানেই থামতে চান না।
আদ্রিয়ানা বলেন, "আমি পাহাড়েই থাকবো। সেক্ষেত্রে আমি উঁচু পর্বতারোহণ, ট্রেকিং অভিজ্ঞতার একটি নতুন প্রজন্ম তৈরিতে ও অন্যদের স্বপ্ন অর্জনে সহায়তা করতে চাই। সেক্ষেত্রে আরোহণকারীদের নিরাপত্তা ও অতীত অভিজ্ঞতার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হবে।"
"আপনি নিজের ভবিষ্যৎ নিজে গড়তে পারেন। হয়তো সেটি অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম হবে। তবে সেটি আপনাকে আনন্দ দিলেই হবে", যোগ করেন তিনি।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান