মস্কোতে রাশিয়ার মুখপাত্র ও রাসায়নিক অস্ত্র প্রধান ইগর কিরিলভকে হত্যা করেছে ইউক্রেন
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন দেশটির রাসায়নিক অস্ত্র-বিষয়ক প্রধান ও সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইগর কিরিলভ। বিস্ফোরক পেতে কিরিলভ ও তাঁর সঙ্গে থাকা আরও কয়েক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। ইউক্রেনের গোয়েন্দা বাহিনী– এসবিইউ এর ভেতরের কিছু সূত্র এই ঘটনার পেছনে সংস্থাটির দায় স্বীকার-ও করেছে। খবর বিবিসির
মস্কোর দক্ষিণপূর্বের রিয়াজনস্কি প্রসপেক্ট এলাকার একটি ভবনের বাইরে একটি ই-স্কুটারে বিস্ফোরক পেতে রাখা হয়েছিল; ভবন থেকে কিরিলভ বাইরে আসতেই সেটি বিস্ফোরিত হলে– তিনিসহ তাঁর কয়েকজন সহকারীও নিহত হন।
রাশিয়ার তিমোশেঙ্কো রেডিয়েশন, কেমিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল প্রোটেকশন একাডেমির প্রধান ছিলেন ইগর কিরিলভ। পরে ২০১৭ সাল থেকে তিনি রাশিয়ার রাসায়নিক, জৈবিক ও রেডিয়েশন সুরক্ষা বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। তাঁর বাহিনীর কাজ হচ্ছে - শত্রুপক্ষ এধরনের অস্ত্র ব্যবহার করলে আক্রান্ত অঞ্চলকে তাঁর প্রভাবমুক্ত করা। তবে অগ্নিসংযোগকারী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের ক্ষতি করার দায়িত্বও তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল বলে জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা দপ্তর।
কিরিলভ ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরও মুখপাত্র। ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং-ও করতেন। রাশিয়ায় তাঁকে একজন নিরলস দেশপ্রেমিক বলে মনে করা হতো, যিনি পশ্চিমা বিশ্বের যুদ্ধাপরাধকে তুলে ধরতেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি 'আজগুবি তথ্য' প্রদান করতেন বলে অভিযোগ পশ্চিমাদের। তাঁকে 'রুশ প্রোপাগান্ডার একজন গুরুত্বপূর্ণ মুখপাত্র' হিসেবে এর আগে অভিহিত করেছিল যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর।
কিরিলভের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ করেছিল ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী সরঞ্জামের ব্যাপক ব্যবহার ও এই ধরনের গ্যাস প্রয়োগের ক্ষেত্রে ক্লোরোপিকরিন নামক রাসায়নিক এজেন্ট ব্যবহার করার 'একাধিক ঘটনার কথা জানা গেছে' বলে তারা উল্লেখ করে।
হত্যার কিছুক্ষণ আগেই তাঁকে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের রণাঙ্গনে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্রের 'ব্যাপক প্রয়োগের' দায়ে অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা– এসবিইউ।
সংস্থাটি জানায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের মাটিতে শত্রুপক্ষ ৪,৮০০ বারের বেশি কেমিক্যাল মিউনিশন (রাসায়নিক গোলা) ব্যবহার করেছে। এমনকী গ্রেনেড থেকে শুরু করে ড্রোন থেকেও ছোড়া হয় এ ধরনের উপাদান।
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই বিভিন্ন দাবি করে পশ্চিমা বিশ্বের চোখে 'কুখ্যাত' হয়ে ওঠেন ইগর কিরিলভ। এরমধ্যে একটি দাবি ছিল যে, ইউক্রেনে জৈবিক অস্ত্র গবেষণাগার তৈরি করছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর সেটা ঠেকাতেই রাশিয়াকে যুদ্ধ শুরু করতে হয়েছিল– এমন সাফাইও পরে দেয় মস্কো।
২০২২ সালের মার্চে তিনি কিছু নথি হাজির করে দাবি করেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি আগ্রাসন শুরুর দিন ইউক্রেন থেকে সেগুলো জব্দ করা হয়েছে, যেখানে ওই গবেষণাগার নির্মাণের তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এই ঘটনাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করে রুশ গণমাধ্যমগুলো, তবে এই দাবিকে অসার বলে পাল্টা দাবি করেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এমন আরও অভিযোগ এনেছিলেন শীর্ষ এই কর্মকর্তা।
সর্বশেষ গেল মাসে তিনি দাবি করেন, কুর্স্ক অঞ্চলে অবস্থিত রাশিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করতেই সেখানে আক্রমণ অভিযান চালিয়ে প্রবেশ করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।