বিশ্বের প্রথম হীরার ব্যাটারি, হাজার বছর চার্জ থাকার দাবি!
বিশ্বে প্রথম হীরা (ডায়মন্ড) দিয়ে ব্যাটারি তৈরি করেছেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত নতুন এই প্রযুক্তির ব্যাটারি হাজার হাজার বছর ধরে ডিভাইসকে শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম বলে দাবি তাদের।
গত ৪ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য সরকার তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটা জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের অ্যাটমিক এনার্জি অথরিটি (ইউকেএইএ) এবং ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা মিলে বিশ্বের প্রথম এই কার্বন-১৪ ডায়মন্ড ব্যাটারি উদ্ভাবন করেছেন।
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ কার্বন-১৪ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এই ব্যাটারি। সৌর বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যেভাবে সুর্যের আলোকে বিদ্যুতে রূপান্তর করা হয়, ঠিক একইভাবে কার্বন-১৪ আইসোটোপ ক্ষয় থেকে পাওয়া ইলেকট্রন এখানে বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়।
চিকিৎসা সরঞ্জাম যেমন- পেসমেকার, হিয়ারিং এইড (শ্রবণ সহায়ক), ও চোখের ইমপ্ল্যান্টে এই ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে। দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহের কারণে এটি রোগীদের জন্য বেশ সুবিধাজনক হবে।
হীরের এ ব্যাটারি চরম পরিবেশেও ব্যবহার করা সম্ভব, যেমন মহাকাশ বা পৃথিবীর চরম অঞ্চলগুলো, যেখানে সাধারণ ব্যাটারি বদলানো বাস্তবসম্মত নয়। এই ব্যাটারি সক্রিয় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) ট্যাগ চালাতে সক্ষম, যা পৃথিবী বা মহাকাশে যন্ত্রাংশ শনাক্ত ও পর্যবেক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
মহাকাশযান বা পেলোডের মতো ডিভাইসগুলোতে এটি কয়েক দশক ধরে শক্তি সরবরাহ করতে পারবে, যা খরচ কমানোর পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনার সময়সীমা দীর্ঘায়িত করবে।
ইউকেএইএ-এর ট্রাইটিয়াম ফুয়েল সাইকেলের পরিচালক সারা ক্লার্ক বলেন, 'ডায়মন্ড ব্যাটারি নিরাপদ এবং টেকসই উপায়ে ক্রমাগত মাইক্রোওয়াট শক্তি সরবরাহের সুযোগ দেয়। এটি একটি উদীয়মান প্রযুক্তি, যেখানে কার্বন-১৪ এর ক্ষুদ্র পরিমাণ একটি কৃত্রিম ডায়মন্ডে সুরক্ষিতভাবে সংযুক্ত করা হয়'।
কার্বন-১৪ ডায়মন্ড ব্যাটারি কার্বন-১৪ এর তেজস্ক্রিয় শক্তি ক্ষয়ের মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করে। এই আইসোটোপের অর্ধায়ু ৫ হাজার ৭০০ বছর, যা এর দীর্ঘস্থায়িত্বের মূল কারণ। এটি কার্যকরভাবে সৌর প্যানেলের মতো কাজ করে, তবে আলোর কণা (ফোটন) ব্যবহার না করে ডায়মন্ড কাঠামোর ভেতরে থাকা দ্রুতগতির ইলেকট্রন সংগ্রহ করে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে।
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের ম্যাটেরিয়ালস বিভাগের অধ্যাপক টম স্কট বলেন, 'আমাদের মাইক্রোপাওয়ার প্রযুক্তি মহাকাশ প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ডিভাইস থেকে শুরু করে মেডিক্যাল ইমপ্ল্যান্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা যাবে। শিল্প ও গবেষণা খাতের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে আমরা এই সম্ভাবনাগুলো আগামী কয়েক বছরে অন্বেষণ করতে উদগ্রীব।'
এই উদ্ভাবন আংশিকভাবে ইউকেএইএ'র ফিউশন এনার্জি নিয়ে গবেষণার ফল। গবেষকেরা আশা করছেন, এই ডায়মন্ড ব্যাটারি শক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে এবং ভবিষ্যতে অনেক নতুন প্রযুক্তির জন্য পথপ্রদর্শক হবে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন