চাকরির ইন্টারভিউয়াররা যদি পক্ষপাতদুষ্ট হন, করণীয় কী
চাকরির ইন্টারভিউতে মূলত প্রার্থীদের সম্পর্কে ইন্টারভিউয়াররা জানার চেষ্টা করা হয়। একইসাথে তারা কীভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে স্বকীয়ভাবে অবদান রাখতে পারবেন সেটিও বোঝার চেষ্টা করা হয়। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এতটা সাবলীলভাবে প্রক্রিয়াটি সবসময় হয় না। বরং প্রার্থীদের অনেক সময় ইন্টারভিউয়াররা অপ্রাসঙ্গিক ও বিব্রতকর প্রশ্ন করেন। এক্ষেত্রে একজন চাকরি প্রত্যাশীকে বেশ বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
নিজেকে সংযত রাখুন
সাক্ষাৎকারের সময় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অনেক সময় ইন্টারভিউয়াররা আপনার বিচক্ষণতা ও ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে নানা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন। তখন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে খানিকটা সময় নিন। উত্তর দেওয়ার আগে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করুন। সোজা হয়ে বসে নিজের দৈহিক ভঙ্গিকে আরও শক্তিশালী করুন। কথা বলার সময় চোখে চোখ রাখুন। পা শক্তভাবে মেঝেতে রাখুন যাতে আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করুন যেন মনে হয়, আপনিই ঐ পদের জন্য যোগ্য দাবিদার।
নিজ অধিকার সম্পর্কে জানুন
সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রদানের মাধ্যমে নিজের যোগ্যাতাকে তুলে ধরা যায়। তবে সেই প্রশ্ন যদি অপ্রাসঙ্গিক হয় তবে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বিনয়ের সাথে সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সেটি বরং এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে আলোচনার বিষয় পরিবর্তন করে নিজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার বিষয় আলাপে আনার চেষ্টা করা যেতে পারে।
যেমন, অনেক সময় জিজ্ঞাসা করা হয়, "আপনি বৈবাহিক জীবন কেমন? কিংবা আপনার বর্ণ কী ইত্যাদি"। এক্ষেত্রে উত্তর না দিয়ে বরং চাকরির বিস্তারিত সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করা যেতে পারে।
একইসাথে অযৌক্তিক প্রশ্নের জবাবে বলা যেতে পারে, "আমি উত্তরটা অবশ্যই দিতে পারবো। তবে আমি বুঝতে পারছি না এই প্রশ্নটি আমার চাকরির ক্ষেত্রে কীভাবে প্রাসঙ্গিক?"
ভিন্ন প্রশ্ন করতে জানতে চাওয়া
অনুপযুক্ত প্রশ্ন বা এমন কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার মাঝে মনঃক্ষুণ্ণতা কিংবা অস্বস্তিবোধ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সংকোচ বোধ না করে বরং তা সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহীতার নিকট প্রকাশ করা যেতে পারে। একইসাথে বিকল্প হিসেবে সেটি এড়িয়ে গিয়ে বরং সাক্ষাৎকার গ্রহীতাকে তার সম্পর্কে জানতে চাওয়া যেতে পারে।
ধরা যাক, সাক্ষাৎকারে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, "আপনি বিদেশ থেকে চলে এসে দেশে চাকরি করতে চাইছেন কেন?" আপনি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বরং ঘুরিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন, "আপনার এই সেক্টরের এত বছর ধরে কাজ করার পেছনে অনুপ্রেরণা কী? সেটা কী জানতে পারি?"
গবেষণায় দেখা যায়, মানুষ নিজের সম্পর্কে কথা বলতে ভালোবাসে। ফলে সাক্ষাৎকার গ্রহীতাকে এই কৌশল প্রয়োগ করে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে।
চাকরি সম্পর্কে পুনর্বিবেচনা
নির্দিষ্ট চাকরির ক্ষেত্রে অনেকেরই ঝোঁক থাকে। তবে যেকোনো মূল্যেই সেই চাকরি করতে হবে এমনটা ভাবা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং সাক্ষাৎকারে যদি অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা হয় তবে ঐ চাকরি নিয়ে আপনার পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
কেননা এমন পরিস্থিতিতে চাকরি যদি হয়েও যায় তবে পরবর্তী কর্মপরিবেশ কেমন হবে সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে যায়। আপনি নিশ্চয়ই বিরক্তিকর বস কিংবা সহকর্মীর সাথে চাকরি করতে চাইবেন না। এতে করে মানসিকভাবে আপনি বেশ অস্বস্তিতে ভুগতে পারেন। তাই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয়ে বরং ঐ চাকরি থেকে আগেই সরে যাওয়া বরং ভালো সিদ্ধান্ত।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান