মার্কিন সরকার ব্যবস্থা না নিলে রোববার থেকেই 'অন্ধকারে' যাবে টিকটক
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে সরকার হস্তক্ষেপ না করলে, রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হবে। খবর বিবিসির।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে টিকটক জানায়, হোয়াইট হাউস এবং বিচার বিভাগ অ্যাপটি কার্যকর রাখতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। যদি সরকার অবিলম্বে ভিডিও অ্যাপটিকে আসন্ন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি না দেওয়ার আশ্বাস না দেয়, তবে এটি ১৯ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট টিকটক নিষিদ্ধ করার আইন বহাল রাখে। ওই আইনে চীনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাইটডান্সকে রোববারের মধ্যে অ্যাপটির মার্কিন মালিকানা বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে পাস হওয়া এই আইনের লক্ষ্য ছিল বাইটডান্সের মালিকানা একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা।
টিকটক যুক্তি দিয়েছিল, এই আইন দেশটির ১৭ কোটি ব্যবহারকারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের লঙ্ঘন। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, রোববারের পর অ্যাপটি মার্কিন অ্যাপ স্টোর এবং ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস থেকে সরিয়ে ফেলা হবে।
এদিকে, অ্যাপটি ডাউনলোড না করতে না পারলে ব্যবহারকারীদের জন্য কোনো প্রভাব পড়বে না বলে ধারণা করা হলেও, আপডেট বন্ধ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে এটি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়বে।
ইতোমধ্যে টিকটক নির্মাতারা তাদের অনুসারীদের বিদায় জানিয়ে ভিডিও পোস্ট করছেন। এক নির্মাতা নিকোল ব্লুমগার্ডেন জানিয়েছেন, টিকটক বন্ধ হলে তার আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। আরেকজন নির্মাতা এরিকা থম্পসন বলেছেন, শিক্ষামূলক কনটেন্টের অভাব হবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি।
কিছু নির্মাতা তাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করছেন, যার মধ্যে রয়েছে চীনা অ্যাপ রেড নোট, যা মার্কিন ব্যবহারকারীদের মধ্যে এখনও কম জনপ্রিয়।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদ সোমবার শেষ হবে এবং নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেবেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের বিষয়টি নতুন প্রেসিডেন্টের ওপর নির্ভর করছে।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে টিকটক নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করলেও সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। শুক্রবার তিনি বলেন, টিকটক নিয়ে খুব শিগগিরই আমি সিদ্ধান্ত নেব, তবে আমাকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে হবে।
তিনি আরও জানান, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে টিকটকসহ অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন।
নির্বাচনে জেতার পর গত ডিসেম্বরে ট্রাম্প বলেন, 'টিকটক নিয়ে আমার একটি বিশেষ ভালোবাসা রয়েছে, কারণ এটি ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমাকে তরুণ ভোটারদের ভোট টানতে সহায়তা করেছে।'
যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা অ্যাপটি চীনা সরকারের সাথে সংযোগের শঙ্কায় নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাপটি ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা রাখে।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলেছেন, স্বৈরাচারী শাসকদের উচিত নয় মার্কিন নাগরিকদের ডেটা অবাধে অ্যাক্সেস করা। তবে বেইজিং এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
টিকটক জানিয়েছে, আইনটি তাদের ৭ হাজার মার্কিন কর্মচারীসহ ব্যবহারকারী, বিজ্ঞাপনদাতা এবং নির্মাতাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।