স্যাটেলাইট চিত্রে চীনের বিশাল লেজার গবেষণাগার, ফিউশন শক্তির যুগ আসছে?
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/08/ezgif.com-webp-to-jpg-converter.jpg)
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাথুরে এলাকায় এক্স-আকৃতির বিশাল একটি ভবন স্যাটেলাইট ছবিতে ধরা পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি আধুনিক নিউক্লিয়ার ফিউশন গবেষণা কেন্দ্র, যা চীনকে শক্তির ভবিষ্যৎ গবেষণায় এগিয়ে নিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, এটি শুধু গবেষণার জন্য নয়, পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নেরও অংশ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএনএ কর্পোরেশনের বিশ্লেষক ডেকার ইভেলেথ জানিয়েছেন, ২০২০ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই এলাকাকে পারমাণবিক গবেষণার সম্ভাব্য কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তখন সেখানে কিছুই ছিল না। কিন্তু কোভিড-১৯ লকডাউনের পর নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়।
প্রাপ্ত নথি অনুসারে, এটি একটি 'লেজার ফিউশন' গবেষণা কেন্দ্র। লেজার ফিউশন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা চরম তাপমাত্রা ও চাপে পদার্থের আচরণ পরীক্ষা করতে পারেন, যা তারকা বা পারমাণবিক বিস্ফোরণের সময় ঘটে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় টাওয়ারের চেম্বারে থাকা হাইড্রোজেন আইসোটোপের ওপর তাক করে চারটি বিশাল বাহু থেকে শক্তিশালী লেজার রশ্মি ছোঁড়া হবে। এর ফলে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে, যা বিশাল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।
বিশ্বজুড়ে নিউক্লিয়ার ফিউশন শক্তিকে ভবিষ্যতের টেকসই ও অফুরন্ত জ্বালানির উৎস হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি পরিবেশবান্ধব ও কার্যকর, কারণ এতে প্রচলিত নিউক্লিয়ার ফিশনের মতো দীর্ঘমেয়াদি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি হয় না।
এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। ২০২২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল ইগনিশন ফ্যাসিলিটি (এনআইএফ) সফলভাবে প্রথম নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রতিক্রিয়া ঘটায়, যা বিজ্ঞানীদের জন্য বড় সাফল্য।
তবে চীনের মিয়ানইয়াং গবেষণা কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের এনআইএফের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বড় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় আকারের লেজার আরও বেশি শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে।
ফিউশন এনার্জি ইনসাইটসের প্রধান নির্বাহী মেলানি উইন্ডরিজ বলেন, 'চীন খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং কাজ এগিয়ে নিচ্ছে, যা তাদের অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়।'
সামরিক গবেষণার শঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কেন্দ্র শুধু শক্তি গবেষণার জন্যই নয়, পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের জন্যও ব্যবহার হতে পারে।
বিশ্লেষক উইলিয়াম আলবারকে বলেন, যে কোনো দেশ এই ধরনের গবেষণা কেন্দ্র ব্যবহার করে নিজের পারমাণবিক অস্ত্র আরও উন্নত করতে পারে।'
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি (সিটিবিটি)-তে স্বাক্ষর করলেও, লেজার-ভিত্তিক পরীক্ষা চালিয়ে অস্ত্র উন্নয়ন সম্ভব।
কিছু বিশ্লেষকের মতে, এই গবেষণাগার হাইব্রিড ফিউশন-ফিশন প্রযুক্তির হতে পারে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে আরও উন্নত হতে পারে।
বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু হল্যান্ড বলেন, চীন যে গতিতে কাজ করছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যদি বিনিয়োগ না বাড়ায়, তবে ফিউশন গবেষণায় চীনই এগিয়ে যাবে।
বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য বদলে দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এই প্রযুক্তির। ফলে, গবেষণা কেন্দ্রটি শুধু শক্তি উৎপাদনের ভবিষ্যৎই নয়, ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতারও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন