ভ্যান্স-জেলেনস্কি বৈঠকের আগে ট্রাম্প: ইউক্রেন 'কোনো দিন হয়ত রাশিয়ান হতে পারে'
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/12/2024-09-27t153325z-178654947-rc229aa8h2m2-rtrmadp-3-ukraine-crisis-zelenskiy-usa-copy.jpg)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন "ইউক্রেন একদিন রাশিয়ার অংশ হতে পারে"। ট্রাম্পের এ ইঙ্গিত প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেনে চলা মস্কোর আগ্রাসনে একটি সার্বভৌম দেশের ভবিষ্যৎ স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
সোমবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প তার প্রশাসনের যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টা নিয়ে কথা বলেন। এ সাক্ষাৎকারটি এমন এক সময়ে সম্প্রচারিত হলো, যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে এই সপ্তাহে বৈঠকের কথা রয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, "ইউক্রেন হয়ত একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে, হয়ত পৌঁছাতে পারবে না। একদিন তারা রাশিয়ার হতে পারে, বা নাও হতে পারে।"
তিনি আবারও ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রতিদান দেখতে চান বলে উল্লেখ করেন এবং কিয়েভের দুর্লভ খনিজ সম্পদের বিনিময়ে একটি চুক্তির প্রস্তাব তোলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্য ক্রেমলিনকে খুশি করতে পারে। ক্রেমলিন ইতোমধ্যে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল দখল করেছে এবং তারা ইউক্রেনের সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ চাচ্ছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, "ইউক্রেনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রাশিয়ার হতে চায় এবং এটি ইতোমধ্যে রাশিয়ার অংশ হয়ে গেছে যা অস্বীকার করার উপায় নেই।"
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করার সময় মনে করেছিল, তারা কয়েক দিনের মধ্যেই রাজধানী কিয়েভ দখল করবে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরো দেশ দখল করবে। তবে যুদ্ধ চতুর্থ বছরে প্রবেশ করতে চললেও মস্কো বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখলে রেখেছে।
২০২৩ সালে, রাশিয়া দখলকৃত চারটি অঞ্চল দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসনে গণভোট আয়োজন করা হয়েছিল যার মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে এক হয়ে যাওয়াকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়।
পেসকভ দাবি করেন, গণভোটে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য মানুষ বহু বিপদের মধ্যেও লাইন ধরে দাঁড়িয়েছিল এবং ভোট দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, "এটি মূলত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।"
তবে সিএনএন তখন এই মঞ্চস্থ গণভোটের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সরাসরি প্রোপাগান্ডার অংশ বলে খারিজ করে দেন।
ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনায় 'অসাধারণ অগ্রগতি' হয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই সপ্তাহে ইউক্রেন সফর করবেন। এরপর তারা জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেবেন, যেখানে জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প আবারও কিয়েভের জন্য দেওয়া মার্কিন সহায়তা থেকে প্রতিদান পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "দুর্লভ খনিজ, তেল-গ্যাস ও অন্যান্য সম্পদের দিক থেকে তাদের (ইউক্রেনের) ভূমি অত্যন্ত মূল্যবান। আমি চাই আমাদের অর্থ সুরক্ষিত থাকুক।"
তিনি আরও বলেন, "আমি তাদের বলেছি যে আমি প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ দুর্লভ খনিজ চাই, এবং তারা মূলত এটি করতে সম্মত হয়েছে, যাতে অন্তত আমরা বোকা না বোধ করি। নইলে তো আমরা বোকা। আমি তাদের বলেছি, আমাদের কিছু পেতে হবে। আমরা এই অর্থ দেওয়া চালিয়ে যেতে পারবো না।"
যেখানে বাইডেন প্রশাসন কিয়েভের প্রতি তাদের সমর্থনকে ব্যাখ্যা করেছে জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রক্ষার প্রয়াস হিসেবে। সেখানে ট্রাম্পের মন্তব্য তার আরও লেনদেনভিত্তিক ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরেছে।
ট্রাম্পের মন্তব্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। কারণ পুতিন এ আক্রমণকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে রুশ ও ইউক্রেনীয়রা 'একই জাতি, একক সত্তা' এবং ইউক্রেন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র নয় বলে আসছেন।
এই সপ্তাহে মিউনিখে ট্রাম্প প্রশাসনের সিনিয়র সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কয়েকজন ইউরোপীয় নেতা। এরই মধ্যে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা মঙ্গলবার জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া যেন ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে কোনো সুবিধা না নিতে পারে এবং তারা যেন বিজয়ী না হয়।
দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটের ফাঁকে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দুদা বলেন, "আদর্শ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন তার সমস্ত দখলকৃত ভূমি পুনরুদ্ধার করবে।" তবে তিনি স্বীকার করেন যে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যুদ্ধ যেন বন্ধ হয় তবে সেটা 'রাশিয়ার শর্তে' নয়।