আবর্জনার স্তূপে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বিটকয়েন হারানো সেই ব্যক্তি এবার পুরো ভাগাড় কিনে নিতে চান
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/15/shutterstock-editorial-3394526d.jpg)
ওয়েলসের এক আবর্জনার স্তূপের গভীরে, বহু বছরের পুরোনো বর্জ্যের নিচে, একটি হার্ড ড্রাইভ চাপা পড়ে আছে—যা প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বিটকয়েনের চাবিকাঠি ধরে রেখেছে। অন্তত জেমস হাওয়েলস তাই বিশ্বাস করেন, যিনি ২০১৩ সালে ভুলবশত ড্রাইভটি ফেলে দিয়েছিলেন।
অনেক বছর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইনি লড়াই চালানোর পর হার্ড ড্রাইভটি ফেরত পাওয়ার জন্য জেমস হাওয়েলস এক নতুন পরিকল্পনা করেছেন। তিনি সরাসরি একটি ময়লার ভাগাড় কিনে নিতে চান।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ হাওয়েলস লিখেছেন, 'একটি ল্যান্ডফিল সাইট (ময়লার ভাগাড়) কেনার কথা ভাবছি। অর্থায়ন নিশ্চিত।' সোমবার যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তার আগের মন্তব্যের সুরেই এ কথা বলেছেন তিনি। তবে কে অর্থ দিচ্ছে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।
সিএনএন হাওয়েলসের মন্তব্যের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
নিউপোর্ট শহরের ডকসওয়ে ময়লার ভাগাড়ে প্রবেশাধিকার পেতে হাওয়েলস বহু চেষ্টা চালিয়েছেন। ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ থেকে ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই শহরের ভাগাড়ে খননের অনুমতি পেতে তিনি ২০২১ সালে নিউপোর্ট সিটি কাউন্সিলকে ৭ কোটি ডলারের বেশি দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
তার এই নতুন পরিকল্পনা এসেছে এমন এক পরিস্থিতিতে, যখন ব্রিটিশ হাই কোর্টের এক বিচারক জানুয়ারিতে রায় দিয়ে তার মামলা শুনানি পর্যায়ে যেতে দেননি এবং কাউন্সিলকে ময়লার ভাগাড়ে অনুসন্ধানের অনুমতি দিতে বাধ্য করার চেষ্টাও নাকচ করে দিয়েছেন।
হাওয়েলস ২০১৩ সালের আগস্টে নিজের বাড়ি গোছানোর সময় ভুলবশত ওই গুরুত্বপূর্ণ হার্ড ড্রাইভটি ফেলে দেন। তিনি ভেবেছিলেন, সেটি একটি ফাঁকা ড্রাইভ এবং সেখানে কোনো তথ্য নেই। তাই সেটি একটি আবর্জনার ব্যাগে ভরে বাড়ির হলঘরে রেখে দেন, যা তার তৎকালীন সঙ্গী আবর্জনার স্তূপে ফেলে দেন। পরে, যখন বিটকয়েনের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে ভুল ড্রাইভটি ফেলে দিয়েছেন।
এরপর থেকে হাওয়েলসের দাবি অনুযায়ী, হার্ড ড্রাইভে থাকা বিটকয়েনের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যখন তিনি এটি ফেলে দেন, তখন এর মূল্য ছিল প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বেড়ে তার সেই বিটকয়েনের মূল্য প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
প্রত্যেকটি বিটকয়েন লেনদেনের জন্য একটি ব্যক্তিগত 'কি' প্রয়োজন, যা প্রতিটি বিটকয়েন ওয়ালেটের মধ্যে থাকা একটি গোপন ডেটা। এটি গাণিতিকভাবে প্রমাণ করে, সংশ্লিষ্ট লেনদেন ওই নির্দিষ্ট ওয়ালেট থেকেই এসেছে।
হাওয়েলসের হার্ড ড্রাইভে ওই ব্যক্তিগত 'কি'-এর একটি 'রেকর্ড' রয়েছে। জানুয়ারিতে দেওয়া রায়ে বিচারক অ্যান্ড্রু কাইজার এ কথা উল্লেখ করেছেন।
ব্যক্তিগত 'কি' জানা না থাকায়, হাওয়েলস তার সেই পুরোনো বিটকয়েনগুলো আর উদ্ধার করতে পারছেন না। যখন তিনি সেগুলো মাইন করেছিলেন, যখন ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তি জগতের বাইরে খুব কমই পরিচিত ছিল।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউপোর্ট সিটি কাউন্সিল ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে ময়লার ভাগাড়টি বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে। তবে তারা সিএনএন-এর মন্তব্যের অনুরোধের এখনও সাড়া দেয়নি। ২০২১ সালে কাউন্সিল সিএনএন-কে জানিয়েছিল, তাদের অনুমতিপত্রের শর্ত অনুযায়ী তারা ওই ভাগাড় খনন করতে পারে না।
তখন এক মুখপাত্র বলেছিলেন, 'কাউন্সিল জনাব হাওয়েলসকে অনেকবার জানিয়েছে, আমাদের লাইসেন্সের আওতায় খনন সম্ভব নয় এবং এটি আশপাশের এলাকার ওপর মারাত্মক পরিবেশগত প্রভাব ফেলবে।'
তিনি আরও বলেছিলেন, 'ভাগাড় খনন, বর্জ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যয় কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত গড়াতে পারে। তাও কোনো নিশ্চয়তা নেই, হার্ড ড্রাইভটি খুঁজে পাওয়া যাবে কি না বা এটি এখনও কাজ করছে কি না।'