চট্টগ্রামে আইসিইউ ছাড়াই হবে করোনা রোগীর চিকিৎসা
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগীর চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে দু'টি হাসপাতালের ১৫০টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল দু'টিতে নেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। ফলে করোনা আক্রান্ত কোনো মুমূর্ষু রোগীর আইসিইউ সেবা প্রয়োজন হলেও সেটি দেওয়া সম্ভব হবে না।
হাসপাতাল দু'টি হলো- আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি)।
এদিকে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রাজধানীতে ১৫০টি আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
অথচ চট্টগ্রামের ৬০ লাখ বাসিন্দার জন্য এ ধরনের চিকিৎসার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। খোদ চিকিৎসকরা এটাকে ঢিলে-ঢালা প্রস্তুতি বলে অভিহীত করেছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) মেডিসিন বিভাগের একজন অধ্যাপক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, করোনা রোগীর অবস্থা যেকোনো সময় মুমূর্ষু হতে পারে। তখন তার আইসিইউ প্রয়োজন হবে। অথচ চিকিৎসার জন্য আইসিইউ ছাড়া হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নয়।
মানবাধিকারকর্মী ও বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কমিশনের ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক বলেন, চিকিৎসা প্রতিটি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। একজন রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা রাষ্ট্রকে করতেহবে। যেখানে নেপালসহ অনেক দেশ আমাদের থেকে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও অত্যাধুনিক করোনা সেবাকেন্দ্র চালু করেছে, সেখানে আমরা আইসিইউ ছাড়া সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা পুরোপুরি অবহেলা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে শুধু চমেক হাসপাতালে আইসিইউ রয়েছে। কিন্তু সেখানে নিয়মিত আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। করোনার রোগীর চিকিৎসা সেখানে হলে সংক্রমণের শঙ্কা রয়েছে। তাই বিকল্প দু'টি হাসপাতালকে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে হাসপাতাল দুইটিতে আইসিইউ ইউনিট নেই।
রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, জরুরি প্রয়োজনে রোগীকে চমেক হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আছে। তবে এখনো সেটি চূড়ান্ত হয়নি।
তবে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তারা করোনা রোগী ভর্তি করাবে না। অন্য রোগীদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়ানোর আশঙ্কায় তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চমেক হাসপাতালে সচল আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ১০টি। আড়াই থেকে তিন হাজার রোগীর চাহিদার তুলনায় সেটি খুবই কম। এসব বেডে সবসময় রোগী থাকে। এ ছাড়া আইসিইউ বেড না পেয়ে অনেক রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এরমধ্যে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয় মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবীর বলেন, জরুরি প্রয়োজনে চমেকের আইসিইউ ব্যবহার করার প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু এতে অন্য রোগীরা সংক্রমিত হতে পারেন। উল্টো শত শত রোগী আক্রান্ত হতে পারেন। তাই আমরা বিকল্প চিন্তা করতে বলেছি।
চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে বিদেশ ফেরত ১০২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি তিনজনের পরীক্ষা করা হলেও তাদের শরীরে করোনার নমুনা মেলেনি।
করোনার প্রকোপ শুরুর পর প্রায় দুই হাজার লোক বিদেশ থেকে চট্টগ্রামে এসেছেন। এ ছাড়া দেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর ও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে চট্টগ্রামে। তাই সিভিল সার্জন কার্যালয় ভৌগলিকভাবে চট্টগ্রামকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে।