দাপুটে জয়ে সিরিজ জিতে নিলো বাংলাদেশ
ঘরের মাঠের স্পিন ভেল্কি গায়ানাতে নিয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা নাসুম আহমেদ। বাঁহাতি এই স্পিনারের ঘূর্ণিতেই দিশেহারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের দুর্দশার অবস্থা আরও কঠিন হলো মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন ছোবলে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, শরিফুল ইসলামরাও কম গেলেন না। তাতে লক্ষ্য দাঁড়ালো সামান্যই। যা পাড়ি দিতে একেবারেই বেগ পেতে হলো না বাংলাদেশকে।
গায়ানার প্রোভিডেন্স ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হলো তামিম ইকবালের দলের। এ নিয়ে ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা চারটি সিরিজ ও ১০ ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ। সফরকারীদের সামনে এখন ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আগামী ১৬ জুলাই মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
একটি দলের পারফরম্যান্সে কতোই না বৈপরীত্য। এই দলটিই টেস্ট সিরিজে ছিল হতাশার প্রতিচ্ছবি হয়ে। চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতেও ভাগ্য বদলায়নি তাদের, সিরিজ হারে ২-০ ব্যবধানে (একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়)। কিন্তু ওয়ানডে আসতেই দাপুটে বাংলাদেশ। প্রিয় ফরম্যাটে ব্যাটে-বলে শাসন করে প্রতিপক্ষের ডেরাতেই বিজয় নিশান উড়ালো তারা।
টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন তামিম ইকবাল। আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নাসুম, মিরাজ, মোসাদ্দেকদের স্পিন মায়াজালে দিক হারিয়ে ৩৫ ওভারে মাত্র ১০৮ রানেই অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা।
ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই ক্যারিবীয়দের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ। ছোট লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে অধিনায়ক তামিম ৫০ ও লিটন কুমার দাস ৩২ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে বাংলাদেশের দরকার হয় মাত্র ২০.৪ ওভার। ওয়ানডেতে এ নিয়ে পঞ্চমবার ৯ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ, আর চলতি বছর দ্বিতীয়বার। এই জয়গুলোর মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি বল (১৭৬) হাতে রেখে জিতলো তামিমের দল।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে সাবলীল শুরু করে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৮ রান যোগ করেন তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩৬ বলে ২০ রান করা শান্তর বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। এরপর আর বাংলাদেশের ইনিংসে আঘাত হানতে পারেনি ক্যারিবীয় বোলাররা। ৬৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জেতান তামিম-লিটন। ৫৩তম হাফ সেঞ্চুরি করা তামিম ৬২ বলে ৭টি চারে অপরাজিত ৫০ রান করেন। ২৭ বলে ৬টি চারে হার না মানা ৩২ রান করেন লিটন।
এর আগে ব্যাটিং করা ক্যারিবীয়দের ১০ উইকেটের ৮টিই নেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। সামনে থেকে নেতৃত্ব নেওয়া নাসুমের শিকার ৩টি। মিরাজের শিকার সর্বোচ্চ ৪টি। একটি উইকেট নেন মোসাদ্দেক। পেসারদের মধ্যে শরিফুল নিয়েছেন একটি উইকেট। বাকি উইকেটটি আসে রান আউট থেকে।
কন্ডিশন ও উইকেট বিবেচনায় স্পিনার মোসাদ্দেককে দিয়ে ইনিংস শুরু করান তামিম। অপর প্রান্তে মুস্তাফিজুর রহমানকে বোলিংয়ে টানলেও তাকে দিয়ে তিন ওভারের বেশি করাননি তিনি। দুই প্রান্ত থেকেই স্পিনাররা বোলিং করতে থাকেন। ১১তম ওভারে গিয়ে প্রথম আঘাতটি হানেন মোসাদ্দেক। কাইল মেয়ার্সকে ফিরিয়ে দেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। প্রথম উইকেট হারানোর আগে থেকেই অবশ্য ধুঁকছিল স্বাগতিকরা। ১০.৩ ওভারে মাত্র ২৭ রান তোলে তারা।
মোসাদ্দেক প্রথম উইকেট নিতেই ক্যারিবীয়দের চেপে ধরেন নাসুম। বাঁহাতি এই স্পিনার ৬ ওভারের ব্যবধানে তুলে নেন ৩ উইকেট। তার শিকারে পরিণত হন শেমার ব্রুকস, শেই হোপ ও নিকোলাস পুরান। ৪৫ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে দিক হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দিকহারা দলকে ঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করেও পারেননি রভম্যান পাওয়েল, তাকে ফেরান শরিফুল। অনেকক্ষণ চেষ্টা করে যাওয়া ব্রেন্ডন কিংকে সাজঘর দেখিয়ে দেন মিরাজ। শেষ দিকে গিয়ে কিমো পল সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন।
এ ছাড়া শেই হোপ ১৮, কাইল মেয়ার্স ১৭, ব্রেন্ডন কিং ১১ ও রভম্যান পাওয়েল ১৩ রান করেন। ৮ ওভারে ৪ উইকেট নিতে ৩২ রান খরচা করেন মিরাজ। নাসুম ছিলেন সবচেয়ে কৃপণ। ১০ ওভারে মাত্র ১৯ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। এক উইকেট নেওয়া মোসাদ্দেকের ১০ ওভারে খরচা ৩৭ রান। মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ১২ ও শরিফুল ৩ ওভারে ৯ রান দেন।