মাসে একবার পিজ্জা, দুইবার শপিং- অভিনব চুক্তিতে বিয়ে সারলেন আসামের যে যুগল
কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও আলোড়ন তোলে। দেখা যায়, বিয়ের মঞ্চে বসে বর-কনে হাসতে হাসতে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করছেন।
সাধারণত বিয়েতে 'সিরিয়াস' ব্যাপারেই চুক্তি হতে দেখা যায়। কিন্তু এদের চুক্তিপত্রের মজাটাই সেখানে! তারা যেসব ব্যাপারে চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন, তা ছিল একেবারেই অনন্য।
বর-কনের বন্ধুরা মিলে নাকি চুক্তির দফাগুলো নির্ধারণ করেছে। বলাই বাহুল্য, এগুলো মানতে কোনো পক্ষেরই আইনত বাধা নেই।
বিয়ের একদিন পর, ২২ জুন ইনস্টাগ্রামে ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি আপলোড দেয়ার পর এখন পর্যন্ত সেটির ভিউ প্রায় ৪৫ মিলিয়ন।
বিয়েতে বন্ধুবান্ধবের সাথে মিলে এমন মজার চুক্তিতে স্বাক্ষরের ঘটনা কিন্তু আগেও দেখা গেছে। তবে এবারেরটি আকর্ষণ মূলত, তালিকায় থাকা একদম প্রথম চুক্তি- 'মাসে মাত্র একটিই পিজ্জা।'
ভাইরাল চুক্তির নেপথ্যে বিয়ের কনে শান্তি প্রসাদ (২৪)। বন্ধুমহলে 'পিজ্জাপ্রেমী' হিসেবে খ্যাত শান্তি বিয়ে করলেন তার কলেজজীবনের প্রেমিক মিন্টু রায়কে (২৫)। উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের গোহাটিতে সকল প্রথা ও ঐতিহ্য মেনে তদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
পাঁচ বছর আগে কমার্সের ক্লাসে তাদের পরিচয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার ডেটে যান এই যুগল।
বর মিন্টু বলেন, "সেদিন আমাদের শেষ ক্লাসটি ফাঁকি দিয়ে আমরা কাছের পিজ্জা আউটলেটে যাই। ও সবসময়ই পিজ্জা নিয়ে কথা বলত, তাই আমার তো ওকে সেখানেই নিতে হতো।"
"আমি পিজ্জা দারুণ ভালবাসি। ডেটে গেলেই আমি ওর সাথে পিজ্জা খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে দিতাম", শান্তি বলেন।
কিন্তু এক পর্যায়ে মিন্টু অভিযোগ করতে লাগলেন। পিজ্জা তার অপছন্দের ছিল না, কিন্তু প্রতিদিন এক জিনিস খেতে আর কাঁহাতক ভাল্লাগে!
খাবার নিয়ে তারা কখনো ঝগড়া করতেন না। মিন্টু শুধু বন্ধুদের কাছে অভিযোগের ঝাঁপি মেলে ধরতেন, তার প্রতিদিন পিজ্জা খেতে ভাল লাগছে না। বন্ধুরাও এ নিয়ে হাসিঠাট্টা করতেন।
এই যুগলের বন্ধু এবং অভিনব এই চুক্তির পেছনের কারিগর রাঘব ঠাকুর বলেন, "মিন্টুর পর শান্তির যদি দ্বিতীয় কোন ভালবাসা থেকে থাকে, তাহলে সেটি পিজ্জা। অবসরে সে পিজ্জার কথা ভাবে, এমনকি ঘুমের মধ্যেও।"
"আমরা সবাই সবাইকে দীর্ঘ একটা সময় যাবত চিনি। আমরা দেখেছি কীভাবে তাদের প্রেম আস্তে আস্তে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠলো। তাই তাদের বিয়ের খবর শুনেই ভাবলাম, এমন কিছু করতে হবে, যা একই সাথে অভিনব, আবার মনে রাখার মতো।"
"পরে আমরা ভেবেচিন্তে আট দফা চুক্তি ঠিক করি। যেহেতু ও পিজ্জার জন্য পাগল, তাই পিজ্জা সম্বলিত শর্ত একদম প্রথমেই রাখি", যোগ করেন রাঘব।
বাকি সাত দফা চুক্তির মধ্যে রয়েছে- প্রতি রোববার ছুটির দিনে নাস্তা বানাবেন মিন্টু, প্রতি ১৫ দিনে শান্তিকে শপিংয়ে নিয়ে যাবেন, লেট-নাইট পার্টিগুলোতে স্ত্রীকে ছাড়া না যাওয়া ইত্যাদি।
আবার মাসে একটি পিজ্জার পাশাপাশি শান্তির জন্য পালনীয় দফার মধ্যে ছিল প্রতিদিন জিমে যাওয়া এবং শাড়ি পরা- কারণ মিন্টু্র চোখে শাড়িতে শান্তিকে সবচাইতে সুন্দর লাগে।
নিজেদের বিয়ের ভিডিওচিত্র ভাইরাল হওয়াতে এই নবদম্পতি বেশ খুশি।
চুক্তিপত্রটি ঘরের দেয়ালে বাঁধাই করে রাখবেন শান্তি-মিন্টু। তবে শান্তি কতটুকু মেনে চলবেন এর শর্ত সে নিয়ে রাঘবের যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
হাসতে হাসতে শান্তি প্রসাদ জানিয়েছেন, রাঘবের আশংকাই সত্যি। ইতিমধ্যে বিয়ের পর দুই সপ্তাহে দুইবার পিজ্জা খাওয়া সম্পন্ন তাদের!
- সূত্র- বিবিসি