চরম আবহাওয়া রাজনৈতিক, খাদ্য সংকট বাড়িয়ে তুলবে
বর্তমানে আমাদের মতো দেশগুলোতে তাপমাত্রা চরম রূপ নিচ্ছে, যা হয়তো আরও দুই মাস পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
এমনটা হলে আমাদের ফসলের স্বাভাবিক ধরন বা ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে।
আমরা কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি একটাই কারণে, আমাদের কৃষি উৎপাদন ভালো ছিল; আমাদের কোনো ধরনের বৈরী পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। কিন্তু যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে, তাতে সামনের দিনগুলোতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে।
সত্যিই যদি এমন হয়, তাহলে তা আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা হবে, যা শেষ পর্যন্ত মানুষের ফুড বাস্কেটকে প্রভাবিত করবে।
ফলশ্রুতিতে আমাদের এই ফুড বাস্কেট সংকোচনের আবশ্যকতা দেখা দিবে। যেমন, চালের দাম যদি ৮০ থেকে ১৮০ টাকা হয়ে যায়, তাহলে আমাদেরকেই ফুড বাস্কেট থেকে চাল কমাতে হবে।
যে বৈরী আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে, আমি বলব, তা নিঃসন্দেহে আতংকের বিষয়। এই পরিস্থিতির সাপেক্ষে, আমাদের কৃষি উৎপাদন যেন ক্ষতির মুখে না পড়ে, সেজন্য উচিত হবে একটি আগাম পরিকল্পনার।
অবস্থার অবনতি হলে আমরা কী ধরনের ফসল উৎপাদন করব, কতটুকু করব, সেখানে কারো সহায়তা লাগবে কিনা- সে জায়গাগুলো আমাদের সরকারি পর্যায় থেকে দেখা দরকার।
বাংলাদেশের মানুষের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আমাদের যে রাজনীতি তা খাদ্যনির্ভর রাজনীতি। এ জায়গাতে কোন স্বল্পতা দেখা দিলে, মানুষের মধ্যে সামাজিক উদ্বিগ্নতা বাড়িয়ে তুলবে।
সর্বোপরি আমি বলতে চাই, জলবায়ুগত যে পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেটার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এখনই পরিকল্পিত উপায়ে আমাদের খাদ্য উৎপাদনের যেখানে যা ব্যবস্থা দরকার তা নেয়া।
এটা না করা হলে আমরা গুরুতর সংকটে পড়তে পারি, যে সংকট আমাদের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দেবে এবং সমগ্র অর্থনীতিকেই দুর্বল করে তুলবে।
সুতরাং ফসল উৎপাদন, মজুদ, আমদানির জন্য এখন থেকেই চিন্তাভাবনা করা দরকার। পাশাপাশি কোন খাতে প্রণোদনা দিলে আমাদের চাষীরা অধিক উৎপাদনে সক্ষম হবে, সেখানে সরকারের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা দরকার।
শেষে আরও যোগ করতে চাই, সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গত মানুষগুলোকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। সরকারের উচিত তাদের যথাযথ সহায়তা প্রদান করা যেন তারা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
- (অধ্যাপক মোঃ সাইদুর রহমান, কৃষি অর্থনীতি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)