শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর খুনের ঘটনায় মামলা, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদের (২২) খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হক বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বলেন, মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
তবে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ৩ জনকে আনা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
এদিকে বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগ। রাত সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে প্রায় আধ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে তারা। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের ভিতরেই এমন ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে সকালে ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বুলবুল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচিতে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন শাবি শিক্ষার্থী আশ্রাফুল আলম।
দাবিগুলো হলো, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুলবুল হত্যায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর, নিহত বুলবুলের পরিবারকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ও প্রদানের উপায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ, ক্যাম্পাসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং বুলবুলের স্মৃতি রক্ষার্থে বুলবুল হত্যার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও বুলবুল চত্বর ঘোষণা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এমন ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও তাদের ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানাই।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গাজিকালুর টিলায় বুলবুল আহমেদের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে অন্য শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে খবর দেন।
পরে আহত অবস্থায় বুলবুলকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। তিনি শাবিপ্রবির লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
বুলবুলের সহপাঠী অমিত ভৌমিক জানান, সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজিকালুর টিলায় বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে হাসপাতালে আনা হলে পরে সেখানে মারা যায় বুলবুল। ছুরিকাঘাতকারীরা ছিনতাইকারী হতে পারে বলে ধারণা অমিতের।
তবে খুনিদের চিহ্নিত করা যায়নি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল বলেন, পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে খুনিরা গ্রেপ্তার হবে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আহত অবস্থায় বুলবুলকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে আনা হয়। কিন্তু তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানের চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।