প্রবাসী পিতা-পুত্রের মৃত্যুরহস্যের জট খোলেনি এখনও
সিলেটের ওসমানীনগরে প্রবাসী পরিবারের পাঁচজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার ও দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় একটি মামালা করা হলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
তবে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজনের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শিশির ভট্টাচার্যকে প্রধান করে বৃহস্পতিবার একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুপুরে উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের মঙ্গলচন্ডী সড়কের একটি বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় পাঁচজনকে উদ্ধার করে পুলিশ। বাসার একটি কক্ষের দুটি বিছানায় শুয়ে ছিলেন প্রবাসী পরিবারের ওই পাঁচ সদস্য।
তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা যান। রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনারা বেগম, ছেলে সাদিকুল ইসলাম এবং মেয়ে সামিরা ইসলাম অসুস্থ অবস্থায় বর্তমানে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
একসঙ্গে পাঁচজন কীভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন সে প্রশ্নের উত্তর এখন পর্যন্ত নেই পুলিশের কাছে। এ ব্যাপারে সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, 'আমরা এখনও বুঝতে পারছি না কীভাবে এই ঘটনাটি ঘটল। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।'
তিনি বলেন, যারা অসুস্থ তাদের সঙ্গে আলাপ করলে হয়তো কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু সুস্থ না পাওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। আজকে হুছনারা বেগমের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আমরা সকালে তার সঙ্গে কথা বলতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি এখনও কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে আসেননি। তাই তাদের সুস্থ হওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছি আমরা।
বাসায় থাকা অন্য স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'যে বাসা থেকে পাঁচজনকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, সেই বাসারই অন্য কক্ষে নিহত রফিকুলের শ্বশুর, শাশুড়ি, এক শ্যালক ও শ্যালকের স্ত্রী ছিলেন। আমরা তাদের সহ আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কিন্তু তাদের কথাবার্তায়ও অসংলগ্ন কিছু পাওয়া যায়নি।'
এখনও এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে না পারা নিজের জন্য বিব্রতকর উল্লেখ করে এসপি বলেন, তাদের জমিজমা বা অন্য কিছু নিয়ে বিরোধের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রবাসে থাকায় এলাকার লোকজনের সাথেও তেমন সম্পর্ক নেই। ছেলেমেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া ছাড়া আর কোথাও যাওয়ারও তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে কি কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে তা আমরাও বুঝতে পারছি না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জানাজা শেষে উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়ন পরিষদের বড় ধিরারাই গ্রামে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে নিহত পিতা-পুত্রের লাশ দাফন করা হয়।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে নিহত রফিকুলের শ্বশুর আনফর আলী বলেন, 'সোমবার রাতে আমার মেয়েজামাই বাজার থেকে ফাস্টফুড কিনে আনেন। রাতে পরিবারের সবাই ফাস্টফুড খেয়ে ১০টার দিকে একই কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে ডাকাডাকি করে না ওঠায় পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার দুজনকে মৃত ঘোষণা করে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।'
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন রফিকুল ইসলাম। অসুস্থ ছেলে সাদিকুল ইসলামের চিকিৎসার জন্য গত ১২ জুলাই পরিবার নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। এক সপ্তাহ ঢাকায় ছেলের চিকিৎসা শেষে ১৮ জুলাই উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অরুনোদয় পাল ঝলকের মালিকানাধীন বাসার দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়েছিলেন রফিকুল।
বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।