জুন মাসে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে বেসরকারি খাতে
ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় জুন মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বেড়েছে।
এই সময়ে ক্রেডিট বেড়েছে ১৩.৬৬ শতাংশ, যা গত ৪৩ মাসে সর্বোচ্চ। এই হার আগের মাসের ১২.৯৪ শতাংশ থেকে বেশি। এছাড়া, এই অর্থবছরের জন্য ঠিক করা ১৪.১ শতাংশের আর্থিক সীমার কাছাকাছি ছিল ক্রেডিট বৃদ্ধির হার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের গড় ক্রেডিট প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৬৭ শতাংশ, যা ১৪.৮ শতাংশের আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক কম।
এছাড়া, চলতি বছরের মার্চে করোনা মহামারির অনিশ্চয়তা বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধিকে প্রায় ৮ শতাংশে নিয়েছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও বিভিন্ন ধরনের আমদানি পণ্যের বিপরীতের নগদ ক্যাশ মার্জিনের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে বলে জানান ব্যাংকাররা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে দেশের আমদানির ঊর্ধ্বমূখী প্রবণতার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এছাড়া দেশের বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে অধিক মুল্য পরিশোধের কারণে গ্রাহকদের ঋণের চাহিদা বেড়েছে যা বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণ করেছে।
এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আলম খান চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোভিড পরবর্তীতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। বিশেষকরে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও র ম্যাটেরিয়াল ব্যাপক আমদানি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে পূবালী ব্যাংকেরও বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। বিশেষ করে গত কয়েকমাসে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে।
এছাড়া দেশের বাজারে ডলারের দাম বাড়ার কারণে গ্রাহককে এলসি খুলতে অতিরিক্ত মুল্য দিতে হচ্ছে যা সবমিলিয়ে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতির বিবৃতি অনুসারে, অর্থ প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধির সীমা ২০২১-২২ অর্থবছরের ১৪.৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪.১ শতাংশ করা হয়েছে।
গত অর্থবছরের জুলাই-মে মাসে, দেশের আমদানি পরিশোধ ৩৯ শতাংশ বেড়ে ৮১.৪৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কয়েকটি কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে বিশেষ করে কোভিড পরবর্তীতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলমান হওয়ায় ব্যাপক আমদানি বেড়েছে। এছাড়া ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকের অতিরিক্ত টাকার চাহিদা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, "দেশে আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অতিরিক্ত ডলার বিক্রি করতে হয়েছে, যা দেশের রিজার্ভে হিট করেছে। নতুন করে রিজার্ভকে স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে বিভিন্ন আমদানি পণ্যে নগদ মার্জিন শর্ত দেওয়া হয়েছে। যার ফলে অনেক গ্রাহক অধিক পরিমাণ ক্যাশ মার্জিন রাখাতে ব্যাংকগুলোতে ঋণের চাহিদাও বেড়েছে।"
দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনাকে আরও সমন্বিত রাখার লক্ষ্যে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স, স্বর্ণ, মূল্যবান ধাতু, আরএমজি এবং মুক্তাসহ আরো কিছু পণ্যের ক্রেডিট খোলার জন্য শতভাগ নগদ মার্জিন আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।