কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে ৩০০ টাকা কেজি, ভারত থেকে আমদানির অনুমতি
ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে প্রতিকেজি মরিচ ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। একই পণ্য চট্টগ্রামে কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা।
কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র তাপদাহ, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে কাঁচা মরিচের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
এছাড়া দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচের আমদানি বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম।
শুক্রবার রাজধানীর মগবাজার এলাকার সবজি বিক্রেতা হাবিবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ঈদ-উল-আজহার আগে প্রতি কেজি ১০০ টাকা ছিল কাঁচা মরিচ। ঈদের দুই দিন পর বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। এখন ২৮০ টাকা কেজি।"
চট্টগ্রামে সবজির সবচেয়ে বড় বাজার রিয়াজউদ্দীন বাজারে পাইকারি প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে পণ্যটির কেজিতে দাম ঠেকেছে ৩০০ টাকায়।
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। মরিচসহ সবজি উৎপাদনকারী অনেক নিচু এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় মরিচের সরবরাহ কম থাকায় বাজারে এর দাম ঊর্ধ্বমুখী।"
চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আলমাস হোসেন বলেন, দেশে কাঁচা মরিচের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি ভারত থেকে মরিচের আমদানি কমে গেছে। এ কারণে সরবরাহ কমে বাড়তি টাকায় আড়ত থেকে মরিচ কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চট্টগ্রমের চকবাজারে বাজার করতে আসা পোশাকশ্রমিক লায়লা আক্তার টিবিএসকে বলেন, "সপ্তাহ আগেও প্রতিদিনের রান্নার জন্য ৫ থেকে ১০ টাকার কাঁচা মরিচ নিয়ে যেতাম। এখন ২০ টাকার নিচে খুচরা কাঁচামরিচ বিক্রি করছে না। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বাড়তি। টাকা কম থাকায় কাঁচা মরিচ কেনা এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।"
হিলি স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ জানান, "বেশ কিছুদিন ধরেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছিল। বর্তমানে কাঁচা মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সরকার বৃহস্পতিবার আমদানির অনুমতি দিয়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "ইতোমধ্যেই আমিসহ হিলি স্থলবন্দরের দুজন আমদানিকারক দেড় হাজার টন কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি পেয়েছি। আরো যারা আমদানিকারক কাঁচামরিচ আমদানির জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন তারা হয়তো আগামী রোববার অনুমোদন পেতে পারেন।"
কাঁচা মরিচের এলসি খোলা হয়েছে বিধায় শনিবার থেকে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হতে পারে বলে জানান হারুন উর রশীদ।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার, হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিম, মুরগি ও চালের দাম।
ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৭০ টাকা। আর চালের দাম প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। ডিমের ডজন ১০ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মগবাজার আমবাগান এলাকার সাজিদ স্টোরের বিক্রয় কর্মী ইসমাইল সরদার বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা।
"গত সপ্তাহে ৫০ কেজি পাইজাম চালের বস্তা পাইকারি কিনেছি ২৪০০ টাকা, এখন সেই চাল কিনলাম ২৫০০ টাকা। চাল কেনার পর সেই চাল দোকানে আনতে খরচ আছে। আমরা এখন খুচরা চাল বিক্রি করছি ৫৫ টাকা কেজি।"
একই এলাকার শাহ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিক্রেতা মোহম্মদ দিপু বলেন, নাজিরশাইল চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে এখন মানভেদে ৬২ থেকে ৭৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চাল ৬৬ থেকে ৭৫ টাকা, বিআর-২৮ এর কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২ টাকা
শুক্রবার দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে।
ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ শুক্রবার প্রতি কেজি ২১-২২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার ছিল ১৯-২০ টাকা।
ব্যবসায়ীদের মতে, দেশব্যাপী স্থানীয় বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধির কারণে দাম বেড়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, "সাম্প্রতিক ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমরা ভারত থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ আমদানি করছি।"
বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ২৩ ট্রাকে ৬৮৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। একইভাবে আগস্টের প্রথম চার দিনে ৯০ ট্রাকে ২ হাজার ৬০১ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান এ তথ্য।