কে এই অনুব্রত মণ্ডল? গরু পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার যে তৃণমূল নেতা
আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের সামনে মানুষের হল্লা। সবাই চেঁচাচ্ছেন, 'চোর, চোর'। কেউ জিজ্ঞেস করছেন, 'ও অনুব্রতদা, আপনি কি চোর?' সরকারি লোকেরা গাড়ি থেকে নামাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডলকে। মিডিয়া, বিক্ষুব্ধ মানুষ ঠেলে কোর্টের দিকে এগোচ্ছেন তিনি। মানুষ কেবল তার কাছে জানতে চাইছেন, গরু পাচার বিষয়ে তার মন্তব্য কী। কেউ কেউ জুতো হাতে নিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) তৃণমূল কংগ্রেসের এই জ্যেষ্ঠ নেতাকে গরু পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। বীরভূম জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দলের ন্যাশনাল ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবেও আছেন অনুব্রত মণ্ডল।
অনুব্রত মণ্ডল কে?
১৯৬০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন অনুব্রত মণ্ডল। মমতা ব্যানার্জির সবচেয়ে বিশ্বাসভাজনদের তালিকায় আছে তারও নাম।
তবে মজার ব্যাপার হলো, এত রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কখনো কোনো নির্বাচন করেননি অনুব্রত। বলা যায় দৃশ্যপটের বাইরে থেকেই দলকে সামলেছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অনুব্রত এতই জাঁদরেল লোক যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন, এবং ২০১৬ ও ২০২১ সালের অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে ভারতের নির্বাচন কমিশন তার ওপর নজর রেখেছিলেন যাতে তিনি নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে না পারেন।
নিজের প্ররোচনামূলক রাজনৈতিক বক্তব্যের জন্যও কুখ্যাত অনুব্রত। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি তৃণমূল কর্মীদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাড়িতে বোমা মারার সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তার 'খেলা হবে' স্লোগান ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে জনপ্রিয় হয়েছিল। যদিও তারও আগে বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ তার বক্তব্যে একই শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছিলেন যা পরে দেশের নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মানুষ অনুব্রতকে চেনেন 'সুঁটিয়ে লাল করে দেব' মন্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মিমের মাধ্যমে।
কী আছে গরু পাচারের অভিযোগে?
সিবিআই'র তথ্য অনুযায়ী, গরু পাচারের সঙ্গে অনুব্রত সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত এনামুল হকের সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছে সিবিআই।
২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো গরু পাচারের বিষয়টি সামনে আসে। ২০২১ সালে সিবিআই ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। অভিযোগের তালিকায় ছিল সতীশ কুমার নামক ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী'র (বিএসএফ) এক অধিনায়ক, পালের গোদা এনামুল হক, পাচারকারী আনারুল শেখ ও মো. গোলাম মুস্তফা।
পাচারকারীরা হাজারো গরু পশ্চিমবঙ্গ থেকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার করত। জুন মাসে অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সাইগল হোসেনকে এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার করে সিবিআই।
সিবিআই জানিয়েছে, সাইগল হোসেন তাদের প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। কিন্তু তার ও এনামুলের মধ্যে অনেকবার ফোনে কথা হয়েছে। আর এ ফোন রেকর্ডগুলো থেকেই প্রমাণ মিলেছে অনুব্রত মণ্ডল এনামুল হকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতেন।
সূত্র: জন ভারত টাইমস, ও এএনআই