নিজস্ব রূপে ফিরেছে সুন্দরবন
দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে সব ধরনের জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালী ও পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। ফলে বন্য প্রাণীরা অবাধ বিচরণ করতে শুরু করেছে সুন্দরবনে।
মূলত সুন্দরবনে মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দে বনের গহীনে বিচরণ করে বন্যপ্রাণীরা। তবে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমানে বন্য প্রাণীরা চলে আসছে নদী ও খালের পাড়সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
সুন্দরবনের কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের স্টেশন অফিসার (এসও) জহিরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, তবে বর্তমানে বন্যপ্রাণীদের নদী ও খালের পাড়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে কেউ প্রবেশ করতে পারছে না। এতে মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দ বন্যপ্রাণীদের কানে যাচ্ছে না। তারা এখন অবাধ বিচরণ করে বেড়াচ্ছে।'
করমজল বণ্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন, 'চলমান নিষেধাজ্ঞার কারণে বনে মানুষের পদচারণা ও পরিবেশ নৌযানের বিকট শব্দ নেই। শুনশান নীরবতায় বনের প্রকৃতিতে ভিন্ন রূপের সৃষ্টি হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে সুন্দরবন তার নিজস্ব রূপে ফিরেছে।'
সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, 'বর্ষা মৌসুমে সুন্দরবনের অধিকাংশ প্রাণীর প্রজনন হয়। এই সময়ে যাতে বন্যপ্রাণীদের কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য সবাইকে প্রবেশে নিষেদ্ধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।'
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে সম্পদ আহরণের জন্য বর্তমানে ১২ হাজার নৌকা ও ট্রলারকে বোর্ড লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) দেওয়া হয়েছে। এসব নৌযানের মাধ্যমে প্রতি বছর এক থেকে দেড় লাখ জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালী সুন্দরবনের সম্পদ আহরণ করেন। এছাড়া সুন্দরবনের ৭টি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে প্রতি বছর আড়াই লাখের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহাফুজুর রহমান মুকুল বলেন, 'সুন্দরবনে একদিকে প্রতিবছর বনজীবীর সংখ্যা বাড়ছে, অপরদিকে বনের সম্পদ কমছে। বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে বন সুরক্ষার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান করলে সুন্দরবন আরও বেশি সুরক্ষিত থাকত।'
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলছেন, 'নিয়মতান্ত্রিকভাবে বন থেকে সম্পদ আহরণ না করা হলে স্বাভাবিক ইকোসিস্টেমের (বাস্তুতন্ত্র) ক্ষতি হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'রাজস্ব নিয়ে বনজীবীদের সম্পদ আহরণের অনুমতি দেওয়া হয়। সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আসছে—এই চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে। বিরক্ত না করে বনটাকে বনের মতো থাকতে দিতে হবে। তাহলে সেখানের ইকোসিস্টেমের কোনো ক্ষতি হবে না।'
তবে ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, 'পুরো সুন্দরবনটাই সংরক্ষিত, পূর্ব-অনুমতি ছাড়া যে-কেউ চাইলে সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ স্থান অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে কোনো জেলে, বাওয়ালী বা বনজীবী প্রবেশ করতে পারে না। ভবিষ্যতে আরও এলাকায় অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে।'