বার্ল জাদুতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জিম্বাবুয়ের ঐতিহাসিক জয়
গত মাসেই ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দাপুটে ক্রিকেট খেলে জিম্বাবুয়ে। টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা দলটি ৯ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে জেতে। প্রথম দুই ম্যাচ দিয়ে জিতে নেয় সিরিজও। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে যে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, তা আরও ভালো করে বোঝা গেল এবার। রায়ান বার্লের জাদকরী বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে।
শনিবার সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে টাউন্সভিলে অস্ট্রেলিয়াকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। সিরিজ হারলেও ঐতিহাসিক জয়ে শেষ হলো তাদের। যেকোনো ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জিম্বাবুয়ের এটা প্রথম জয়। ৩৩ ওয়ানডে খেলে অজিদের তৃতীয়বারের মতো হারালো তারা। সব ফরম্যাট মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটা জিম্বাবুয়ের চতুর্থ জয়। ওয়ানডের বাইরে একটি টি-টোয়েন্টিতে অজিদের বিপক্ষে জয় আছে তাদের।
ঐতিহাসিক জয়ের ভিত গড়ে দেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা। বিশেষ করে লেগ স্পিনার রায়ান বার্ল ছিলেন জাদুকরের ভূমিকায়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের হয়ে রেকর্ড বোলিং করা বার্লের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেননি স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা। ৩ ওভারে মাত্র ১০ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। ডেভিড ওয়ার্নার ৯৪ রান করার পরও ৩১ ওভারে ১৪১ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। এদিন অস্ট্রেলিয়ার আর মাত্র একজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন। বাকিদের মধ্যে কেউ ৫ রানের সীমানাও ছাড়াতে পারেননি।
ছোট লক্ষ্য হলেও জিম্বাবুয়ের জন্য কাজটা সহজ হয়নি। মোটামুটি ভালো শুরু পাওয়ার পরও অজি পেসার জশ হ্যাজলউডের তোপে দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা। দিক হারালেও অবশ্য দলকে লক্ষ্যে নিয়ে যান অধিনায়ক রেজিস চাকাভা। ৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ১১ ওভার হাতে রেখেই দলকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন তিনি।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান যোগ করেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার তাকুডওয়ানশে কাইটানো ও টাডিওয়ানশে মারুমানি। ১৯ রান করা কাইটানোকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন হ্যাজলউড। এরপর অজি এই পেসারের তোপে দ্রুত আরও ২ উইকেট হারায় তারা। হ্যাজলউডের তোপে ওয়েসলে মাধেবেরে ও শন উইলিয়ামস উইকেটে দাঁড়াতেই পারেননি।
এক পাশ সামলে লড়াই করতে থাকা মারুমানির সঙ্গে যোগ দেন জিম্বাবুয়ের অন্যতম ব্যাটিং অস্ত্র হয়ে ওঠা সিকান্দার রাজা। যদিও এই জুটিও বড় হয়নি। ৮ রান করেই বিদায় নেন রাজা। এর কিছুক্ষণ পর ৪৭ বলে ৪টি চারে ৩৫ রান করা মারুমানি বিদায় নিলে চাপ আরও বাড়ে জিম্বাবুয়ের।
সেখান থেকে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক চাকাভা। তাকে সঙ্গ দেন টিন মুনইয়োঙ্গা ও ম্যাচসেরা বার্লও। মুনইয়োঙ্গা ১৭ ও বার্ল ১১ রান করেন। ৭২ বলে ৩টি চারে ইনিংস সেরা ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন চাকাভা। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন হ্যাজলউড। একটি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক, ক্যামেরন গ্রিন, মার্কাস স্টয়নিস ও অ্যাশটন অ্যাগার।
এর আগে ব্যাটিং করা অস্ট্রেলিয়া ১৯ রানে প্রথম উইকেট হারায়, ৫ রান করে বিদায় নেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। এরপর তাদের উইকেট বৃষ্টি শুরু হয়। একে একে ফিরে যান স্টিভ স্মিথ, অ্যালেক্স ক্যারি, মার্কাস স্টয়নিসরা। অজিদের প্রথম চার উইকেট তুলে নেন জিম্বাবুয়ের পেসাররা। অজিদের পঞ্চম উইকেট ভাঙেন শন উইলিয়ামস।
৭৫ রানেই ৫ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার এরপর বার্লের ঘূর্ণিতে পড়ে। শেষের ৫ উইকেটই তুলে নেন জিম্বাবুয়ের এই অলরাউন্ডার। ভাঙনের সুরের মাঝেও ৯৬ বলে ১৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন ওয়ার্নার। এ ছাড়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ১৭ রান করেন। বাকিদের কেউ-ই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পাররেননি। মাত্র ৩ ওভার হাত ঘুরিয়েই ১০ রানে ৫ উইকেট নেন বার্ল, যা তার ওয়ানডের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
কেবল বার্লের নিজেরই নয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই জিম্বাবুয়ের সেরা বোলিং এটা। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে এটা জিম্বাবুয়ের সপ্তম সেরা বোলিং এবং বিদেশের মাটিতে তৃতীয়। বার্লের নায়ক হওয়ার ম্যাচে ২ উইকেট নেন ব্র্যাড ইভান্স। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নেন রিচার্ড এনগারাভা, ভিক্টর নিয়াউচি ও শন উইলিয়ামস।