মার্কিন মুল্লুকের ম্যাড, ভারতের দিওয়ানা হারিয়ে গেছে, আমাদের উন্মাদ এখনও আছে!
মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের (এমসিইউ) জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্রগুলোর মূল উৎস কিন্তু কমিকস। কার্টুনিস্টদের খেরোখাতা থেকে উঠে আসা কার্টুনগুলো এখন 'প্রাণ' লাভ করেছে বললে ভুল হবে, এগুলোর প্রাণ আগে থেকেই ছিল। অনেক ক্ষেত্রে কাগজে আঁকা কার্টুনের প্রাণচাঞ্চল্য এত বেশি ছিল; এখনকার দর্শকপ্রিয় কার্টুন, অ্যানিমেগুলোর সঙ্গেও সেগুলো অনায়াসে টক্কর দিতে পারবে। ইন্টারনেটের এ যুগে ডার্ক হিউমারও বেশ দেখা যায়। প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে, বিদ্যমান ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে তৈরি করা এসব কৌতুক, মিম, কমিক স্ট্রিপগুলো আবার দর্শক ও মাধ্যমভেদে আলাদা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিট-এ গেলে যে মাত্রার ডার্ক হিউমার দেখতে পাওয়া যাবে, সেটা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের কোনো একটা ফেইসবুক কৌতুকের গ্রুপে দেখা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট কমিকের সগর্ব যাত্রা শুরু ম্যাড ম্যাগাজিনের হাত ধরে, সেই ১৯৫২ সালে। ম্যাড-এর জন্মের পাক্কা একযুগ পরে ভারতে সূচনা ঘটলো দিওয়ানা নামক আরেকটি সমধর্মী ম্যাগাজিনের। বাংলাদেশে আহসান হাবীব ১৯৭৮ সালে উন্মাদ ম্যাগাজিন চালু করেন। ভারত ও বাংলাদেশের উভয় ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে মার্কিন ম্যাড ছিল পথিকৃৎ। তার থেকেই আইডিয়া নিয়েই এ ম্যাগাজিনগুলো দেশীয় আবহে হিউমার প্রকাশ করতে শুরু করে। উন্মাদের নামের ভেতরেই 'ম্যাড' চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। ম্যাড আর দিওয়ানা বন্ধ হয়ে গেলেও উন্মাদ কিন্তু এখনো দিব্যি টিকে আছে।
'ম্যাড'নেস
ইসি কমিকস-এর প্রকাশক ১৯৫২ সালে তার স্টাফ কনট্রিবিউটর হার্ভে কার্টজম্যানকে একটি হিউমার টাইটেল চালু করার পরামর্শ দেন। এভাবেই যাত্রা শুরু হয় ম্যাড-এর। প্রথমে কমিক বুক, পরে ম্যাগাজিনে পরিণত হয় এটি। ম্যাড-এর প্রথম সংখ্যার শিরোনাম ছিল 'টেইলস সার্কুলেটেডে টু ড্রাইভ ইউ ক্রেজি'।
হার্ভে কার্টজম্যান ম্যাড-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। সিরিয়াস জিনিসপত্র নিয়ে মজা করাটা সমীচীন মনে না হলেও ম্যাড সেই ঘরানাটাই শুরু করলো। কৌতুকের ক্ষেত্রে এ ধরনের হিউমারের একটি নামও আছে ইংরেজিতে, 'এরেভেরেন্ট হিউমার'। ম্যাড-এর একটি প্রোটাগনিস্ট ম্যাসকট ছিল। নর্মান মিংগো'র আঁকা আলফ্রেড ই. নিউম্যান নামক ওই চরিত্রের রাজ্যের কাণ্ডকারখানা ছিল পাঠকদের বিনোদনের উৎস। তার ফোকলা দাঁত, চিতি পড়া মুখ প্রতিটি ম্যাড-পাঠকের কাছে অতি পরিচিত। ম্যাড-এর জনপ্রিয়তা যুক্তরাষ্ট্রে এতই ছিল যে, ম্যাড না পড়লেও নিউম্যানকে অনেকেই চিনতে পারত। ঠিক যেমনটা এ সময়ে আমরা অনেকে ভারতীয় অনেক সিরিয়াল না দেখলেও সেগুলোর জনপ্রিয় অনেক চরিত্রকে দেখলে বা এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে পর্দার নাম শুনলে চিনতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারকালচার আন্দোলনের অন্যতম কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে ম্যাড। ১৯৭০'র দশকের প্রথম দিকে ম্যাড-এর সার্কুলেশন ছাড়ায় ২০ লাখের বেশি। পপকালচারের বিখ্যাত সব চরিত্র, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপহাস করা; ম্যাগাজিনটির এসব কাজকারবারেই মজেছিল দর্শক। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ওয়াটারগেট থেকে শুরু করে র্যাম্বো; কেউই নিস্তার পায়নি আলফ্রেড নিউম্যানের 'ম্যাডনেস' থেকে।
২০ শতকের শেষে এসে ম্যাড-এর জনপ্রিয়তায় ভাটা শুরু পড়তে শুরু করে। ইন্টারনেটের কল্যাণে হিউমারের উৎস বেড়ে যায়। ম্যাগাজিনের স্যাটায়ারের উপস্থিতি দ্য নেকেড গান-এর মতো সিনেমা ও স্যাটারডে নাইট লাইভ-এর মতো শোতেও দেখা যেতে শুরু করে। দি অনিয়নের মতো অনলাইন স্যাটায়ার মাধ্যমের জন্ম হয়। এসবের মাঝে ক্রমশ সার্কুলেশন হারাতে শুরু করে ম্যাড।
৬৭ বছর পর ২০১৯ সালে ম্যাড ম্যাগাজিনের প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। নিউজস্ট্যান্ডের বদলে এটিকে কমিক বইয়ের দোকানে ও গ্রাহকের কাছে সরাসরি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে সেগুলোও নতুন কিছু নয়, পুরনো লেখা, কার্টুনগুলোই নতুন করে ছাপানো হবে বলে জানানো হয়।
দিওয়ানা ভারত
১৯৬৪ সালে ভারতীয় পাঠকদের রসের সাগরে হাবুডুবু খাওয়াতে আগমন ঘটে দিওয়ানা'র। ম্যাড-এর অনুকরণে এটিরও চিলি নামক নিজস্ব একটি ম্যাসকট ছিল। দিল্লির মিডিয়া প্রতিষ্ঠান তেজ থেকে বের হতো দিওয়ানা, হিন্দি আর ইংরেজি দুই ভাষাতেই। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বাজারে এসেছিল ম্যাগাজিনটি।
প্রথমে হিন্দি ভাষায় বের হলেও ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে দিওয়ানা'র ইংরেজি সংস্করণও বাজারে আসে। ২০ শতকের মাঝামাঝি থেকে শেষ অব্দি এ ফান ম্যাগাজিনটিতে কার্টুন এঁকেছিলেন ভারতের শ্রেষ্ঠ কার্টুনিস্ট ও আলংকারিকেরা। ১৯৬০-এর দশকে দিওয়ানা যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে, তখন এর সার্কুলেশন ছিল সপ্তায় দুই লাখ। ইংরেজি সংস্করণটির সম্পাদক ছিলেন থিয়েটার পরিচালক সোম বেনেগাল।
দিওয়ানা'র পাশাপাশি ভারতে আরও কিছু সমধর্মী রম্য ম্যাগাজিনও ছিল। ১৯৬৯ সালে বেরোয় লটপট, ১৯৭২ সালে মধু মুসকান। এছাড়া ছিল ওয়াইজক্র্যাক। এগুলোর সবই হিন্দি পপ-কালচারে নিজের ছাপ রেখে গিয়েছে। কিন্তু এ ম্যাগাজিনগুলোর নাম আজকের দিনের মানুষদের কাছে যতটা পরিচিত, দিওয়ানা'র ক্ষেত্রে তা যেন উল্টো। বেশিরভাগ ভারতীয়র বিস্মরণের অন্তরালে ঠাঁই হয়েছে দিওয়ানার। এমনকি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তেজও দিওয়ানা'র কোনো কপি সংরক্ষণ করেনি। ইন্টারনেটেও এ ম্যাগাজিনটি তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায় না।
এখনো চলছে 'উন্মাদ'না
এক সাক্ষাৎকারে আহসান হাবীব জানান, কাজী খালেদ আশরাফ আর ইশতিয়াক হোসেনের সঙ্গে মিলে ১৯৭৮ সাল থেকে উন্মাদ প্রকাশ করতে শুরু করেন তিনি। ম্যাড-এর বাংলা করে উন্মাদ নামটি রাখা হয়। নামের মধ্যে চাতুর্য থাকলেও এর জন্য কিছুটা সমস্যাও পোহাতে হয়েছে উন্মাদকদের। 'গোলমেলে' নামের কারণে বিজ্ঞাপন পেতে কষ্ট হতো, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপন দিতে চাইতো না উন্মাদ-এ।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো নব্বই দশকের পর থেকে নিয়মিতভাবে কার্টুন ও রম্য প্রকাশ করতে শুরু করে। আলপিন, বিচ্ছু, আড্ডা, খবর আছে, থেরাপি, ভিমরুল, দূরবীন, রস+আলো, প্যাঁচআল, ঘোড়ার ডিম এ তালিকায় অন্যতম। তবে এগুলো সবই পত্রিকাগুলোর সাপ্লিমেন্ট হিসেবে প্রকাশিত হতো। সেদিক থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র রম্য ম্যাগাজিন ছিল উন্মাদ।
চলচ্চিত্র প্রযোজক মো. সিফাত হাসান উন্মাদ পড়তেন বেশ ছোটবেলা থেকে। '২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাড়িতে উন্মাদ আসতো। তবে উন্মাদ পড়ার আগে থেকে আলপিন পড়া হতো, রস+আলোও পড়েছি। কিন্তু উন্মাদের প্রতি আলাদা একটা আকর্ষণ সবসময়ই ছিল। উন্মাদের বিশেষত্ব হলো এটি নিজেকে আলাদা একটা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিণত করতে পেরেছিল।'
কাজী সারাহ সাদীয়া নূর দেশের একটি গণমাধ্যমে কাজ করেন। বেশ আগেই উন্মাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তিনি। '১৯৯৪ সালে তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। আমরা মফস্বল শহরে থাকতাম। সেখানে একটা দোকানে উন্মাদ পাওয়া যেত। কখনো মা, কখনো ভাই গিয়ে কিনে আনত। উন্মাদ পড়া হতো পারিবারিকভাবে।'
এক সাক্ষাৎকারে আহসান হাবীব জানিয়েছিলেন, উন্মাদের সর্বোচ্চ সার্কুলেশন ছিল ৩০ হাজার। রম্য, কৌতুক, কমিক স্ট্রিপ এসবই থাকত উন্মাদে। ম্যাড বা দিওয়ানা'র স্থায়ী ম্যাসকট থাকলেও উন্মাদের ক্ষেত্রে সেরকম কিছু ছিল না।
বাংলাদেশের মানুষ রসিক বলেই মানেন আহসান হাবীব। কিন্তু উন্মাদের খোঁচা সহ্য করতে পারেননি অনেকে। আশির দশকে একজন বিচারক উন্মাদের বিরুদ্ধে কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছিলেন। পরে ক্ষমা চেয়ে সেবারের মতো পার পান উন্মাদেকেরা। এছাড়া উন্মাদে সদ্য মুক্তিপাওয়া সিনেমাগুলো নিয়ে ব্যঙ্গ করত। একবার জনৈক পরিচালক ও প্রযোজক তাদের সিনেমার ব্যঙ্গ সহ্য করতে না পেরে উন্মাদে অফিসে সাঙ্গপাঙ্গ পাঠিয়ে হামলা চালিয়েছিলেন।
২০১৮ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আহসান হাবীব বলেছিলেন, রাজনৈতিক স্যাটায়ার বা কার্টুন আঁকা বর্তমানে কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। কার্টুনিস্টরা রাজনৈতিক কার্টুন আঁকলেও সম্পাদকেরা সেটা আর ছাপান না আজকাল।
স্বাধীনতার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছিল জাঁদরেল কিছু কার্টুনিস্ট। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন শৈলনারায়ণ চক্রবর্তী, দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী, কুট্টি, চণ্ডী লাহিড়ী, রেবতীভূষণ ঘোষ, অমল চক্রবর্তী প্রমুখ। তাদের কার্টুন ছাপা হতো ললিতা, প্রবর্তক, সুচিত্রা শিশির ও ভারতবর্ষ ইত্যাদি বাংলা দৈনিক ও সাময়িকীতে। এসব কার্টুনে গান্ধী, নেহরু, জিন্নাহর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যেমন থাকতেন, তেমনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের মতো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বও।
দিওয়ানা'র শিল্প সম্পাদক রমেশ গুপ্ত বলেন, 'হিন্দুস্তানের মানুষদের মনোভাব পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিল; বোধহয় অন্য সমস্যাগুলো তাদের কাছে বেশি প্রকট হয়ে উঠেছিল।' ম্যানোয়া'র হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক লি সিজেল তার 'লাফিং ম্যাটার্স: কমিক ট্র্যাডিশন অভ ইন্ডিয়া' গ্রন্থে দিওয়ানা'র সম্পাদকের মন্তব্য উল্লেখ করেছিলেন। ওই সম্পাদকটি খুব সম্ভবত সোম বেনেগাল ছিলেন বলে মনে করা হয়। সম্পাদক সাহেবের বক্তব্য ছিল: '...সরকার এখন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে, আর তাদের কোনো রসবোধ নেই… আপনি সেন্সরের চোখ এড়িয়ে এক-দুইটা কৌতুক ছাপতে পারবেন। কিন্তু পুরো একটা ম্যাগাজিন চালানো সম্ভব নয়।'
ম্যাড-এর ভেতরে রাজনৈতিক কনটেন্ট থাকত। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে কটাক্ষ করাটাই এর একটা প্রধান কাজ ছিল। উন্মাদও রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে কার্টুন প্রকাশ করত। সারাহ বলেন, 'উন্মাদে পলিটিক্যাল স্যাটায়ার তো ছিলই, সেগুলোকে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা হতো। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক সংকট নিয়েই কার্টুন, লেখা ছাপানো হতো।' সিফাতের অবশ্য তখনো রাজনীতি বোঝার বয়স হয়নি। তিনি বলেন, 'যে বয়সটায় উন্মাদ পড়েছিলাম, তখন তো আমার মধ্যে এ সচেতনতাটা গড়ে ওঠেনি। আমি ওই দৃষ্টিকোণ থেকে উন্মাদেকে কখনো দেখিনি। উন্মাদ আমার কাছে পুরোদস্তুর ফান ম্যাগাজিনই ছিল।'
সারাহ ২০০৬-'০৭ সালের পর উন্মাদ পড়ায় বিরতি নেন। ২০১৩ সালে থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আবার পড়া হয়। মাঝখানে কেন এ বিরতি? 'বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই উন্মাদ তৈরি হতো। কিন্তু একটা সময় মনে হলো, উন্মাদের সেই আগের স্বাদ আর নেই। ২০০৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত উন্মাদ খুব একটা উন্মাদনা তৈরি করতে পারেনি। আবার না পড়তে পড়তে পড়ার অভ্যাসও হারিয়ে যায়,' বলেন তিনি।
ইন্টারনেটের কারণে ম্যাড হারিয়ে গেছে বলেই মনে করা হয়। সমসাময়িক অন্যান্য প্রকাশনী ও ব্যবসায়িক মডেলের পাশাপাশি ম্যাডকে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল পুরো ইন্টারনেটের বিরুদ্ধেও। ভারতে সিনেমা ও টেলিভিশন গণমানুষের কাছে আরও সহজলভ্য হওয়ার পরে দিওয়ানা'র জনপ্রিয়তা কমে যায়। বাংলাদেশেও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষত ফেইসবুকে স্যাটায়ার, কৌতুক, মিম, ডার্ক হিউমার ভূরিভূরি পাওয়া যায়। উন্মাদের উন্মাদনা এখন আর আগের মতো নেই। ব্যস্ততায় বর্তমানে আর উন্মাদ পড়তে পারেন না সিফাত। তিনিও মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য হিউমার-কনটেন্টের প্রাধান্যের কারণে উন্মাদ হয়তো কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। আর আজকাল বাসায় পত্রিকা রাখার রেওয়াজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথাও ইঙ্গিত করেন তিনি।
উন্মাদের শেষ পৃষ্ঠায় ছবির একটি খেলা থাকত। পৃষ্ঠাটিতে একটি ছবি আঁকা ও কিছু নির্দেশ লেখা থাকত। সেই নির্দেশ অনুযায়ী পৃষ্ঠা ভাঁজ করা হলে নতুন একটি ছবি দেখা যেত। খুব ছোটবেলায় এ পাজলেই মজেছিলেন সিফাত। তবে ছবির পাজলের কথা স্পষ্ট করে মনে করতে পারেন না সারাহ। কেবল অল্প-অল্প মনে আছে এটা ছিল একটি থ্রিডি পাজল। তবে কি বয়সভেদে উন্মাদ পাঠকের কাছে পুরোপুরি ভিন্নরূপে হাজির হয়েছিল? হাল আমলের তরুণেরা যেখানে নিত্যনতুন মিমের ট্রেন্ডে গা ভাসাচ্ছে, তাদের কাছে কি উন্মাদ 'বুড়োদের হিউমার' বলে মনে হয় কি না? সিফাতের মতে, উন্মাদের কনটেন্টগুলো বিভিন্ন বয়সের মানুষের বুঝতে পারার মতোই ছিল।
'কার্টুন একটি বড় মাধ্যম; শৈল্পিক আর স্যাটায়ার দুটো দিক থেকেই। একটা কার্টুনে আঁক আর রেখা দিয়ে যতটুকু না বোঝানো যায়; কবিতা, গান, বা গল্পে অনেক সময় অতটা পারা যায় না,' বলেন সারাহ। বাংলাদেশে কার্টুনশিল্পকে প্রতিষ্ঠা করার পেছনের অন্যতম কারিগর আহসান হাবীব। সিফাতের মতো আরও অনেক বাংলাদেশির শৈশব ও কৈশোরকালের বিনোদনের খোরাক জুটিয়েছিল উন্মাদ। ম্যাডকে অনেক গভীরভাবে অনুকরণ করলেও কখনো অন্ধভাবে ম্যাড-এর অনুসরণ করেনি দিওয়ানা বা উন্মাদ। সারাহ মনে করেন, শৈল্পিক অনুকরণের ক্ষেত্রে বাধা থাকা উচিত নয়।
- তথ্যসূত্র: মেন্টাল ফ্লস, নিউ ইয়র্কার, পলিগন, রোলিংস্টোন, স্ক্রল ডটইন, কিশোর আলো, বিবিসি বাংলা, খোলা কাগজ, শিরিষের ডালপালা, উন্মাদ ফেইসবুক পেইজ