বঙ্গবাজার-নাইজেরিয়া: অবৈধ নাইজেরিয়ানরা যেভাবে অবৈধ আরএমজি রপ্তানি ব্যবসা গড়ে তুলেছে
চোখে পড়ার মতো উচ্চতা, অ্যাথলেটিকের মতো স্বাস্থ্য। পরনে হিপ-হপ পোশাক। রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে এরকম ভিনদেশি ক্রেতাদের আনাগোনা এখন নিয়মিত ঘটনা। স্থানীয় ক্রেতাদের ভিড়ে ভিনদেশি এই ক্রেতারা কিছু বিক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছেন।
ঢাকার এই বিখ্যাত মার্কেটের দোকানগুলোর পাশ দিয়ে যখন এই ক্রেতারা হেঁটে যান, তখন স্থানীয় দোকানীরা তাদেরকে ডাকেন, 'আরে বন্ধু! আসো আমার দোকানে।' এই সম্বোধনই স্থানীয় ক্রেতাদের সঙ্গে ভিনদেশি ক্রেতাদের পার্থক্য আরও স্পষ্ট করে তোলে। মূলত বড় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার একটি কৌশলই হলো এভাবে সম্বোধন করা।
এই ক্রেতারা নাইজেরিয়ার নাগরিক। তারা বাংলা শিখেছেন, যাতে ভালোমতো দরকষাকষি করা যায়। স্থানীয় ক্রেতাদের মতো তারা অল্প টাকার কাপড় কেনেন না। সরাসরি নাইজেরিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্যে মোটা অঙ্কের মালামাল কেনেন তারা।
এক সূত্রে জানা গেছে, নাইজেরিয়ার ক্রেতারা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার গার্মেন্টস পণ্য নাইজেরিয়ায় পাঠান। বঙ্গবাজার ছাড়াও তারা মিরপুর, উত্তরা ও আশুলিয়া থেকে পোশাক কেনেন।
বঙ্গবাজারের কয়েকজন দোকান মালিক জানান, নাইজেরিয়ার ক্রেতারা তাদের কাছে 'বিশেষ ক্রেতা'। এক দশক আগেও বঙ্গবাজার ছিল শুধু স্থানীয় নিম্ন, নিম্নমধ্য ও মধ্যবিত্তদের পোশাকের বাজার। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই 'সস্তা' পোশাকের বাজারই নাইজেরিয়ানদের আমদানি গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক জাফর আহমেদ তালুকদার জানালেন, 'নাইজেরিয়ানরা স্টক লট কেনে। যেমন, ছোট ব্যবসায়ীরা ১০০ থেকে ১ হাজার পিস গার্মেন্টস পণ্য কেনেন, কিন্তু বড় ব্যবসায়ীরা কেনেন ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার পিস। তাদের ক্রয়ক্ষমতা যা-ই হোক না কেন, তারা নগদ টাকায় কিনে নেন। বাকি রাখেন না।'
করোনার সময় যখন স্বাভাবিক বেচাকেনা বন্ধ ছিল, তখন নাইজেরিয়ানরা বিকল্প উপায় বের করে কেনাকাটা চালিয়ে গেছেন বলে জানান তিনি।
বঙ্গবাজার থেকে বিশেষ এই ক্রেতারা কী কী পণ্য কেনেন? রঙিন টি-শার্ট, হাফ-হাতা সুতির শার্ট, ডেনিম ট্রাউজার, বয়স্কদের জন্য বক্সার প্যান্ট এবং ৩ থেকে ৭ বছর বয়সী বাচ্চাদের পোশাকসহ অন্যান্য আরও বেশ কিছু আইটেম তারা কেনেন।
বাংলাদেশে নাইজেরিয়ানদের ভালো জীবন
বছরের পর বছর ধরে, নাইজেরিয়ান ক্রেতারা স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মিলে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। এই নেটওয়ার্কের মধ্যে আছেন দোকানদার, মালবাহক ও সিএনজি চালক, যারা তাদের ঢাকার কিছু এলাকার 'গোপন' গুদামে স্টক লট (পোশাক) পরিবহনে সহায়তা করে। স্টেকহোল্ডাররাও চেষ্টা করেন এই বিদেশিদের যেন বাইরের ঝামেলা পোহাতে না হয়।
তবে সম্প্রতি ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় দুই নাইজেরিয়ানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় এই প্রতিবেদকের।
তায়ো (ছদ্মনাম) ২০১২ সালে বাংলাদেশের ফুটবল ক্লাবে খেলার সুযোগ করে নিতে বাংলাদেশে পাড়ি জমান। ১৫ বছর বয়স থেকেই তিনি পেশাদার ফুটবলার খেলছেন। একটি নরওয়েজিয়ান ক্লাবেও খেলেছেন। তায়ো যখন বুঝতে পারলেন, নরওয়েজিয়ান ক্লাবের সতীর্থদের চেয়ে তিনি বয়সে বড় হয়ে যাচ্ছেন, তখন বাংলাদেশে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তায়ো ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলা এবং একাডেমিক ক্যারিয়ার চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তায়ো ঢাকায় বসবাসরত আরও কয়েকজন নাইজেরিয়ানদের দ্বারা পরিচালিত গার্মেন্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
ব্যবসা কীভাবে চলে?—এ প্রশ্নের জবাবে তায়ো বলেন, 'বঙ্গবাজারের মতো ঢাকার অন্যান্য বাজার থেকে ১৫০ টাকায় একটি টি-শার্ট কিনে সেটি প্যাকেট করে পাঠানো হয় নাইজেরিয়ায়। সেই টি-শার্ট নাইজেরিয়ান আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করা হয় ৩০০ টাকায়, যা নাইজেরিয়ান মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ নাইরা। এখানে ট্রান্সশিপমেন্ট খরচও অনেক কম। যত বেশি পণ্য সংগ্রহ করবেন, তত বেশি মুনাফা করতে পারবেন।'
আরেক নাইজেরিয়ান ব্যবসায়ী এডি (ছদ্মনাম) তায়োর দুই বছর আগে বাংলাদেশে এসেছেন। এডি বলেন, একটি ৬০ কেজির পার্সেলের (প্রায় ৩০০ পিস এক্সট্রা লার্জ টি-শার্ট) ট্রান্সশিপমেন্ট খরচ মাত্র ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। সামুদ্রিক মালবাহী জাহাজে এ পার্সেল নাইজেরিয়া পৌঁছাতে সময় লাগে অন্তত তিন মাস।
মোটামুটি হিসাব থেকে বোঝা যায়, একজন নাইজেরিয়ান ক্রেতা নাইজেরিয়ার একজন আমদানিকারকের কাছে মাত্র ৩০০ পিস টি-শার্ট বিক্রি করে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা আয় করেন। তবে লাভের মার্জিন নির্ভর করে তারা বাংলাদেশি মধ্যস্বত্বভোগীদের কত দ্রুত এবং কী পরিমাণ টাকা দেন, তার ওপর।
তায়ো ও এডি দুজনেই একমত যে, 'এটা ভালো ব্যবসা।'
তায়ো ও এডি দুজনেই খ্রিষ্টান। তারা এখন নাইজেরিয়ায় ফিরতে চান না, কারণ বতর্মানে দেশটির শাসনক্ষমতায় আছেন মুসলিম রাজনীতিবিদরা। আর কট্টরপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামকে নিয়েও ভয় আছে।
তারা জানান, 'ধর্মীয় কারণ ছাড়াও আরও সমস্যা আছে। ওখানে তীব্র বিদ্যুতের সংকট। প্রত্যেক পরিবারে একটা করে পাওয়ার জেনারেটর আছে। শিল্প চালাতে ব্যয়বহুল জ্বালানি ব্যবহার করতে হয়। আর রাজনীতিবিদরা খুবই দুর্নীতিগ্রস্ত। আপনি ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারবেন না। লাখ লাখ টাকা থাকলেও স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে পারবেন না।'
একটি ক্রমবর্ধমান অবৈধ ব্যবসা
নাইজেরিয়ায় পাঠানো স্টক লটের প্রকৃত পরিমাণ জানা সম্ভব নয়। সরকারি অনুমোদন ও বৈধ নথিপত্র ছাড়া বিদেশিরা দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করতে পারেন না। কিন্তু টিবিএসের সঙ্গে কথা বলা কোনো নাইজেরিয়ানেরই আইনি কাগজপত্র নেই।
তার ওপর নাইজেরিয়ান সরকারের বিধিনিষেধের কারণে সে দেশের আমদানিকারকরা টেলিগ্রাফিক লেনদেন বা ওভারসিস ওয়্যার লেনদেন করতে পারেন না। এতে খরচ হয় ১০ হাজার ডলারের বেশি। মূলত এসব বাধা-বিপত্তিই বৈধ উপায়ে নাইজেরিয়ায় রপ্তানির সুযোগকে সীমাবদ্ধ করেছে।
তাহলে তারা কীভাবে পণ্য বিদেশে পাঠান? একজন ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএনএফ) এজেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করেছেন।
এই এজেন্ট ঢাকা ও চট্টগ্রামে তার অফিস পরিচালনা করেন। তিনি জানান, নাইজেরিয়ান ক্রেতারা কার্গো ট্রাকে করে স্টক লট সিএনএফ এজেন্টের গুদামে নিয়ে আসেন। এজেন্ট পণ্যের ছাড়পত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং ও কাস্টমস নথি 'ম্যানেজ' করে দেয়। এরপর চালানটি নাইজেরিয়ার বন্দরে পাঠানো হয়।
'যেমন, ৪০ ফুটের একটি কন্টেইনারে ১ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য ধরে। সেখানে ১০ হাজার ডলারের নথিভুক্ত পণ্য থাকে। আর বাকি অংশটুকু স্টক লট দিয়ে পূরণ করা হয়,' বলেন সিএনএফ এজেন্ট।
নাইজেরিয়ার আমদানিকারকদের বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার আগে এলসি লাগে না। তাই কাস্টমস ডিক্লারেশন মিথ্যা হলেও তারা বাংলাদেশি চালান খালাস করতে পারে।
'এখানে কোনো ব্যবসায়িক ঝুঁকি নেই। গার্মেন্টস সরবরাহকারীসহ সিএনএফ এজেন্টসহ অন্যান্য সাহায্যকারীরা নগদ টাকা পান,' বলেন এজেন্ট।
নাইজেরিয়ানরা টাকার ব্যবস্থা করেন কীভাবে?
পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য জানান, নাইজেরিয়ানরা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মতো কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার ডিভাইসের মাধ্যমে অগ্রিম টাকা সংগ্রহ করেন। 'এছাড়া দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে সক্রিয় হুন্ডি নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও টাকা আসে,' বলেন তিনি।
সম্ভাবনা থাকলেও কাজে লাগানো হচ্ছে না
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি)-এর ২০২১-২২ অর্থবছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে নাইজেরিয়ায় ৪৪ লাখ ডলার মূল্যের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৯.১৯ লাখ ডলার।
ইউএন কমট্রেড-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাইজেরিয়া ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ১০৩.৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক পণ্য আমদানি করেছে। অথচ পাঁচ বছর আগেও দেশটির পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আরএমজি রপ্তানিকারক হওয়া সত্ত্বেও দ্রুত বর্ধনশীল নাইজেরিয়ার বাজারের সামান্য অংশই ধরতে পেরেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা নাইজেরিয়ার পোশাক বাজারের খুব ছোট অংশ ধরতে পেরেছে।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে নাইজেরিয়ার স্টক লট আমদানি মূল্য মাত্র ১.৬ মিলিয়ন ডলার। ছোট ছোট কিছু আরএমজি কারখানার মালিক এই বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে। তবে বিজিএমইএ সদস্যরা এই বাজার টার্গেট করছে না। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকার বাজারে বড় সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে।'
ভয় ও সতর্কতা
আপনি যদি বঙ্গবাজারে কোনো নাইজেরিয়ানকে দেখেন, তাহলে দেখবেন বিদেশি এই ক্রেতা সাবধানে কাপড়ের টুকরোগুলো পরীক্ষা করছেন। এমন নয় যে পোশাকে ত্রুটি থাকলে তারা কিনবেন না। আরএমজি কারখানা থেকে বাতিল কাপড় কিনতেই তো তারা এই বাজারে আসেন। আসলে দর কষাকষির জন্য তারা জামাকাপড় যত্ন সহকারে পরীক্ষা করেন।
এরকম সময়ে তারা সাধারণত অন্য কারও কথায় মনোযোগ দেন না। এর ওপর আপনি যদি সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন, তবে তারা আরও কথা বলতে চাইবে না। বঙ্গবাজারের দোকান মালিক মুসা মিয়া বলেন, 'তারা অপরিচিতদের ভয় পায়। কারণ বৈধ ভিসা ছাড়াই তারা ঢাকায় থাকছে ।'
কৌতূহলী মানুষ দেখলে তারা ভয় পায়, কারণ বাংলাদেশে অবৈধ আফ্রিকানদের সাইবার অপরাধ, স্ক্যাম, মাদকদ্রব্য ও যৌন ব্যবসার মতো নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন সম্পর্কে তারা অবগত।
বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ২০০ নাইজেরিয়ান আছেন। তাদের মধ্যে বৈধ ভিসা আছে মাত্র ৩৮ জনের।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাইজেরিয়ানরা স্পোর্টস ও বিজনেস ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। ভারতীয় সীমান্ত দিয়েও নাইজেরিয়ানদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া আসল পরিচয় গোপন করতে ইচ্ছাকৃতভাবে তারা পাসপোর্টও নষ্ট করেন। মাঝে মাঝে সীমান্তরক্ষীদের হাতেও ধরা পড়েন তারা।
ভারতের নর্থইস্ট নাও নিউজ পোর্টাল জানিয়েছে, চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর কোনাবান সীমান্তরেখা দিয়ে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে ত্রিপুরা পুলিশ তিন নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করে।
গত বছরের ৮ জুলাই ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের অভিযোগে সিলেটে এক শিশুসহ তিন নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়। নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, তানজানিয়া, ঘানা, আলজেরিয়া, মালি এবং কেনিয়াসহ নয়টি আফ্রিকান দেশের শতাধিক মানুষ এখন বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, দারিদ্র্যপীড়িত আফ্রিকান দেশ থেকে আসা ব্যক্তিরা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশকে নিরাপদ বলে মনে করে।
বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম বলেন, 'আফ্রিকান বংশোদ্ভূত অপরাধীরা বেশিরভাগই নাইজেরিয়ার। সামগ্রিকভাবে পুলিশ তাদের "নাইজেরিয়ান প্রতারক" বলে। তারা আরএমজি মার্চেন্ডাইজারের ছদ্মবেশে সাইবার অপরাধ করছে।'
স্থানীয় যেসব আরএমজি সরবরাহকারী নাইজেরিয়ানদের সঙ্গে নিয়মিত লেনদেন করে, তাদের দাবি, কেনিয়া, উগান্ডা, ঘানা, ক্যামেরুন ও অন্যান্য আফ্রিকান দেশ থেকে আসা বাংলাদেশে বসবাসকারীরাই আসলে নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। কিন্তু তারা নিজেদের নাইজেরিয়ান বলে পরিচয় দেয়।
প্রায়ই নাইজেরিয়ান চালান ফরোয়ার্ড করেন এমন একজন সিএনএফ এজেন্ট জানান, 'তারা বাংলাদেশে নাইজেরিয়ান ক্রেতাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সেজন্য নাইজেরিয়ানরাও তাদের ব্যবসা বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের মতো অন্য আরএমজি উৎপাদনকারী দেশে স্থানান্তর করছে।'
ব্যবসার ভবিষ্যৎ
টিবিএসের সঙ্গে কথা বলা দুই নাইজেরিয়ান জানান, নাইজেরিয়ান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ওয়ার্ক পারমিট ও প্রাইভেট ইনভেস্টর (পিআই) ভিসা পায়, তাহলে তারা কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাংলাদেশের সঙ্গে আরএমজি ব্যবসা করতে পারবে।
সমস্যা হলো বাংলাদেশে নাইজেরিয়ার কোনো দূতাবাস নেই। ভারতে নাইজেরিয়ার দূতাবাস আছে; সে কারণেই নাইজেরিয়ানরা প্রথমে ভারতে আসে এবং তারপর বাংলাদেশে প্রবেশ করে বলে জানান তারা।
পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মকর্তা সম্প্রতি ইঙ্গিত দেন, বাংলাদেশে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড নেই এমন কয়েকজন নাইজেরিয়ান ক্রেতাকে ভিসা দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
ভিসা ইস্যু দেখা তার দায়িত্ব নয় মন্তব্য করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে পোশাক ব্যবসা বাড়ানোর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
'ইউরোপীয় ক্রেতাদের প্রত্যাখ্যান করা গার্মেন্টস পণ্য বাংলাদেশে নাইজেরিয়ায় রপ্তানি করতে পারে না, কারণ দেশটিতে ইউরোপীয় আমদানিকারকরা তাদের নিজস্ব আউটলেট চালায়,' বলেন তিনি। নাইজেরিয়ার স্টক লটের ক্রেতাদের জন্য সাশ্রয়ী একটি বাংলাদেশি ব্র্যান্ড থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইপিবি এ বিষয়ে নাইজেরিয়ার আমদানিকারকদের পাশাপাশি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করছে।
মাহবুবুর বলেন, 'কোভিড মহামারির কারণে আলোচনা স্থগিত ছিল। তবে আমরা আবার আলোচনা শুরু করেছি।'