অস্থির আদার বাজার, আমদানি কমে আসায় দাম বেড়েছে ৫০%
আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বেশি থাকায় লোকসানের ভয়ে আদার আমদানি কমিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এতে গত কয়েকদিনে আদার দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে বর্তমানে প্রতি কেজি চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। যা গত দশদিন আগে ১০০ টাকার নিচে বিক্রি হয়েছে।
বর্তমানে বাজারে থাকা আদার মধ্যে ৯০ শতাংশই চীন থেকে আমদানি করা। মিয়ানমারের অল্প পরিমাণ বাজারে রয়েছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে নতুন মৌসুমের দেশি আদা বাজারে আসছে।
এরমধ্যে মিয়ানমারের আদা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। নতুন মৌসুমের দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে।
দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে খাতুনগঞ্জের কাঁচা মসলা পণ্য ব্যবসায়ী মেসার্স আজমির ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নেওয়াজ মোরশেদ বলেন, "বাজারে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আদার সরবরাহ কম রয়েছে। নতুন মৌসুমের দেশি আদা আসতে শুরু হয়েছে মাত্র। এতদিন আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল আদার পুরো চাহিদা।"
"কিন্তু গত দুই-তিন মাস আদা আমদানিকারকরা বেশি লোকসান করেছে। এতে পণ্যটির আমদানি কমে সরবরাহ সংকটে দাম বেড়ে চলেছে," যোগ করেন তিনি।
মসলা পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মক্কা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী জোনায়েদুল হক বলেন, "কাঁচা মসলা পণ্য আমদানি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে বিশ্ববাজারে বুকিং দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে মসলা পণ্য আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিন দিতে হচ্ছে। এসব মিলে আমদানি খরচ খুব বেড়ে গেছে।"
লোকসানের কারণ সম্পর্কে এই আমদানিকারক বলেন, "আমদানি খরচ বৃদ্ধির পরও ব্যবসায়ীরা পণ্যটির আমদানি অব্যাহত রেখেছিল। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে মসলা পণ্য আদার চাহিদা কিছুটা কমে। এছাড়া গত দুই-তিন মাস ধরে চীন থেকে আমদানি করা আদাগুলোর কোয়ালিটি খারাপ ছিল। যেই কারণে বিক্রির ধীরগতি ও কোয়ালিটি খারাপ থাকায় বেশিরভাগ আদা নষ্ট হয়ে আমদানিকারকরা লোকসানে পড়ে।"
"এরপর লোকসানের ঝঁকিতে পণ্যটির আমদানি কমিয়ে দিলে গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। এরমধ্যে গত দশদিনেই পণ্যটির দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে," বলেন তিনি।
হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির (কাঁচা মসলা পণ্য মার্কেট) সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, আমদানি নির্ভরতাই বিভিন্ন সময় মসলা পণ্যের বাজারকে অস্থির করে তুলে। দেশের মোট চাহিদার এক তৃতীয়াংশের কম আদা উৎপাদন হয়ে দেশে। বাকি প্রায় ৭০ শতাংশ আদা আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাতে হয়।
নতুন মৌসুমের আদা বাজারে আসতে শুরু হওয়ায় আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে পণ্যটির দাম কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী প্রতিনিধি।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর আদার চাহিদা প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৮০ হাজার টন।
চাহিদার বাকি আদার বেশিরভাগ আমদানি হয় চীন থেকে। যা মোট আমদানির ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ আদা আসে পার্শবর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে।
দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আদা উৎপাদন হয় তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচা মসলা পণ্যের (পেঁয়াজ, রসুন ও আদা) উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ দেশি মৌসুমের ফলন বাজারে আসলে আমদানি পণ্যের কারণে কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না।
একইভাবে দেশীয় আদার গুণগত মান ভালো হলেও আকারে ছোট হওয়ায় বেশিরভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্ট এমনকি বহু ভোক্তা দেশি আদার চেয়ে চীনা আদা ব্যবহারে আগ্রহী বেশি। এতে কৃষকরা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় বছর বছর উল্লেখযোগ্যহারে উৎপাদন বাড়ে না।
তাদের দাবি, দেশি মৌসুমের সময় মসলা পণ্যের আমদানি কমাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে বাজার স্থিতিশীল করার পাশাপাশি দেশের কৃষকরাও লাভবান হবে, আমদানি ব্যয় সাশ্রয় হবে।
ভর মৌসুমে দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ গাড়ি আদা প্রবেশ করে খাতুনগঞ্জে। তবে নতুন মৌসুম শুরু হওয়ায় গত দুই-তিন ধরে ৫-৭ গাড়ি দেশি আদা বাজারে আসছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ৃ