শান্তিতে নোবেল পেলেন বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী ও রাশিয়া-ইউক্রেনের দুটি মানবাধিকার সংগঠন
চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন বেলারুশের মানবাধিকার কর্মী আলেস বিয়ালিয়াৎস্কি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার দুটি মানবাধিকার সংগঠন।
বিয়ালিয়াৎস্কির সঙ্গে শান্তিতে নোবেল পেয়েছে রাশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল এবং ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা দেয়।
পুরস্কার ঘোষণার সময় বলা হয়, তাদের এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেনে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্য।
এছাড়া নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, এবারের শান্তিতে পুরস্কারজয়ীরা নিজ নিজ দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। তারা দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় কাজ করছেন। এছাড়া ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করার অধিকার রক্ষার জন্যও কাজ করছেন তারা। তারা একত্রে শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য নাগরিক সমাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
আলেস বিয়ালিয়াৎস্কির বিষয়ে বলা হয়েছে, তিনি ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি বেলারুশের গণতন্ত্র আন্দোলনের সূচনাকারীদের একজন। নিজের দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ও এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নে জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি।
এছাড়া বিয়ালিয়াৎস্কি ১৯৯৬ সালে বিতর্কিত সাংবিধানিক সংশোধনীর প্রতিক্রিয়ায় ভিয়াসনা (স্প্রিং) নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালের ওই সংশোধনী প্রেসিডেন্টকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়। ফলে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। জেলে আটক আন্দোলনকারী ও তাদের পরিবারদের সহায়তা দিয়েছে ভিয়াসনা। পরবর্তীতে ভিয়াসনা মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে বিকশিত হয়। সংস্থাটি রাজনৈতিক বন্দীদের ওপর কর্তৃপক্ষের নির্যাতনের রেকর্ড নথিবদ্ধ এবং নির্যাতনের প্রতিবাদ করে।
সরকারি বারবার আলেস বিয়ালিয়াৎস্কিকে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। এরপর ২০২০ সালে সরকারের বিরুদ্ধে বড় আকারের বিক্ষোভের পর তাকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়। বিয়ালিয়াৎস্কিকে এখনও বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে নানা ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও বিলিয়াতস্কি বেলারুশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে বিন্দুমাত্র দমে যাননি।
অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল সম্পর্কে জানানো হয়েছে, সংস্থাটির প্রতিষ্ঠা ১৯৮৭ সালে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মানবাধিকার কর্মীদের হাত ধরে। সাবেক সোভিয়েত শাসকদেরর হাতে নিপীড়নের হওয়া ব্যক্তিদের বিস্মৃত হতে না দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এ সংস্থার পত্তন।
মেমোরিয়ালের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আন্দ্রেই সাখারভ ও মানবাধিকারকর্মী সভেৎলানা গানুশকিনাও ছিলেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মেমোরিয়াল রাশিয়ার বৃহত্তম মানবাধিকার সংস্থায় পরিণত হয়। স্ট্যালিনিস্ট যুগে নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের ওপর নথিপত্রের একটি কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি রাশিয়ায় রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তথ্য সংকলন ও সুসংবদ্ধ করেছে সংস্থাটি।
রাশিয়ান বন্দিশিবিরগুলোতে রাজনৈতিক বন্দিদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া সবচেয়ে প্রামাণিক উৎস হয়ে ওঠে মেমোরিয়াল।
চেচেন যুদ্ধের সময় রুশ ও রুশপন্থী বাহিনী বেসামরিক মানুষের যেসব নির্যাতন ও যুদ্ধাপরাধ করেছে, তার তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করে মেমোরিয়াল। এ কাজের কারণে ২০০৯ সালে মেমোরিয়ালের চেচনিয়া শাখার প্রধান নাতালিয়া এস্তেমিরোভা নিহত হন।
এবারের পুরস্কারজয়ী আরেক মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ সম্পর্কে বলা হয়, সংস্থাটি ২০০৭ সালে কিয়েভে প্রতিষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল, ইউক্রেনে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়া।
ইউক্রেনকে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রে পরিণত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয়ার জন্য অবস্থান নিয়েছে সংগঠনটি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণের ওপর রাশিয়ার চালানো যুদ্ধাপরাধ চিহ্নিত ও নথিভুক্ত করার কাজ করছে।
উল্লেখ্য, গত বছর শান্তিতে নোবেল জেতেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার দুই সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ।
২০২২ সালের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয়েছে গত ৩ অক্টোবর। প্রথমদিন চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল জেতেন সুইডিশ বিজ্ঞানী সাভান্তে প্যাবো। পরদিন মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞানের জেতেন ফ্রান্সের অ্যালাঁ আসপে, যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ ক্লাউসার ও অস্ট্রিয়ার আন্টন জেইলিংগার। বুধবার রসায়নে নোবেল পান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারোলিন আর বার্তোজ্জি, কে ব্যারি শার্পলেস ও ডেনমার্কের মর্টেন মেলডাল। আর বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল জেতেন ফরাসি আনি এর্নো।
১০ অক্টোবর অর্থনীতিতে বিজয়ীর নাম ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হবে এবারের মোট ছয়টি শাখায় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা।
আগামী ডিসেম্বরে সুইডেনের স্টকহোমে নোবেল বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হবে পুরস্কারের পদক, সনদ ও অর্থ।