গ্যাস সংকটে উৎপাদন অর্ধেক, দ্রুত পরিত্রাণ নেই
দিনের বেলায় গ্যাসের প্রেসার ভালোই থাকে, কিন্তু, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বন্ধ রাখতে হয় কারখানা। আর রাতে বিদ্যুৎ ফিরলেও, নেমে যায় গ্যাস প্রবাহের চাপ।
এই পরিস্থিতি চলছে দেশের সিরামিক শিল্পে, যেখানে উৎপাদন ইউনিটগুলি সচল রাখতে ৫০০ থেকে ১৫০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উৎপন্ন করে সিরামিক টাইলস বা ব্রিক তৈরির ক্লে পোড়াতে হয়।
এর চেয়ে ভালো পরিস্থিতি নয়- গ্যাস-নির্ভর স্টিল রিরোলিং মিলসের মতো শিল্পেও। তাদের চুল্লিগুলিতে ৯০০- ২,০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন হলেও, গ্যাসের প্রেসার পাচ্ছে দরকারের চেয়ে ২৫-৫০ শতাংশ কম।
শিল্পটি উৎপাদন অর্ধেকে নামালেও– শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য খরচের ভার ঠিকই ওঠাতে হচ্ছে।
দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত পোশাক। এ শিল্পে ক্যাপটিভ পাওয়ার, বয়লার ও ওয়াশিং প্ল্যান্টের জন্য দরকার হয় গ্যাস। বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুতের দ্বৈত সংকটে পণ্য উৎপাদনের ডেডলাইন পূরণ করতেই হিমশিম খাচ্ছে পোশাক কারখানাগুলি। এই সংকট কতদিন চলবে সে সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই তাদের।
এই পরিস্থিতিতে স্পট মার্কেট থেকে প্রতিমাসে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য ২০০ কোটি ডলার চেয়েছে খাতটি।
গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ-ও। তিনি বলেন, শীত না আসা পর্যন্ত অক্টোবরেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ, চলমান ডলার সংকটের কারণে (স্পট মার্কেট থেকে) গ্যাস আমদানিও করা যাচ্ছে না্।
শিল্প ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস রেশনিং পরিস্থিতির বরাত দিয়ে সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা যতই আশাবাদী হই না কেন, জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হারের দিক থেকে আমরা কমফোর্ট জোনে নেই'। ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের জন্যও এলসি খোলা ও জ্বালানি আমদানির বিল মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
এলএনজির বৈশ্বিক স্পট মার্কেট বা খোলাবাজারে গ্যাসের যোগান থাকলেও, সেখানকার দাম বাংলাদেশের জরুরি চাহিদা মেটানোর পক্ষে খুবই বেশি।
এলএনজি সংকট থেকে মুক্তির লক্ষণ নেই
স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলি থেকে সরবরাহ যখন গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছিল, তখন এলএনজি আমদানির মাধ্যমে সে ঘাটতি পূরণ শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু, করোনার কারণে সরবরাহ সংকটে বৈশ্বিক এলএনজি মূল্য বহুগুণে বেড়ে যায়, পরিস্থিতির আরও অবনতি করে ইউক্রেনে যুদ্ধ।
আমদানি ব্যয় কমাতে সরকার খোলা বাজার (স্পট মার্কেট) থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রাখায় গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় গ্যাস সরবরাহ কমেছে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মিটার ঘনফুট (এমএমসিএফ)। সরকারের নেওয়া এ সিদ্ধান্তে দেশব্যাপী অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
গত জুলাইয়ে এলএনজি কিনতে পেট্রোবাংলার মোট ব্যয় ছিল প্রায় ২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এসময় দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহকারীদের পাশাপাশি স্পট বাজার থেকে আমদানি করা দুটি চালান ডেলিভারি নেয় সরকারি সংস্থাটি।
সে সময়ে জাতীয় গ্রিডে ৫৫০ থেকে ৬০০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহকারী ও স্পট বাজার থেকে মোট ৯টি চালান আমদানি করা হয়।
তবে স্পট মার্কেট আমদানি বন্ধের কারণে মাসিক এলএনজি চালানের সংখ্যা কমে গেলেও আমদানি বিল প্রায় একই রয়ে গেছে।
আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে উভয় মাসেই মোট মাসিক আমদানি ব্যয় ছিল প্রায় ২,৮০০ কোটি টাকা করে; এসময় দীর্ঘমেয়াদী সরবরাহ চুক্তির অধীনে থেকে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়টি চালান আসে দেশে।
পেট্রোবাংলার সূত্র জানায়, এলএনজি আমদানির পরিমাণ কম থাকা সত্ত্বেও এলএনজি আমদানি বিল পরিশোধে প্রতিমাসে ১,০০০ কোটি টাকা নগদ অর্থ ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে কর্পোরেশন।
বর্তমানে, দেশের সর্বোচ্চ গ্যাস চাহিদা দৈনিক প্রায় ৩,৬০০ এমএমসিএফ, যেখানে সরবরাহ মাত্র ২,৬৭৫ এমএমসিএফ। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পসহ সব গ্রাহকই কম সরবরাহের ফলে পাইপলাইনে চাপ কম থাকার ভোগান্তিতে পড়েছে।
বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি মূল্যের অস্থিরতার কালে পেট্রোবাংলা অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে বিদ্যমান ও স্থগিত গ্যাসক্ষেত্রগুলিতে ওয়ার্কওভার এবং গভীর কূপ খনন-সহ বিভিন্ন কাজের পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
তবে স্বল্পমেয়াদে এ উদ্যোগ স্বস্তি ফেরাতে পারছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
বড় বিপদে সিরামিক শিল্প
দেশের বৃহত্তম টাইলস প্রস্তুতকারক– গ্রেটওয়াল সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে মাত্র দুই মাসের মধ্যে তাদের উৎপাদন দৈনিক ৪২ হাজার বর্গফুট থেকে কমিয়ে ২০ হাজার বর্গফুটে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে।
এখন তাদের মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত কারখানাটিতে তিন শিফটের পরিবর্তে এক শিফটে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে কোম্পনিটি।
তিনি উল্লেখ করেন যে, সকাল থেকে ১০-১২ ঘণ্টা গ্যাসের প্রেসার পাওয়া যায়। তবে ওই সময়ে কয়েকবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়।
বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, সিরামিক শিল্পখাতের ২৫টির বেশি বৃহৎ কারখানা তিন মাসের বেশি সময় ধরে তীব্র গ্যাস-সংকটে ভুগছে। ঢাকার সাভার ও ধামরাই; নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জের সিরামিক পণ্য, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার কারখানাগুলোতে দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপ থাকছে না।
বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, সিরামিক পণ্য উৎপাদনে মোট ব্যয়ের ১৫ শতাংশই হয় গ্যাসে। অনিয়মিত গ্যাস সরবরাহের কারণে সময়মতো পণ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো ক্রয়াদেশ বাতিল করছে। স্থানীয় বাজারেও সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
সিরামিক খাতে বর্তমানে ৭০টি প্রতিষ্ঠান আছে। সিরামিক পণ্যের দেশীয় বাজারের আকার প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
আরএকে সিরামিকস এর কোম্পানি সচিব মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান,লোডশেডিংয়ের কারণে ডিজেল দিয়ে নিজস্ব পাওয়ার প্ল্যান্টে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গিয়ে তাদের উৎপাদন খরচ ৩০ শংতাংশ বেড়ে গেছে।
ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে সিরামিকের পণ্য (টেবিলওয়্যার) রপ্তানি করে ফার সিরামিকস। তাদের গাজীপুরের কারখানার দৈনিক উৎপাদনের সক্ষমতা ৩২ হাজার টেবিলওয়্যার। গ্যাস-সংকটের কারণে উৎপাদন ৩৫-৪০ শতাংশ কমে গেছে।
ফার সিরামিকস লিমিটেডের পরিচালক ইরফান উদ্দিন রিফাত বলেন, 'উৎপাদন খরচ বাড়লেও পণ্যের দাম বাড়েনি। তবে কারখানার লোকবল কমাতে পারছি না। কারণ আমাদের ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় সমস্যা, দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায় না'।
'আমরা সরকারের কাছে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে সিরামিক শিল্পে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছি। তবে কারখানাগুলি বিভিন্ন এলাকায় হওয়ার কারণে এটি করা সম্ভব নয়'।
তিনি বলেন, সরকার চাইলে এলাকা-ভিত্তিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে পারে। 'আমরা জানি সরকার এবিষয়ে চেষ্টা করছে'।
উৎপাদন অর্ধেকে নামিয়েছে ইস্পাত কারখানাগুলো
চট্টগ্রাম-ভিত্তিক জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় প্রতিদিন রড উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন। গত দেড় মাস ধরে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ক্রমাগত কমতে থাকে। বর্তমানে জিপিএইচ এর কারাখানায় প্রতিদিন গড়ে ১,৫০০- ২,০০০ হাজার টন রড উৎপাদন হচ্ছে।
উৎপাদন ও বিক্রিতে ধস নামায় বর্তমানে প্রতিমাসে টনপ্রতি ১ থেকে দেড় হাজার টাকা লোকসান দিয়ে রড বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। কারণ উৎপাদন কমে গেলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কর্মীর বেতন ও মজুরিও পরিশোধ করতে হচ্ছে বলে জানান এক কর্মকর্তা।
জিপিএইচ ইস্পাতের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্যাস সংকটে ফলে পাওয়ার প্ল্যান্ট অর্ধেকও চালাতে পারছি না। অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখতে হয়। গত ১ মাস যাবত পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩টি ইঞ্জিনের মধ্যে ২টি ইঞ্জিন কখনো একসাথে চালাতে পারছি না'।
'এক্ষেত্রে আমরা বিপুল আর্থিক লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছি। বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে সময়মতো ব্যাংক ঋণের কিস্তি দেওয়াও দুরুহ হয়ে পড়বে। এর ফলে ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে'।
স্টিল বার প্রস্তুতকারক কেএসআরএম এর কারখানায় দৈনিক উৎপাদন ৮০০- ১,০০০ টনে নেমে এসেছে, যা আগে ছিল ২,০০০ টনের বেশি।
কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্ট এর জেনারেল ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'সকালে গ্যাস প্রেসার কমে যায় প্রায় ৭৫ শতাংশ। কিন্তু, ইস্পাত উৎপাদনে নির্দিষ্ট মাত্রায় তাপ না থাকলে উৎপাদন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়'।
বিএসআরএম- এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেন গুপ্ত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকার জন্য বিকল্প হিসেবে তেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। এজন্য ৩০ শতাংশ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে'।
পোশাক কারখানা থেকে শুরু করে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প – গ্যাস সংকটের কারণে বন্দর নগরীর ছোট বড় প্রায় ১,২০০টি শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকের কম গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে তারা।
ছোট বড় প্রায় ১,২০০টি শিল্প কারখানার অবস্থা একই রকম। চট্টগ্রামের ইস্পাত শিল্প, জাহাজ ভাঙ্গা, পোশাক, সার কারখানা, সিরামিক, স্টিল পণ্যসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কারখানা মালিকরা বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে যে লোকসান হচ্ছে, তাতে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্যই লড়াই করতে হচ্ছে। শুরুতে করোনার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরপর ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণেও ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। গ্যাসের আপদ এই ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রইস উদ্দিন আহমেদ বলেন, চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে আমরা মাত্র ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট বা চাহিদার ৪৪% যোগান দিতে পারছি।
গ্যাস সংকটে প্রভাবিত ইউরিয়া সার উৎপাদন
ইউরিয়া সার কারখানাগুলি পুরোপুরি গ্যাস প্রাপ্তির ওপর নির্ভরশীল। গ্যাস সরবরাহের অভাবে গত জুন থেকেই বন্ধ আছে যমুনা সার কারখানা। গত জুলাই মাসে গ্যাস সংকটে বন্ধ হওয়া অন্যদুটি কারখানা এক মাসের মধ্যেই সচল হয়।
বর্তমানে চট্টগ্রামে গ্যাসের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকা দুটি কারখানা– কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড। রক্ষণাবেক্ষণে থাকায় আপাতত কারখানা দুটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ।
এই দুটি কারখানায় দৈনিক চাহিদা ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। উভয় কারখানা উৎপাদনে ফিরলে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এলএনজি আমদানির তহবিল চায় পোশাক খাত
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এই বছরের ১৮ আগস্ট থেকে নারায়ণগঞ্জের নিটওয়্যার রপ্তানিকারকরা গ্যাস সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন।
ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আগে তারা কারখানায় ৯-১০ পিএসআই গ্যাস প্রেসার পেতেন, যা এখন ১ থেকে ১.১ পিএসআই- এ নেমে এসেছে।
গ্যাস সংকটের কারণে সেপ্টেম্বরে কারখানায় উৎপাদন কমপক্ষে ৪৫% কমে গেছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'সরকার যদি স্পট মার্কেট থেকে প্রায় ৩০০ এমএমসিএফ এলএনজি আমদানির জন্য মাসিক প্রায় ২০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করে, তাহলে রপ্তানি আয় দ্বিগুণ করে পোশাক শিল্প তা ফেরত দিতে পারবে'।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানি শিল্পের উৎপাদন চাহিদা বজায় রাখতে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত এ ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে এলাকাভেদে পোশাক খাতের উৎপাদন ৩০%- ৫০% কমেছে।
অথচ এ শিল্পে বিনিয়োগ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের অতিরিক্ত পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনসুর আহমেদ বলেন, গাজীপুর, শ্রীপুর, ভালুকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ সংকটের কারণে টেক্সটাইল শিল্পের উৎপাদন প্রায় বন্ধ বা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের পোশাক শিল্পে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ ২০ শতাংশ বেড়েছে।
বিজিএমইএ-র সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'গ্যাস সংকটের কারণে চট্টগ্রামের গার্মেন্টসগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের প্রেসার কম থাকায় বয়লার, ওয়াশিং এর কাজে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা খরচ অনেক বেশি'।