জাতীয় নির্বাচনে ৪৫ হাজার কেন্দ্রের সিসি ফুটেজ দেখে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা রক্ষা অকল্পনীয়: সুজন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জালিয়াতি ঠেকাতে হলে কমিশনকে তাদের হাতে থাকা 'নিউক্লিয়ার অপশন' অর্থাৎ নির্বাচন স্থগিত বা নির্বাচন আয়োজনে অস্বীকৃতি জানানো ও নির্বাচনী ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে বলে উল্লেখ করেছে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
শনিবার সুজন আয়োজিত 'কী বার্তা দিল গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন' শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে।
লিখিত বক্তব্যে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গাইবান্ধার উপনির্বাচন কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বয়ে আনল। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকার না চাইলে সামান্য একটি উপনির্বাচনেও কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়।
'এ ক্ষেত্রে তারা তাদের অস্ত্রভান্ডারে থাকা 'নিউক্লিয়ার অপশন' ব্যবহার করে কারচুপির ঘটনা ও বিতর্কিত নির্বাচন ঠেকাতে পারে।'
তবে জনগণের স্বার্থরক্ষায় জাতীয় নির্বাচন স্থগিতের সম্ভাবনা এড়াতে বদিউল আলম নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দেন, সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলকে কমিশন নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা সম্পর্কিত সাংবিধানিক কাঠামোতে পরিবর্তন এনে, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দাবি জানাতে পারে।
একইসঙ্গে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য এই নির্বাচনে দুর্বল ও জালিয়াতির যন্ত্র ইভিএম ব্যবহার থেকে কমিশনকে সরে আসতে হবে, যোগ করেন তিনি।
'তবে আমাদের অতীতের এবং গাইবান্ধার উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতা বলে যে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়।'
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সুজন সম্পাদক বলেন, নির্বাচনকালীন একটি সরকার দরকার আছে। তবে সেটা রাজনৈতিক দল নিজেরা বসেই ঠিক করবে। এজন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত্য এবং সমঝোতা প্রয়োজন।
এদিকে গাইবান্ধা উপনির্বাচনের পর গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে কমিশন কয়েকটি বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ সুজন সম্পাদকের।
'তারা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে, ইভিএম নিয়ে একমাত্র সমস্যা হলো ভোটের গোপন কক্ষে ডাকাতের উপস্থিতি এবং ভোটে কারচুপির মোক্ষম সমাধান হলো ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা।'
কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে যেখানে প্রায় ৪৫ হাজার কেন্দ্র থাকবে এবং নির্বাচনী কক্ষ হবে কয়েক লক্ষ, সেখানে কমিশনের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নির্ধারণ অকল্পনীয়, তিনি যোগ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, সিসি ক্যামেরা কিংবা ইভিএম ব্যবহার করে ৩০০ আসনে সুষ্ঠ ভোট আয়োজন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
গাইবান্ধা-৫ এর উপ-নির্বাচন বন্ধের সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য কমিশনকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি সন্দেহ পোষণ করে বলেন,'অতীতে যেকোনো নির্বাচনের শেষে অনিয়মের অভিযোগ তুললেও কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট সুষ্ঠু হওয়ার দাবি করা হত। এদিকে গাইবান্ধার নির্বাচনে গোপন কক্ষে 'ডাকাত' পড়ার আশঙ্কা এবং সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্ভাব্য অসহযোগিতার ব্যাপার কমিশনের জানার কথা। তাই আগেই ব্যবস্থা না নিয়ে এগুলো ঘটতে দেওয়ার, ডাকাত ধরার এবং সরকারি কর্মকর্তাদের অসহযেগিতা উদ্ঘাটনের জন্য কমিশনের উৎপেতে থাকা সন্দেহজনক।'
এখন দেখার বিষয় কমিশন অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে কিনা, এর মাধ্যমেই তাদের কঠোরতার প্রমাণ পাওয়া যাবে, বলেন বদিউল আলম।