ইত্যাদি পার্টি, মুসকিল লীগ, বৈরাবরী পার্টি- এরকম বাহারি নামে নিবন্ধন পেতে ৮০ দলের আবেদন
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে ৮০টি রাজনৈতিক দল। আবেদন জমা দেয়ার শেষদিন ছিল আজ রবিবার (৩০ অক্টোবর)।
নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কিছু দল গতবারও আবেদন করেছিল; কিন্তু নিবন্ধন পায়নি। এছাড়া, সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দলও রয়েছে।
এবার নিবন্ধনে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আছে- নৈতিক সমাজ, নতুন বাংলা, বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, ইত্যাদি পার্টি, বৈরাবরী পার্টি, সনাতন পার্টি, জাতীয় ইনসাফ পার্টি, ইনভায়রোমেন্ট গ্রিন পার্টি, যুব সমাজ পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি, জনমত পার্টি, জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, আম জনতা পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি, জাস্টিস পার্টি, ন্যাশনাল গ্রীন পার্টি, হিউম্যানিস্ট পার্টি, জনতার অধিকার পার্টি, মুক্তিযোদ্ধা লীগ, হিন্দু লীগ, যুব সেচ্ছাসেবক লীগ, মুসকিল লীগ, জাতীয় বঙ্গ লীগ, বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও ননপ্রবাসী কল্যাণ দল, সার্বজনীন দল, মানবতাবাদী দল, গণ রাজনৈতিক জোট, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, নতুন ধারা বাংলাদেশ, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, নাকফুল বাংলাদেশ।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত ইসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৮০টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এর আগের বারও ৭৬টি দল আবেদন করেছিল। কিন্তু, যাচাই-বাছাইয়ের সময় দেখা যায় নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা বেশিরভাগ দলই নাম ও প্যাডসর্বস্ব। বিগত দিনে দেখা গেছে, কয়েকটি সংগঠনও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন নিতে আবেদন করেছে।
"একটি একটি দল হাজার হাজার পাতার ডকুমেন্ট দেয়। সেসব পড়তে হয়, এরপর তাদের দেয়া ডকুমেন্ট অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে যাচাই করা হয়। এতে দেখা যায়, বেশিরভাগ দলের দেয়া তথ্যই ভুল বা মিথ্যা। যার ফলে তারা নিবন্ধন পায় না। অহেতুক আবেদন করে" বলেন তিনি।
আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে ইসিতে নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। নতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে, দলগুলোর কিছু শর্ত পূর্ণ করতে হয়। একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়; দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকরী কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মহানগর থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকার শর্ত পূরণ করতে হয়।
এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, 'নিবন্ধন পেতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোকে শতভাগ শর্ত পূরণ করতে হবে। একটি শর্তও যদি অপূর্ণ থাকে তবে নিবন্ধন পাবে না'।
রোববার তিনি বলেন, "আজকে আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন। হয়তো কালকে কমিশন সচিবালায় ফাইল তুলবে। এরপর তারা যাচাই-বাছাই করে দেখবে। তারপর আমাদের কাছে দেবে। আমরা যদি কাগজপত্র দেখে মনে করি, আরো যাচাই করতে হবে তাহলে সেটা করা হবে। আর যদি ১০০ ভাগ শর্ত পূরণ হয়, তাহলেই নিবন্ধন পাবে। কোনও একটি শর্তও যদি পূরণ না হয়, তাহলে নিবন্ধন দেয়া হবে না।"
এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ৭৬টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও একটিও নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়নি। তবে ভোটের পরে আদালতের আদেশে দুটি দল নিবন্ধন পায়।
তার আগে দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৪৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৪১টিই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়। সেবছর মাত্র দুটি দল নিবন্ধন পায়।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে দল নিবন্ধনের এ নিয়ম চালু করে ইসি। প্রথম বছরে ১১৭টি আবেদন জমা পড়েছিল। সেখানে ৩৯টি দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল।
২০০৮ থেকে এপর্যন্ত ইসি ৪৪টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে। তবে এরমধ্যে বিভিন্ন সময় পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। ইসির বিভিন্ন শর্ত পালন করতে না পারা ও তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়।
এছাড়া, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদালত অবৈধ ঘোষণা করে। বর্তমানে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৩৯টি।