এইচএসসি পরীক্ষায় বিতর্কিত প্রশ্নপত্র প্রস্তুতকারী শিক্ষকদের নাম প্রকাশ করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়
চলমান উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রের বিতর্কিত 'সৃজনশীল' প্রশ্নপত্রটি যারা তৈরি ও পুনঃমূল্যায়ন করেছেন, সেই শিক্ষকদের নাম প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আবুল খায়ের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, বিতর্কিত ওই প্রশ্নপত্রটি তৈরি এবং পুনঃমূল্যায়ন করেছেন যে পাঁচজন শিক্ষক, তারা সবাই যশোর বোর্ডের।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল ওই বিতর্কিত প্রশ্নপত্রটি তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনের আরও চার শিক্ষক পুনঃমূল্যায়ন করেন।
প্রশ্নপত্রটি পুনঃমূল্যায়নকারী চার শিক্ষক হলেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুল রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
গত রোববার (৬ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রে থাকা একটি অনুচ্ছেদ (সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অংশ) নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় ওঠে।
প্রশ্নপত্রে থাকা অনুচ্ছেদটি ছিল এরকম- "নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। শেষমেষ ভাইকে শাস্তি দিতে আবদুল নামের এক মুসলমানের কাছে তার ভাগের জমি বেঁচে দেয় নেপাল। আবদুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ঈদুল আজহার সময় সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কুরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।"
প্রশ্নটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য স্তরে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে প্রশ্নপত্রের এই অংশটি।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী ও সাধারণ মানুষ এনিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে শাস্তিদানের দাবি তুলেছেন।
দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরাও এটিকে 'সাম্প্রদায়িক' এবং বাংলাদেশের মতো শান্তিপূর্ণ দেশে অপ্রত্যাশিত বলে উল্লেখ করেছেন।
আশরাফুল আলম চিশতী শাহিন তার ফেসবুকে লিখেছেন, একদল মানুষ আমাদের সন্তানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, দেশে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেবে এই অনুচ্ছেদ। কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতাই দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। যারা একাজ করেছে সরকারকে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
প্রশ্নপত্রে থাকা ভুলকে 'অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা'' বলে অভিহিত করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরিশোধনকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং শীঘ্রই দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
শনিবার ( ৬ নভেম্বর) এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।