আবাসন ও কমিউনিটি উন্নয়নের ৬৩ শতাংশই ব্যয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে
গত অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আবাসন ও নাগরিক পরিষেবা খাতের প্রায় ৬৩ শতাংশই শুধুমাত্র ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাজীপুর জেলার জন্য বরাদ্দ ছিল।
এ খাতে বরাদ্দ ১ শতাংশের বেশি ছিল মাত্র ১২ টি জেলায়। আর ২৫টি জেলার মোট বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫.৮৫ শতাংশ।
বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল নগর সংলাপে এ তথ্য তুলে ধরেন আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। আইপিডির তত্ত্বাবধানে 'বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাজেট বরাদ্দের খাত ও জেলাভিত্তিক বিন্যাস' এর উপর করা সমীক্ষায় বিষয়টি উঠে আসে।
'উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণে বাংলাদেশের সুষম ও টেকসই নগরায়ণ: প্রেক্ষিত ও করণীয়' শীর্ষক সংলাপের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, "২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আবাসন ও নাগরিক পরিষেবা খাতে প্রায় ৩৭.২৪ শতাংশই বরাদ্দ ছিল ঢাকা জেলায়। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলাতে ১৭.৪০%, গাজীপুর জেলায় ৮.১৪%, রাজশাহীতে ৫%, খুলনাতে ৩.৩৫%, নারায়নগঞ্জে ২.৭৬%, কক্সবাজারে ২.৪১% বরাদ্দ ছিল।"
সবচেয়ে কম বরাদ্দ পাওয়া কয়েকটি জেলা হচ্ছে, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, বরগুনা যাদের প্রত্যেকের প্রাপ্তি শতকরা ০.২০ ভাগের মত।
এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, "বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকাকেন্দ্রিক বিনিয়োগের রাশ টেনে সারা দেশে সুষম বিনিয়োগ করা উচিত যাতে সারা দেশে টেকসই ও পরিকল্পিত নগরায়ণ হয়। সামনের দিনগুলোতে ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও উন্নয়নে কেন্দ্রীভূত হয়ে বাই-পোলার ইকোনমি তৈরি হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের সুষম নগরায়নে পিছিয়ে পড়া রংপুর, বরিশাল, রাজশাহী অঞ্চলসমূহে বাজেট বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ আরো বাড়াবার প্রয়াস নেয়া প্রয়োজন।"
তিনি বলেন, "বাংলাদেশের নগরায়ণে ঢাকাকেন্দ্রিকতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অন্যদিকে অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকার নগরায়ণ হচ্ছে অগোছালো ও অপরিকল্পিতভাবে, যা আমাদের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণকে বেগবান করতে আমাদের নগর এলাকাগুলোর টেকসই নগর পরিকল্পনা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মকৌশল ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।"
আইপিডির উপদেষ্টা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, পৃথিবী সর্বোচ্চ ৯০০ থেকে ১০০০ কোটি মানুষকে ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। গত ১১ বছরে ১০০ কোটি মানুষ বেড়ে ১৫ নভেম্বর বিশ্বের মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৮০০ কোটি। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার প্রায় কাছাকাছি জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজন অনুসারে সেবা দিতে পরিকল্পিত নগরায়ণ জরুরি।
তিনি আরো বলেন, "কর্মসংস্থান, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা—মূলত এই তিন কারণে মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসে। ঢাকার বাইরের অন্য শহরগুলোয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উন্নত নাগরিক সেবা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।"
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন, "দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ এখন দেশের ৫টি নগরে বাস করে। আর এই নগরে বাসকারী জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশই বাস করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা শহরে। এমন অবস্থায় বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই।"
আইপিডির পরিচালক চৌধুরী মো. জাবের সাদেক বলেন, "বিকেন্দ্রীকরণ একদিনে হবে না, ধাপে ধাপে করতে হবে। তাই এ–সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। যাতে উল্লেখ থাকবে কোন প্রক্রিয়ায়, কী হারে বিকেন্দ্রীকরণ হবে।"
আইপিডির পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, "শহরের সুবিধা গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকার একটি উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু গ্রামেও কিছু সুবিধা রয়েছে; যার মধ্যে আছে খেলার মাঠ, মুক্ত আলো-বাতাস, সবুজ মাঠ—গ্রামের এসব সুবিধাও শহরে ছড়িয়ে দিতে হবে। শহরের সুবিধা যখন গ্রামে যাবে এবং গ্রামের সুবিধা যখন শহরে পাওয়া যাবে তখনই ভারসাম্যপূর্ণ ও সুষম উন্নয়ন হবে।"