প্রায় ১.১০ কোটি টাকায় আধুনিকীকরণ হচ্ছে পোস্তগোলার মহাশ্মশানের
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পোস্তগোলার জাতীয় মহাশ্মশানটি প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। মহাশ্মশানটিতে ২৭৭২ বর্গ ফুটের একতলা একটি ভবন নির্মাণ, লাশ পোড়ানোর জন্য ১ টি গ্যাস চুল্লী ও ১ টি বৈদ্যুতিক চুল্লী, ৫টি শৌচাগার, সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কাজ করা হবে।
বুধবার মহাশ্মশানটির উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। মেসার্স খোরশেদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আগামী ১৪ মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে সিটি কর্পোরেশন নির্দেশনা দিয়েছে। প্রায় ১.২৫ একর জুড়ে এ মহাশ্মশানের উন্নয়ন কাজ করা হবে।
১৮৭৬ সালে তৎকালীন ঢাকার প্রভাবশালী জমিদার বাবু গোবিন্দ চন্দ্র দত্ত পোস্তগোলা মহাশ্মশানের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে জমি দান করেন। তৎকালীন স্থানীয় ধনাঢ্যরা শ্মশানটি পরিচালনার জন্য অর্থ দিতেন।
১৯৯৩ সালে পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে মরদেহ দাহ করার জন্য বৈদ্যুতিক চুল্লি স্থাপন করা হয়, যা শুরুতে তিন মাসের মতো চালু থাকার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে ১৩ বছর আগে ২০০৮ সালে বৈদ্যুতিক চুল্লিটিকে গ্যাসে রূপান্তরিত করা হলেও, সেটি একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি।
মহাশ্মশানটি সংস্কার এবং এটিকে আধুনিকীকরণের জন্য বিভিন্ন সময় জাতীয় মহাশ্মশান কমিটির নেতারা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে পোস্তগোলা মহাশ্মশানকে আধুনিকীকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চায় কমিটি।
প্রতি মাসে এ মহাশ্মশানটিতে ৮০টির মতো মরদেহ পোড়ানো হয়। এছাড়া হিন্দু ধর্মালম্বীদের মধ্যে যাদের কবর দেওয়া হয় তাদের জন্যও ব্যবস্থা আছে এখানে। এখন মহাশ্মশানটির আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়ায় স্বাগত জানিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
কমিটির একজন সদস্য অরুণ সরকার রানা টিবিএসকে বলেন, "পোস্তগোলার জাতীয় মহাশ্মশানটির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ায় আমাদের ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে। বৈদ্যুতিক চুল্লি চালুর পরে ৩৫টির মতো মরদেহ এখানে দাহ করা হয়। এরপরে কয়েল নষ্ট হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যায়। কাঠে পোড়ানোর ব্যবস্থার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও গ্যাসে পোড়ানোর ব্যবস্থা রাখা হলে সব সুবিধাই পাবে মানুষ।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জানায়, মহাশ্মশানের উন্নয়ন কাজের মধ্যে ২৭৭২ বর্গ ফুটের একটি একতলা ভবন নির্মাণ, অফিস কক্ষ ১টি, ভিতরের শৌচাগার ১টি, বাইরে পুরুষ শৌচাগার ২টি ও মহিলা শৌচাগার ২টি, বৈদ্যুতিক চুল্লি কক্ষ ১টি ও গ্যাস চুল্লি কক্ষ ১টি, মেকানিক্যাল কক্ষ ১টি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কক্ষ ১টি, বারান্দা ও জনসমাগম স্থান ১টি, ভিতরের লাশ গোসলখানা ২টি (পুরুষ-১টি ও মহিলা-১টি) তৈরী করা হবে।
এছাড়া পুরো এলাকা জুড়ে উন্নতমানের এলইডি লাইটের ব্যবস্থা, সেপটিক ট্যাংক ও সোক-ওয়েল নির্মাণ, বৃত্তাকার চুল্লি সংস্কারসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-৫) সাইফুল ইসলাম জয় টিবিএসকে বলেন, "পোস্তগোলা মহাশ্মশানের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক চুল্লি ও গ্যাস চুল্লির ব্যবস্থা করা হবে। তবে এখনই গ্যাস কিংবা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে না। দেশের সংকট অবস্থা কেটে গেলে সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এছাড়া বৃত্তাকার চুল্লিতে একসাথে দুটি মরদেহ দাহ করা যাবে। বৃত্তাকার চুল্লির চারিদিকে গ্যালারীর ব্যবস্থা করা হবে।"
পোস্তগোলা জাতীয় মহাশ্মশান উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন শেষে দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, "সকল রকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে, চাহিদা নিরূপণ করে আমরা এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এ কাজটা সম্পন্ন হবে। নির্মাণের সময় যাতে বিকল্প ব্যবস্থায় শ্মশানের কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়, সেটাও আমরা নিশ্চিত করব। এছাড়াও এখানে যারা থাকেন আমরা তাদেরও বসবাসের জন্য একটি ব্যবস্থা করব।"