সিলেট-মৌলভীবাজারে চলছেনা বাস, পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে সাধারণ যাত্রীরা
সিলেটে শনিবার থেকেই পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো ধর্মঘট ডাকলেও শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) থেকেই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বাস চলাচল। বিশেষত দূরপাল্লার বাস সিলেট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না। অঘোষিত এই 'ধর্মঘটে' বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
বাস মালিকরা বলছেন, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে আজ থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাসগুলো সিলেট ছেড়ে যেতে পারছে না। দূরের বাস সিলেটে আসতেও পারছে না।
তবে জেলার ভেতরে বাস চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সিলেট থেকে ঢাকায় যাত্রা করার কথা থাকলেও কোনো বাস পাননি বলে জানান অশোক রঞ্জন নামের এক যাত্রী। প্রবাসী এ শ্রমিক জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু সিলেট টার্মিনালে এসে ঢাকাগামী কোনো বাস পাননি তিনি।
তিনি বলেন, "মালয়োশিয়া যাওয়ার জন্য আমি তিনদিন আগে বিমানের টিকিট কিনেছি। শনিবার পরিবহন ধর্মঘট থাকায় শুক্রবারের টিকিট কিনেছি। একারণে আগের রাতেও ঢাকায় যাইনি। কিন্তু আজকে সকালে বাস টার্মিনালে এসে দেখি কোন বাস ছাড়ছে না।"
সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা বাস ছাড়া দূরপাল্লার কোন বাস ছাড়ছে না। আন্তঃজেলা বাসের সংখ্যাও খুব কম। দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলোও বন্ধ।
এনা বাসের বন্ধ কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সোমবারের আগে সিলেট থেকে আর বাস ছেড়ে যাবে না।
হানিফ পরিবহনের বন্ধ কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী শরিফ হাসান বলেন, "আমি ঢাকায় চাকরি করি। শনিবার ধর্মঘট জানি তাই আজকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে কোন বাস পাচ্ছি না।"
শরিফ বলেন, কয়েকটি মাইক্রোবাস যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে। তবে তারা অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছে।
ধর্মঘটের আগেই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া সম্পর্কে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, "আমাদের ধর্মঘট শনিবার। কিন্তু মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে আজকে থেকে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যেতে হলে এই দুই জেলা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দুই জায়গায়ই ধর্মঘট থাকায় দূরপাল্লার বাস আসা যাওয়া করতে পারছে না। তবু কিছু বাস চলছে।"
পাঁচদফা দাবিতে শনিবার সিলেটে ভোর ৬ টা থেকে ২৪ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট ডাকে বাস মালিক সমিতি। ভিন্ন চারটি দাবিতে শনিবার অন্য পরিবহনগুলোরও ধর্মঘট ডেকেছে সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গণসমাবেশ আয়োজনে বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করতেই সরকার কৌশলে পরিবহনে ধর্মঘট ডাকিয়েছে। শনিবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সিলেটে যাত্রীদের দুর্ভোগের মতো একই চিত্র দেখা গেছে মৌলভীবাজারেও।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলায় দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা করে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি। এসময় সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন নেতারা। ধর্মঘটের প্রথম দিনের সকাল থেকেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
বিএনপির সমাবেশের জন্য এ ধর্মঘট ডাকা হয়নি বলে দাবি মৌলভীবাজার জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির। তারা বলছে, মহাসড়কে সবধরনের তিন চাকার অবৈধ যান চলাচল বন্ধ এবং প্রশাসনের হয়রানি বন্ধের দাবিতে এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
তবে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমান মিজান বলেন, "আমাদের সমাবেশের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা রুখতে এই ধরপাকড়। তবে এইসব করে গণসমাবেশের গণ জোয়ার থামানো যাবেনা।"
মৌলভীবাজার শহরের পৌর বাসস্ট্যান্ড, ঢাকা-সিলেট বাসস্ট্যান্ড এবং চাঁদনীঘাটের কুলাউড়া-বড়লেখা বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে যাত্রীদের যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বাসগুলো টার্মিনালে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
যাত্রী ইমরান আলী বলেন, "জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি ধর্মঘট চলছে। এখন আটো রিকশা ভাড়া করে শ্রীমঙ্গল যাব, সেখান থেকে ট্রেনের ঢাকা যাব। টাকা আর সময় নষ্ট হলো।"