মাছ-মাংস কখনও গরীবের নাগালের বাইরে চলে যায়নি: পরিকল্পনামন্ত্রী
গরীবের নাগালের বাইরে মাছ-মাংস চলে যাচ্ছে, এমন কথার কোনো ভিত্তি নেই। বরং গত কয়েক বছরে গরীবের নাগালের বাইরে মাছ-মাংস কখনও চলে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, "গরীবের নাগালের বাহিরে মাছ মাংস চলে যাচ্ছে', এ ধরনের উক্তিকে আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি গত ১০-১৫ বছরে তা কখনও যায় নাই। তাহলে এডিশনাল যে মাছ, মাংস বাজারে আসছে এগুলো তো অস্বীকার করতে পারবেন না। তাহলে এগুলো খাচ্ছে কারা?"
মন্ত্রী বলেন, "বিষয়টি এমন হচ্ছে যে মানুষ কৈ মাছ থেকে পাঙ্গাসে নেমেছে, দেশি মুরগী থেকে ব্রয়লারে নেমেছে। তার মানে এই না যে তারা প্রোটিন খাচ্ছে না। প্রত্যেক দেশেই একেবারে নিচের দিকে (আয়ের দিক থেকে) মানুষরা প্রোটিন খায় না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড। তারা বড় মার্কেটের পাশের ছোট মার্কেট থেকে কম দামে কিনে খায়।"
শনিবার রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত 'বাংলাদেশের অর্থনীতি: সংকট ও ষড়যন্ত্র' শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, "গরীব ও নিম্ন আয়ের মানুষরা পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি মাছ-মাংস খাচ্ছে। আপার ইনকামেও বেশি খাচ্ছে, লোয়ার পিপলও বেশি খাচ্ছে।"
গত ১৭ নভেম্বর বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, "বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে স্বল্প আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। তাদের খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিতে হচ্ছে।"
তার বক্তব্যের সূত্র ধরে মন্ত্রী একথা বলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী সেলিম রায়হানের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেন।
মন্ত্রী বলেন, "আমাদের আগে মধ্যবিত্তদের ডিফাইন করা উচিত। আমি মনে করি মধ্যবিত্তের প্রতি যে আমাদের একটি আবেগী মনোভাব যেমন- তারা না পারে লাইনে দাঁড়াতে, না পারে কারো থেকে সাহায্য নিতে। এটি কোনো ইকোনোমিক সল্যুউশন নয়। লাইনে দাঁড়ানো যদি অপমানের হয় সে তাহলে কারো জন্য ইকোনোমিক ফ্যাক্টর নয়। এখানে খাতিরের কোনো বিষয় না। অমুক সাহেবের ছেলে এই কাজ করবে না, সম্মান চলে যাবে এসব বিষয় যদি আমরা আলোচনায় আনি তাহলে আমরা সমস্যা সমাধানের পথে এগোতে পারবো না।"
"নিম্নবিত্তদের আমরা চিহ্নিত করতে পারি এবং তাদের জন্য ব্যবস্থা করছি কিন্তু মধ্যবিত্ত হচ্ছে ফ্লুইডের মতো।"
রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং বাস্তব অর্থনীতির মিশ্রণের প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, "ব্যাংকগুলো মুনাফা করছে। তাহলে তারা ব্যর্থ হলে তাদের বিষয়ে আমরা কেন ভাববো?"
অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছরে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশে যেটি করা দরকার সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আদলে একটি ফেডারেল ইন্সুরেন্স করা। এগুলোর বেশি দাম না। দ্বিতীয়ত হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং এনবিএফআই (নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান) এর মধ্যে একটি ক্লিয়ার ডেস্টিংশন দরকার। এনবিএফআই মানে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। যেখানে ব্যাংকের সুদ ৫ থেকে ৬% সেখানে যে ৩০% দেয় সেখানে তুমি যাও কেন? এনবিএফআই এর ক্ষেত্রে যারা ধরা পড়েন তাদের ক্ষেত্রে উচিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।"
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, "কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে গ্রাহকরা এক লাখ করে টাকা পাবেন এটির সাথে সেন্ট্রাল ব্যাংকের দায়বদ্ধতা আছে আইনগতভাবে। বাকিটা হচ্ছে পলিটিক্যাল এবং অন্য কনসিডারেশন। বাংলাদেশে ডিপোজিটরা একেবারে রাস্তায় কখনও বসে যায়নি।"
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।