বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে স্বাগতিক দেশ হিসেবে সবার আগে বাদ পড়লো কাতার
বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে গেছে স্বাগতিক দেশ কাতার। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো আয়োজক দেশ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারল না। ১২ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়েছিল। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নামলেও দেশের সমর্থকদের শুধু হতাশাই উপহার দিলো কাতার। শুক্রবার সেনেগালের কাছে হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয়েছে গেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির।
প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের কাছে ০-২ গোলে হেরেছিল কাতার। শুক্রবার দ্বিতীয় ম্যাচে তারা সেনেগালের কাছে হেরেছে ১-৩ গোলে। শেষ ম্যাচ খেলতে হবে গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে যে তারা জিতবে এমন স্বপ্ন কাতারের কট্টর সমর্থকও দেখছেন না। গ্রুপে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী দুই প্রতিপক্ষ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিক দেশটি।
এশিয়ার বাকি দেশগুলো যেখানে বিশ্বকাপে একের পর এক চমক দেখাচ্ছে, সেখানে বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে প্রথম স্বাগতিক দেশ হিসেবে এত দ্রুত টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হলো কাতারকে।
কাতারের কোচ ফেলিক্স সানচেজ অবশ্য আগেই বলেছিলেন, "আপনারা যদি ধরে রাখেন যে আমরা এই টুর্নামেন্টে অনেকদূর যাবো, তাহলে নিশ্চয়ই হতাশ হতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলকভাবে খেলা।"
বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার আগে কাতার অবশ্য সেনেগালের বিপক্ষে একটি গোল স্কোর করতে সক্ষম হয়েছে। খেলার দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামা মোহাম্মদ মুনতারির একটি গোল করে কাতারিদের আরও লজ্জার হাত থেকে বাঁচান। ঘানায় জন্ম নেওয়া এই স্ট্রাইকার কাতার দলে থাকা আরও অনেক বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন।
এখানে বলে রাখা ভালো, এর আগে কখনোই বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি কাতার। ২০১০ সালে এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য অনুমোদন দেয় ফিফা। ফলে এবার স্বাগতিক দেশ হিসেবে সরাসরিই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে কাতার।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের তেল-গ্যাসসমৃদ্ধ এই দেশটি বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষে স্টেডিয়াম, রাস্তাঘাট নির্মাণের পেছনে ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করলেও, দলের জন্য ভালো ডিফেন্স তৈরি করতে পারেনি।
কাতারের মতোই দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়েছিল ২০১০ বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ২০১০ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর সঙ্গে ১-১ ড্র করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল উরুগুয়ে। দিয়েগো ফোরলানের জোড়া গোলে শাবালালার দল হেরে যায় ০-৩ ব্যবধানে।
তৃতীয় ম্যাচে অবশ্য চমকে দেয় তারা। ২০০৬-এর বিজয়ী ফ্রান্সকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে দেয়। গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী মেক্সিকোর সঙ্গে একই পয়েন্ট (৪) থাকলেও গোলপার্থক্যে তৃতীয় স্থানে শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এক পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে থেকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ফ্রান্স।
দক্ষিণ আফ্রিকা তবু ফ্রান্সকে হারিয়েছিল। এবার কাতারের সামনেও সুযোগ রয়েছে অঘটনের। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে যদি চমকে দিতে পারেন আলমোয়েজ আলিরা, তাহলে অন্তত মাথা উঁচু করে বিদায় নিতে পারে তারা। কারণ এরপর কবে বিশ্বকাপে দেখা যাবে তাদের তা কেউই জানেনা!
সূত্র: দ্য হিন্দু