ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ‘লুটের মাল’ হায়ারোগ্লিফিক শিলালিপি ফেরত চায় মিশরীয়রা
প্রাচীন হায়ারোগ্লিফিক্সের পাঠোদ্ধারের মূল চাবিকাঠি রোসেটা পাথর ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আবারও সরব হয়ে উঠেছে মিশরীয়রা। খবর আল-জাজিরার।
গাঢ় ধূসর গ্রানাইট স্ল্যাবের এই শিলালিপিতে তিনটি ভাষায় রাজ ফরমান লিখিত আছে। এখান থেকেই প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্সের পাঠোদ্ধার করেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট মিশর দখলের পর ফরাসি সৈন্যরা ১৭৯৯ সালে উত্তরাঞ্চলের রশিদ শহর থেকে পাথরটি উদ্ধার করে। ফরাসি ভাষায় এটি রোসেটা নামে পরিচিতি পায়।
১৮০১ সালে ব্রিটিশরা মিশরে ফরাসিদের পরাজিত করে। আত্মসমর্পন চুক্তির শর্ত থেকে ব্রিটিশরা রোসেটা পাথরসহ আরও এক ডজনের বেশি পুরাকীর্তি তাদের দেশে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই পাথরটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।
দীর্ঘ গবেষণার পর পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক ১৮৫৮ সালে প্রথমবারের মতো পাথরের লেখাগুলো সম্পূর্ণ ইংরেজি অনুবাদ করেন।
এদিকে প্রাচীন এই প্রস্তরফলক ফিরে পেতে মিশরে ইতোমধ্যে দুটো পিটিশনের আয়োজন করা হয়েছে।
আয়োজকদের একজন আরব অ্যাকাডেমি ফর সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মেরিটাইম ট্রান্সপোর্টের ডিন মনিকা হানা বলেন, 'ব্রিটিশ মিউজিয়াম কর্তৃক এই পাথর রেখে দেওয়া মিশরে পশ্চিমা সাংস্কৃতিক জবরদস্তির নিদর্শন'। পাথরটি নিয়ে যাওয়াকে তিনি যুদ্ধের সুযোগে প্রত্নতত্ত্ব হাতিয়ে নেওয়া ও লুটের ইতিহাস বলে অভিহিত করেন।
পিটিশনের পক্ষে এরই মধ্যে চার হাজার ২০০টি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন হানা। মিশরের সাবেক পুরাকীর্তি বিষয়ক মন্ত্রী জাহি হাওয়াসও একই দাবিতে পিটিশন করেছেন। এই পিটিশনে এক লাখের বেশি স্বাক্ষর রয়েছে।
দুটো পিটিশনেই বলা হয়েছে, ১৮০১ সালে চুক্তিতে মিশরের কোনো সম্মতি বা বক্তব্য ছিল না।
এদিকে ব্রিটিশ মিউজিয়াম এক বিবৃতিতে জানায়, ১৮০১ সালের চুক্তিতে ব্রিটিশদের পক্ষে ফরাসিতে বিরুদ্ধে লড়াই করা একজন অটোমান অ্যাডমিরালের স্বাক্ষরও রয়েছে। তাদের দাবি, নেপোলিয়নের আক্রমণের সময় অটোমান সুলতান মিশরের শাসন করায় তিনি মিশরের প্রতিনিধিত্ব করেন।
মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এই পাথর ফেরত নিতে মিশরের সরকার কোনো অনুরোধ জমা দেয়নি। এছাড়া খোদাইকৃত এই ফরমানের এখন পর্যন্ত জানা ২৮টি কপির মধ্যে ২১টি এখনও মিশরেই রয়েছে।