কার স্বার্থে পরিবহন ধর্মঘট, প্রশ্ন বগুড়ার শ্রমিকদের
পরিবহন নেতাদের হিসাবে বগুড়ায় অন্তত ২২ হাজার পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন। পেটের দায়ে প্রতিদিনই তাদের গাড়ির চাকা সচল রাখতে হয়। একদিন গাড়ি বন্ধ থাকলেই টান পড়ে জীবিকায়। অথচ তারাই গাড়ি চলানো বন্ধ করে টার্মিনালে খেলাধুলায় মেতেছেন।
নেতাদের কারণে 'বাধ্য হয়ে' করা ধর্মঘটের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করেছেন তারা। কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, আসলে কার স্বার্থে এই ধর্মঘট; শ্রমিক নাকি সরকারের?
১০ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এ কারণে বগুড়ার ৩৪ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর ছোট-বড় মিলে বাস রয়েছে ৪ হাজার। এর মধ্যে কোচ রয়েছে অন্তত দেড় হাজার । পরিবহন নেতাদের দাবি, বগুড়ায় এসব বাস একদিন বন্ধ থাকলে অন্তত কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়।
অকারণে ডাকা ধর্মঘটরে কারণে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কবে তারা সড়কে গাড়ি চালাতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। অনিশ্চয়তায় মধ্যে থাকা শ্রমিকরা পরিবহন নেতাদের ওপরও চটেছেন। তবে ভয়ে সরাসরি প্রতিবাদ করছেন না।
বিভাগীয় সিদ্ধান্তের সমর্থনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বগুড়ায় এই ধর্মঘট শুরু হয়। জেলা বাস মিনিবাস কোচ পরিবহন মালিক সমিতি জানায়, বগুড়া থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৩৪টি রুটে বাস, কোচ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বগুড়া চারমাথার বাস টার্মিনাল ঘুরে শ্রমিকদের অসন্তোষ জানা যায়। এ সময় টার্মিনালে দেখা যায় বিভিন্ন রুটের বাসগুলো সারি করে দাঁড় করানো। প্লাটফর্মে অলস সময় কাটাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। কেউ ক্যারমবোর্ড খেলছে। এদের মধ্যে কেউ বাসচালক, কেউ সহকারী, কেউ বা গাড়ির পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত।
পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি কোচের বাসচালক সারাদিনে আয় করেন ১,২০০ থেকে ১,৪০০ টাকা। ছোট বাসে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। কনডাক্টর ও হেলপার পান ৬০০ টাকা। কিন্তু গাড়ির চাকা না ঘুরলে এই টাকার ছিটেফোঁটাও আসে না কারও হাতে।
টার্মিনালে জহুরুল নামে এক শ্রমিক বলেন, 'সারাদিন টার্মিনালে কাজ করে ৪০০ টাকা আয় হয়। সেই টাকায় মা, বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসার চলে। এখন সংসার চালানোর যে খরচ তাতে এক-দুই দিন চলা যায়। কিন্তু এরপর তো সংসার চালানো সম্ভব না।'
সোনাতলা থেকে ঢাকা রুটের বাসচালক রেজাউল করিম ভোলা। তার এক ছেলে কলেজে অনার্সে পড়ছেন। ছেলের পড়ালেখা ও সংসারের খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন রেজাউল।
রেজাউল করিম বলেন, 'ধর্মঘট কতদিন পর্যন্ত চলবে কেউ জানে না। অথচ একদিন গাড়ি না চললে আমাদের খোরাকি বন্ধ থাকে। কিন্তু পেট কি বন্ধ থাকে? সড়কে শ্রমিকরা রক্ত ক্ষয় করে টাকা আয় করেন। সেই টাকায় মালিকরা চলেন। তারা তাদের মতো ধর্মঘট করছেন, কিন্তু না খেয়ে আছি আমরা শ্রমিকরা।'
জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসাধারণ সম্পাদক ও বাসচালক ফাইন হোসেন মণ্ডল বলেন, 'আমাদের কথার কী মূল্য? আমাদের বলল গাড়ি বন্ধ রাখতে, আমরা রাখলাম। কিন্তু আমরা কীভাবে চলব, সে খেয়াল কারও আছে? অবরোধে যে দাবির কথা বলা হয়েছে, তাতে আমাদের উন্নয়নের কী আছে? কিছুই নেই।'
জেলা বাস মিনিবাস কোচ পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, নিজস্ব গাড়ি ছাড়াও বগুড়ার ওপর দিয়ে দিনে অন্তত ১ হাজার বাস আপডাউন করে। প্রতি গাড়ি থেকে শুধু কর্মচারী খরচ ধরা হয় দুই হাজার টাকা। এ হিসাবে ৩৪ রুটে বাস চলাচল থেকে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকা আয় হয়।
এসব তথ্য দিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, 'ধর্মঘটের কারণে বাস বন্ধ আছে। ১০ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে। এই ধর্মঘটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন শ্রমিকরাই। কারণ বগুড়ায় একদিন পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়।' তবে এই ধর্মঘটকে সরকারি বলতে নারাজ এই নেতা।