ধনীকে আরও ধনী বানাচ্ছে ড্যাপ, উপেক্ষিত মধ্যবিত্তরা: আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক এমডি হোসেন খালেদ
আনোয়ার গ্রুপ বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর একটি। প্রতিষ্ঠানটির সিস্টার কনসার্ন আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক দীর্ঘ দুই দশক ধরে দেশের আবাসন খাতে সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার খান এবং সিনিয়র প্রতিবেদক রেজাউল করিম রিয়েল এস্টেট খাতের বর্তমান পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেছেন আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন খালেদের সঙ্গে। তাদের আলাপচারিতা এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো-
টিবিএস: আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের প্রায় দুই দশক হলো। এই সময়ে কতগুলো আবাসন প্রকল্প করেছে আপনাদের প্রতিষ্ঠান?
হোসেন খালেদ: আমাদের এই বছর ২১ বছর শুরু হলো। ২১ বছরের যাত্রায় দেড়শোর বেশী প্রকল্প করেছি আমরা। শুধু রেসিডেনসিয়াল প্রজেক্ট নয়, আমরা প্রচুর ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কাজও করেছি, যেখানে ওয়াটার প্ল্যান্ট আছে, ব্রিজ, কালভার্ট, আইটি পার্ক যেগুলো হচ্ছে সেখানেও বেশ কিছু কাজ করেছি। ল্যান্ডমার্ক প্রজেক্ট যদি বলি, ঢাকায় ইউনিসেফের যে হেডকোয়ার্টার হয়েছে, সেটিও আমাদের করা।
টিবিএস: আপনারা যখন আবাসন ব্যবসা প্রথম শুরু করেছেন, তখন খুব একটা অভিজ্ঞতা ছিল না আপনাদের, তখন অল্প সংখ্যক প্রকল্প করেছেন, এখন আপনাদের গতি কেমন এবং এখন অর্থনীতিতে একটা ধাক্কা আছে, সেই আলোকে আপনারা কোনো ধাক্কা খাচ্ছেন কি না?
হোসেন খালেদ: আমাদের কন্সট্রাকশনের যাত্রা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। আমার বাবা (আনোয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মরহুম আনোয়ার হোসেন) ষাটের দশক থেকেই কনস্ট্রাকশনের সাথে জড়িত। তখন উনি কন্ট্রাক্টর হিসেবে অনেক কাজ করতেন। বাড়িঘর কিনে বিক্রয়ের কাজও উনি করতেন। পাকিস্তান আমল থেকে উনি বাড়িঘর কিনতেন, সেগুলো ফার্নিশড করতেন আবার বিক্রয় করে দিতেন। একারণে বলতে পারি তিনি অনেক আগে থেকেই রিয়েল এস্টেটের সাথে জড়িত ছিলেন, আনোয়ার গ্রুপের যতোগুলো প্রতিষ্ঠান ও কারখানা হয়েছে সবগুলোই তার হাতে গড়া। তাই অনেক আগে থেকেই কনস্ট্রাকশন আমাদের কোম্পানীর অংশ।
যখন আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক শুরু করি, তখন একসাথে তিনটি আবাসন প্রকল্প হাতে নিই। এরপর থেকে আমরা টাইম-টু-টাইম একসাথে প্রকল্পের আকারের ওপর নির্ভর করে ২৫ থেকে ৩০টির মতো প্রকল্প হাতে নিই। এটি প্রতি বছর অন-রোলিং নেওয়া হয়।
টিবিএস: তো ২০২২ সালের বাস্তবতা কি?
হোসেন খালেদ: ২০২২ সালেও আমরা ২২-২৫টি প্রকল্প হাতে নিয়েছি।
টিবিএস: রড সিমেন্টসহ অনেক ধরনের নির্মাণ উপকরণের বাজারদর বেড়েছে, সে ক্ষেত্রে একটা নেতিবাচক প্রভাব থাকার কথা কি?
হোসেন খালেদ: এখন একটা বৈশ্বিক সংকট চলছে। আমরা গ্লোবাল ভিলেজের একটা অংশ হওয়ার কারণে, বৈশ্বিক যে প্রভাবগুলো সেগুলো আমাদের দেশেও পড়েছে। এটার বাইরে থাকার সুযোগ আমাদের নেই। গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে কোভিডের শুরু থেকেই একটা ধাক্কা এসেছে। সেটার ফলে এখন মার্কেটের সাপ্লাই চেইনে একটা বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এখন বর্তমান দিনগুলোতে আমরা নতুন করে এলসি ওপেন করতে অসক্ষম হচ্ছি। প্রায় সব ধরনের নির্মাণ উপকরণের বাজারদর ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত, কিছু ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। দিস ইজ একচুয়ালীন এ গুড থিং ফর কাস্টমার, যেহেতু কস্টটা আমরা ট্রান্সফার করতে পারিনি এবং মার্কেটে এখনো একটা স্টেবল (স্থিতিশীল) সেলস প্রাইজ রয়ে গেছে।
টিবিএস: তার মানে আপনাদের দিক থেকে আপনারা এপার্টমেন্টের দাম বাড়াতে পারেন নি?
হোসেন খালেদ: পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা যে জায়গাটায় ছিলাম স্টেবিলিটি ধরে রাখার জন্য, আমি মনে করি আমরা সবাই একই পর্যায়ে আছি। যেটা বেড়েছে, সেটি খুব অল্প পর্যায়ে বেড়েছে।
টিবিএস: তার মানে আপনাদের সেলস সেভাবে প্রভাবিত হওয়ার কথা নয়। আসলে যারা এপার্টমেন্ট কিনবে, তারা সে টাকা নিয়েই আসবে।
হোসেন খালেদ: একদম। অনেকেই আছে যে, তারা সারা জীবনের সঞ্চয় নিয়ে একটা এপার্টমেন্ট কেনে। অথবা কমার্শিয়াল স্পেস কেনার জন্যও একইভাবে চিন্তা করে। রিয়েল এস্টেটের ইনভেস্টমেন্ট বেশ কয়েকটা এঙ্গেল থেকে দেখতে হয়, একটা হলো অনেকেই নিজের থাকার জন্য এপার্টমেন্ট কেনে, একটা হচ্ছে ইনভেস্ট পারস্পেকটিভ থেকে, আর আরেকটা হলো যে আপনি পিওরলি রেন্টার হিসেবে চিন্তা করছেন। যে ব্যক্তি ইনভেস্টমেন্টের চিন্তা করছে, তিনি ভাবেন যে আজকে যদি আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট ক্যাশ টাকা দিয়েও এপার্টমেন্ট কিনি, ওটা হয়তো চার বছর পর ডেলিভারি হবে, আমি আজকে টাকা দিয়ে, কতটা ডিসকাউন্টে কিনে নিতে পারি, সেটা একজন দেখবে। আরেকজন দেখবে, এসব ইনফ্লেশনের সময় সে পারচেজ করে কতটা জিততে পারে। কারণ ইনফ্লেশনের সময় আনফরচুনেটলি যেটা হয়, বিশেষ করে মিডেল ক্লাসের ক্ষেত্রে, ওনারা কিন্তু এ সময় ইনভেস্টমেন্টের চেয়ে রেন্টালের দিকটা বেশি চিন্তা করেন। এসব সময়ে কিন্তু রেন্টালের চাহিদাও বেড়ে যায়। রেন্টালের চাহিদা যখন বেড়ে যায় তখন বিনিয়োগকারীদের রেন্টালের সুযোগটাও বেড়ে যায়।
টিবিএস: তাতে আমি বুঝলাম যে এখন পর্যন্ত রিয়েল এস্টেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাবটা সেভাবে পড়েনি।
হোসেন খালেদ: কিছুটা স্লো-ডাউন হয়েছে, যেটি সাসটেইনেবল। ৫০ শতাংশের বেশি ডেভেলপার যারা রয়েছেন, তারা রিহ্যাবের সদস্য নয়। ওখানে হয়তোবা একটা ধাক্কা আসতে পারে, ছোট কোম্পানি যারা আছে, তা হয়তোবা ম্যানেজ করতে পারবে না, একটা ইমপ্যাক্ট থেকেই যায়। দেশের টপ-টেন ডেভেলপার যারা আছি, তারা কিন্তু কোভিড বলেন বা তার আগে যে ২০১২ ও ২০০৭ সালে যে ধাক্কা এসেছিল, তখনও কিন্তু আমরা মোটামুটি সাসটেইন করে গেছি।
টিবিএস: এখানে একটা প্রশ্ন আসে যে যখন কোনো কোম্পানি বড় হয়ে যায় তখন অবশ্যই তারা ভ্যালু এডিশন করে। আপনার রিয়েল এস্টেট মানে, বিহাইন্ড দ্য সিন আরো অনেক কিছু আপনারা করে থাকেন। সেটি কি?
হোসেন খালেদ: আমাদের জন্য রিয়েল এস্টেট হলো ফরোয়ার্ড ইনোভেশন। বলা হয় যে, আমরা অনেক ডাইভারসিফাইড। আমরা ১৯৮০ থেকে ইস্পাতের সাথে জড়িত এরপর আমরা সিমেন্ট উৎপাদনে চলে আসলাম, এর আগে থেকে কেবলস এর ব্যবসা রয়েছে, এরপর পাইপস আসলো। আমরা কিন্তু অনেক আগে থেকেই কন্সট্রাকশনের সাথে জড়িত। তাই রিয়েল এস্টেট আমাদের জন্য ন্যাচারাল, ইনএভিটেবল। ফলে এটাতে আমাকে আসতেই হবে। আমরা কিন্তু সেখানে থামিনি। এটার সাথে আমাদের ফার্নিচার চলে এসেছে, সেটার নাম এথিনা ফার্নিচার। এটার সাথে সাথে আমাদের প্রজেক্টগুলোতে ফ্যাসিলিটি ম্যানেজের সার্ভিসেসগুলোও দিচ্ছে আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক। এরপর আর্কিটেক্ট, ইন্টেরিয়র আর্কিটেক্ট সার্ভিসেসগুলোও দেওয়া হচ্ছে।
টিবিএস: আপনাদের কি কোনো ফাইন্যান্সিং সুবিধা আছে?
হোসেন খালেদ: আনোয়ার গ্রুপের প্রডাক্টসগুলো একটু ভিন্ন। সেটা আমরা সবসময় বলে থাকি 'ওয়ানস্টপ সার্ভিসে' চাই। আমার এখানে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, আমরা অন্তত চেষ্টা করে যাই, যাতে পুরো প্যাকেজটা দিতে পারি। সেটা আপনার হোম লোনও যদি প্রয়োজন হয়, ইন্সুরেন্স যদি প্রয়োজন হয়, সেটাকে টোটাল প্যাকেজ করে সরবরাহ করা।
টিবিএস: সরকার রাজউকের নতুন ড্যাপ অনুমোদন দিয়েছে, এটা নিয়ে হাউজিং সেক্টরের লোকজন বিভিন্ন কথা বলছে, তাদের সাথে সরকার আলোচনা করেনি, এটা কি আসলেই তাই নাকি একটা সঠিক জিনিসই হয়েছে?
হোসেন খালেদ: ড্যাপ নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা যদি হয়েও থাকে, আমার মনে হয় আনুষ্ঠানিকভাবে সেভাবে কখনোই হয়নি। যেখানে একটা ভালো আলোচনার মাধ্যমে, মধ্যস্থতার মাধ্যমে সহনীয় পর্যায়ে আসবো, সেটি কিন্তু কখনোই আসেনি। বিহাইন্ড দ্য সিন যদি কেউ থেকে থাকে সেটি আমার জানা নেই। নইলে আমাদের সবার জন্যই এটি একটি সারপ্রাইজ। শুধু সারপ্রাইজ না, এটা আমাদের জন্য একটা ধাক্কাও (শক)।
টিবিএস: কেন শক?
হোসেন খালেদ: এই কারণে যে, আপনার প্রথমত আমাদের ল্যান্ডম্যাচটা বোঝা প্রয়োজন। যেটা বাবার কাছ থেকে সবসময় শুনে এসেছি যে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, যেটা ফুরিয়ে যাবে, সেটা কিন্তু গ্যাস নয়, সেটি হলো জমি। বিশেষ করে আবাদযোগ্য জমি কোনটা হবে, কৃষি জমি কোনটা হবে, অকৃষিজ জমি কোনটা হবে, বাসস্থানের জায়গা কোনটা হবে। যেহেতু আমাদের ছোট একটা দেশ, আমাদের ল্যান্ডম্যাচও অনেক কম এবং এটি যেহেতু ঠিকমতো ডিফাইন করা নেই, সবচেয়ে আগে শেষ হবে কিন্তু এই রিসোর্সটা।
আমরা অনেক আগে থেকেই এটি নিয়ে বলে আসছি, ঢাকার ল্যান্ড নিয়ে ড্যাপের ম্যাপিং হওয়াটা বেশি প্রয়োজন। যাই হোক এটা শুরু হয়েছিল। এখন ড্যাপে যে বিধিমালাগুলো নিয়ে এসেছে, আমাদের অনেকগুলো পরামর্শ ছিল, পরিবেশের কথা মাথায় রাখা, জনসংখ্যা মাথায় রাখা। কিন্তু হঠাৎ করে এতো বড় ধাক্কা আনা, যেখানে ধানমন্ডির মতো এলাকা নিয়ে বলা হচ্ছে, পাঁচ থেকে ছয়তলার বেশি উঁচু ভবন করা যাবে না। মিড-টাউন যেটাকে বলা হয়ে থাকে, সেগুনবাগিচা, বেইলি রোড, মগবাজার, এসব এলাকায় ৫/৬ তলার বেশি উঁচু ভবন করা যাবে না।
টিবিএস: ইতিমধ্যে সেখানে যেসব উঁচু ভবন আছে সেগুলোর কী হবে?
হোসেন খালেদ: যেগুলো আছে, সেগুলোতে রাজউক বা অন্য কেউ আর হাত দিতে পারবে না। নতুন করে যে ভবনগুলো করা হবে, সেগুলোতে যদি এতো পরিমাণ বিভেদ হয়ে যায়, যেখানে অনেকগুলো জায়গায় ১৩ তলা পর্যন্ত ভবন করার সুযোগ ছিল।
টিবিএস: ধরুন, ওইসব জায়গা এতো বেশি পপুলেটেড হয়ে গেছে এবং রাস্তার তুলনায় যে পরিমাণ ভবন হয়েছে, গাড়ি সেই পরিমাণ হ্যান্ডেল করতে পারে না, সেখানে এরকম ড্যাপ কি কাজ দেবে না?
হোসেন খালেদ: অবশ্যই। আমরা যদি ম্যানেজমেন্ট এবং মিস-ম্যানেজমেন্টের কথা বলি তাহলে অনেক বড় আলোচনা চলে আসবে। এটা দীর্ঘ আলোচনা, সেটা আমাদের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বলি বা অন্যান্য ম্যানেজমেন্ট বলি। বাংলাদেশে বা ঢাকা শহরে এতো বেশি গাড়ি বিক্রয় হয় না বা এতো পরিমাণ গাড়ি নেই, যেটা আমরা ম্যানেজ করতে পারবো না। অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ায় ঢাকার বাইরে থেকে একটা বড় অংশের মানুষ চাকরির জন্য ঢাকায় আসে। যে সেন্টারগুলোকে ঢাকা থেকে সরিয়ে নিতে পারতাম, সেগুলোকে কেন সরাচ্ছিনা বা ঢাকায় কেন রাখা হয়েছে। অনেকগুলো অফিস, হোডকোয়ার্টার ঢাকায় আনার প্রয়োজন ছিল না। আমরাই কিন্তু বলছি ডিসেন্ট্রালাইজেশনের (বিকেন্দ্রীকরণ) কথা, আবার আমরাই কিন্তু ভুলটা করছি, সবকিছু ঢাকাতেই আনছি। যতক্ষণ পর্যন্ত ঢাকা ডিসেন্ট্রালাইজড না হবে, অযথা রিয়েল এস্টেটকে দোষ দিলে হবে না।
টিবিএস: রিয়েল এস্টেটকে আমরা দোষ দিচ্ছি না, যুক্তিটা বোঝার চেষ্টা করছি। এর আগেও যখন ড্যাপ করার চেষ্টা করা করা হয়েছে, অনেক ক্ষমতাধর ডেভেলপার লবি কিন্তু সেটি হতে দেয়নি।
হোসেন খালেদ: আমরা কিন্তু চাই যে ড্যাপ হোক। কিন্তু একটা সমঝোতায় আসতে হবে, একটা ব্যালান্সে আসতে হবে। সবকিছু যদি একান্তই এমন কিছু করে ফেলি, শুধু আমি পরিবেশকে মাথায় রাখলাম কিন্তু বাসস্থানকে চিন্তু করলাম না, ক্রয়ক্ষমতার কথা চিন্তা করলাম না, তাহলে কিন্তু এটা কাজ করবে না। এই মুহুর্তে আমি যদি বলি গত তিনমাসে সরকার কি রেভিনিউ হারায়নি? সরকারের তো রেভিনিউয়ের প্রয়োজন রয়েছে। যেখানে আমি জমি নিবন্ধন করতে পারছি না। কারণ কোনো জমির মালিক কোনো ডেভেলপারকে এই অনিশ্চয়তার মধ্যে জমি দেবে না। আমি এখন যে ডেভেলপার, ১৩ তলার হিসাব করে এপার্টমেন্ট বিক্রয় এবং কস্টিং করছিলাম, তাকে করতে হচ্ছে এখন ৫-৬ তলার কস্টিং হিসাব। সুতরাং ক্রয়ক্ষমতার জায়গাটা সংকুচিত হচ্ছে।
টিবিএস: ড্যাপের মূল সমস্যাটা হলো, এস্টাবলিশড জায়গাতে লিমিট করে দেওয়া।
হোসেন খালেদ: সব জায়গাতেই নয়। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মিডটাউন। গুলশানে কিন্তু সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। বারিধারাতে ইতিমধ্যে অর্জন করেছে। কমার্শিয়াল এলাকাতে কোনো ক্ষতি হয়নি। মিডটাউনে কারা থাকছে, মধ্যবিত্তরাই তো থাকছে। মধ্যবিত্তকে নজরে না নিয়েই, যারা বিত্তশালী তাদেরকে আমরা আরও ধনী করছি। কনডোমিনিয়াম যে প্রজেক্টগুলো আমাদের রয়েছে, ড্যাপের বিধিমালা অনুযায়ী সেগুলো ঠিক আছে। সেখানে কিন্তু কারো কোনো অভিযোগ নেই। উদ্বেগের কারণ আমাদের মিডটাউন।
টিবিএস: সব মিলিয়ে আপনি সামনে কি দেখছেন?
হোসেন খালেদ: ড্যাপের ক্ষেত্রে প্রথম যারা ডেভেলপার রয়েছে, রিহ্যাবের সাথে যে ডেভেলপাররা রয়েছেন ওনাদেরকে ছাড়াও, সরকারকে দেখতে হবে ভালো ডেভেলপার, পুরোনো ডেভেলপার যারা আছেন, তারা কি ড্যাপ নিয়ে সংলাপে যুক্ত হচ্ছেন কি না। যদি না হয়ে থাকে তাহলে সে ধরনের একট সংলাপ বা ডায়ালগের ব্যবস্থা করা। ডায়ালগটা না হলে আমাদের কী সমস্যা আর উনারা কী চাচ্ছেন এই প্রজেকশনটাই কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না। যেহেতু বিশেষ করে এই খাতের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রী নিজেই রয়েছেন, ওনার কাছে আমরা সবসময় একসেস পাবো না। তাই আমাদের কথাগুলো যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যেতে হয় তাহলে কিন্তু যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদেরকেই নিয়ে যেতে হবে।
টিবিএস: বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ২০২৩-২৪ সাল কি আপনি 'ট্রাবলসাম টাইম' হিসেবে দেখছেন?
হোসেন খালেদ: অর্থনীতি একটা চাকার মতো। ব্যবসার চাকা যেমন কোনো সময় উপরের দিকে যাবে, আবার নীচের দিকেও আসে।
আমাদের অর্থনীতি এমন কোনো পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যায়নি, যে এটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্যানিক (শঙ্কা) তৈরি হবে।
টিবিএস: সর্বশেষ জানতে চাই, এখন আপনাদের শীর্ষ ল্যান্ডমার্ক প্রজেক্ট কী আছে?
হোসেন খালেদ: এই মুহুর্তে আমার খুব পছন্দের একটা প্রজেক্ট আসতে যাচ্ছে। গুলশান এভিনিউয়ের ওপর আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। বনানীতেও একটা প্রজেক্ট রয়েছে। এছাড়াও আমাদের হাউজিংয়ে কয়েকটা প্রজেক্ট আসছে। হাউজিংয়ের কনডোমিনিয়াম প্রজেক্টগুলো এমনভাবে আমরা চিন্তা করছি, ঢাকার কাছাকাছি বা একটু বাইরে সেগুলো করা হচ্ছে। যেখানে মধ্যবিত্তদের জন্য আমরা বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। সহজ যাতায়াতের মাধ্যমে যে ঢাকার একটু বাইরে থেকেই ঢাকায় অফিস বা কাজ করতে পারে। আবার ঢাকার অন্য প্রান্তেও যদি যোগাযোগ করতে হয়, সেটিও যেন সহজে করতে পারে।