পেনাল্টি মিসের পরিণাম নিয়ে দুশ্চিন্তাই পেনাল্টি মিসের অন্যতম কারণ: গবেষণা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/12/11/wojciech-szczesny_169.jpeg)
ফুটবল খেলায় পেনাল্টিতে গোল করা সবচেয়ে সহজ আবার একই সাথে সবচেয়ে কঠিন কাজও বটে। কেননা ফুটবলে শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে দেখা যায় একজন খেলোয়াড় অনায়াসেই পেনাল্টিতে গোল করছেন, আবার অন্যজন করে বসছেন একের পর এক মিস। মেসি-লেভানদোফস্কির মত বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের পায়ের যাদুতে যেখানে পুরো বিশ্ব বুঁদ হয়ে থাকে, সেসব তারকারাও গুরুত্বপূর্ণ বহু পেনাল্টি মিস করেছেন। আবার তুলনামূলক কম বয়সেই নেইমার জুনিয়র যেন হেসেখেলে গোল দিয়ে দিচ্ছেন পেনাল্টিতে। ব্যক্তিবিশেষে এমন ভিন্নতার বিষয়টি নজরে এনে, পেনাল্টির সময় একজন খেলোয়াড়ের মনস্তাত্ব্বিক দিকটি নিয়ে গবেষণা করেছে নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অফ টুয়েন্টি। খবর কসমস ম্যাগাজিনের।
গবেষক ম্যাক্স স্লাটারের নেতৃত্বে করা এ গবেষণায় বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে। প্রথমত, গবেষকরা বুঝতে চেয়েছেন যে, একজন খেলোয়াড় যেখানে গড়ে ৫০ মিটার দূর থেকেও গোলবারে বল ঢুকাতে পারেন; ঠিক কী কারণে ঐ একই খেলোয়াড়ই মাত্র ১১ মিটার দূরের পেনাল্টি স্পট থেকে গোল করতে পারেন না। দ্বিতীয়ত, পেনাল্টি নেওয়ার সময় প্রচণ্ড মানসিক চাপ থাকে তা সত্য। কিন্তু মানসিক ঠিক কোন চাপের কারণে পেনাল্টি মিস হয় সেটিও এ গবেষণায় জানার চেষ্টা করা হয়েছে।
গবেষণায় ২২ জন স্বেচ্ছাসেবককে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে পেনাল্টিতে গোল করতে দেওয়া হয়। প্রথমদিকে বার ফাঁকা রেখে, পরবর্তীতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল গোলকিপার রেখে এবং সর্বশেষ, উপহার দেওয়ার শর্তে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী স্বয়ংক্রিয় বাধার বিপক্ষে গোল করতে দেওয়া হয়। এই ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে গোল করার সময় প্রতিপক্ষের পরিবর্তনে পেনাল্টি টেকারের মস্তিষ্কের ক্রিয়ায় কী পরিবর্তন ঘটে তা এফএনআইআরএস নামক একটি প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণায় ২২ জন স্বেচ্ছাসেবকের মস্তিষ্কের ক্রিয়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পেনাল্টির সময় বিদ্যমান চাপের সাথে মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ 'মোটর কর্টেক্সে'র সম্পর্ক রয়েছে। মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স হচ্ছে সেরিব্রাল কর্টেক্সের একটি অংশ, যেটি ব্যক্তির ঐচ্ছিক চলাচলার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবায়নের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে।
পেনাল্টি নেওয়ার আগে যেসব খেলোয়াড় বেশি উদ্বেগ ও পেনাল্টি মিস করার চিন্তা করেন, তাদের মস্তিষ্কে প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স একটিভ হয়ে যায়। কর্টেক্সের এই অংশ ব্যক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী চিন্তায় মগ্ন করে ফেলে। যার ফলে খেলোয়াড় পেনাল্টিতে গোল করার বিষয়ে ফোকাস না করে বরং পেনাল্টি মিস করলে পরিণাম কী হবে সে বিষয়ে মস্তিষ্কে বেশি ফোকাস করতে থাকেন। আর এ অবস্থায়ই সবচেয়ে বেশি পেনাল্টি মিস করে বসেন খেলোয়াড়রা।
গবেষক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পেনাল্টির সময় খেলোয়াড়দের চিন্তাভাবনায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এই গবেষণাটি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। যদি ফুটবলারদের অনুশীলনের সময় এফএনআইআরএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে মস্তিষ্কের কর্টেক্সের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি ট্রেইন করা হয় তবে আরও সূক্ষ্ম ও নির্ভুলভাবে পেনাল্টি নেওয়া সম্ভব হবে। এমনকি শুধু পেনাল্টির ক্ষেত্রেই নয়, বরং ব্রেইন সার্জারির মত নানা ধরনের অত্যাধিক চাপযুক্ত কাজের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।