এবারও বাঁধ নির্মাণকাজে বিলম্ব, উদ্বিগ্ন সিলেটের হাওর চাষীরা
এবারও হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় আসন্ন মৌসুমে ফসলের লোকসান হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন সিলেটের হাওর এলাকার কৃষকরা।
তারা বলছেন, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণে স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠিত হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ে শুরু হচ্ছে না বাঁধ নির্মাণের কাজ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো অনেক হাওর পানির নীচে রয়েছে। এ কারণে কিছুটা দেরিতে শুরু হচ্ছে নির্মাণকাজ।
এ অবস্থায় ১২টি উপজেলায় ২৭টি দল জরিপের কাজ করছে। যেসব হাওরে সম্ভব সেখানে দ্রুত পিআইসি গঠন করে বাঁধের কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
গত এপ্রিলের অকালবন্যায় সুনামগঞ্জে তলিয়ে যায় বেশ কয়েকটি হাওরে ফসল। বাঁধ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, গাফিলতি ও বিলম্বের কারণে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির অভিযোগ তোলেন কৃষকরা।
বন্যার পর সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুনামগঞ্জ এসে ঘোষণা দেন, এবার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের প্রাথমিক প্রক্রিয়া অক্টোবরেই শুরু হবে। আর নভেম্বর মাসের মধ্যে গঠন করা হবে প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)।
এছাড়া, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নীতিমালা অনুযায়ী, বাঁধ নির্মাণ কাজ ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তবে, এখন পর্যন্ত প্রাথমিক জরিপকাজ ও পিআইসি গঠনই সম্পন্ন হয়নি।
সূত্র জানায়, গত মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত উপজেলা জগন্নাথপুরে ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ সংস্কার কাজ করা হয়।
তবে এপ্রিলের অকাল বন্যায় বেশিরভাগ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার ৫০টি পিআইসি গঠনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে পাউবো। কিন্তু ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি কমিটিও গঠন করা সম্ভব হয়নি।
জনগন্নাথপুরের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই হাওরের বাঁধের কাজ নিয়ে গড়িমসি করা হয়। যে কারণে আগাম বন্যার কবলে ঝুঁকিতে পড়ে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ। সময়মতো কাজ শুরু না হলে নির্ধারত সময়ে কাজ শেষ হয় না।
তিনি বলেন, "এখন পর্যন্ত আমাদের হাওরের বাঁধের জপির কাজও শেষ হয়নি। কমিটি গঠন হবে কবে, আর কাজ কবে শুরু হবে তার কোনো ঠিক নেই।"
হাওরে জরিপ কাজ চলমান আছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জগন্নাথপুর কার্যালয়ের মাঠ কর্মকর্তা হাসান গাজী জানান, "প্রাথমিকভাবে হাওরে ৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ চলছে। এর মধ্যেই ৩০টি কমিটি আমাদের কাছে জমা হয়েছে।"
বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব হলে হাওরের ফসল ঝুঁকিতে পরবে জানিয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, "গত বছর অকাল বন্যায় বাঁধ ভেঙে অনেক হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। এবারও একমাস চলে গেছে, কিন্তু এখনো পিআইসি হয়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নির্ধারিত কাজ শুরু ও শেষ করা সম্ভব হবে না।"
পাউবোর নীতিমালা অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে কৃষক ও সুবিধাভোগীদের (স্টেকহোল্ডার) নিয়ে গঠিত পাঁচ থেকে সাত সদস্যের পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।
পাউবো সুনামগঞ্জে ৪৬টি ছোট-বড় হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে।
পাউবো'র সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিভাগ-২) মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, অনেক হাওর থেকে এখন পর্যন্ত পানি নামেনি। ফলে ইচ্ছা করলেও এখন অনেক জায়গায় কাজ শুরু করা যাবে না।
তিনি বলেন, "যেসব হাওর থেকে পানি নেমে গেছে, শুকনো মাটি পাওয়া যাবে এবং কাজ করা সম্ভব, সেখানে আমরা কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতোমধ্যে জরিপ কাজ শেষ হয়ে এসেছে। এরপর পিআইসি গঠন করা হবে।"
দিরাই উপজেলার দায়িত্ব থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম আবদুল মোনায়েম জানান, "পিআইসি গঠনের জন্য আমরা গণশুনানি করছি। দুএকদিনের মধ্যে পিআইসি গঠন শেষ হবে। এরপর কাজ শুরু হবে।"