রাশিয়া বিশ্বকাপে সাংবাদিকের দেওয়া সেই 'লাকি রিবন' এখনও নিজের পায়ে পরেন মেসি!
'সর্বকালের সেরা ফুটবলার' হিসেবে খ্যাত আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল আন্দ্রেস মেসির স্বপ্নপূরণের বছর ছিল ২০২২ সাল। নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ বাদের সব শিরোপাই জেতা হয়ে গিয়েছিল মেসির। গত ১৮ ডিসেম্বর সেই অধরা শিরোপায় চুমু খেয়েছেন সাবেক বার্সা কিংবদন্তি। মেসির দক্ষ নেতৃত্বে ৩৬ বছর পর তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতে আনন্দে ভাসছে আর্জেন্টিনার প্রতিটি নাগরিক। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদির কাছে হেরে বড় রকম অঘটনের জন্ম দিলেও, এরপরের সবকটি বাধা উৎরে গিয়েছে আলবিসেলেস্তেরা। ফাইনালে চরম রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি নিজেদের করে নিয়েছেন মেসি-ডি মারিয়ারা।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার যাত্রাকে সাধারণ তো বলা চলবেই না, বরং প্রতিটি ম্যাচেই লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে মেসি-বাহিনী। কিন্তু এই বিশ্বকাপ শিরোপা জয় কী শুধুই কঠোর পরিশ্রমের ফল?
ফিফা বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে এক মিনিটের মধ্যেও যে একটি দলের ভাগ্য বদলে যায় তা আর্জেন্টিনার চেয়ে ভালো আর কে জানে! ফাইনালের ৮০ মিনিটের মাথায় এমবাপ্পের পেনাল্টি এবং এরপরের ৯৭ সেকেন্ডের মাথায় দ্বিতীয় গোলে বিশ্বকাপ যে প্রায় হাতছাড়া হতে চলেছিল মেসির! কিন্তু বিশ্বকাপের এই নাটকীয় যাত্রায় ভাগ্যও মেসির সহায় ছিল বৈকি! এই ভাগ্যকে বিশ্বাস করেন বলেই কী আজও মেসির পায়ে সেই লাল ফিতে?
গল্পটা চেনা চেনা লাগছে কী? বিশ্বসেরা খেলোয়াড় হওয়ার দরুণ মেসির প্রতি ক্রেজ অনেক গণমাধ্যমকর্মীদেরও। রোজারিও থেকে উঠে আসা এই ক্ষুদে জাদুকরকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন তারাও। মাঝে অনেকগুলো বছর ভালো কাটেনি মেসির, কারণ জাতীয় দলের হয়ে ছিল না কোনো বড় শিরোপা। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল থেকে বিদায়, ২০১৮তে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়, কোপা আমেরিকার ফাইনালে হেরে বিদায়... অনেকগুলো ব্যর্থতার বাধা পেরিয়ে মেসি ২০২২ সালে পেয়েছেন বিশ্বকাপ। এক বছরের মধ্যে পেয়েছেন কোপা আমেরিকা ও ফাইনালিসিমা জয়ের স্বাদ।
কিন্তু মেসির লাগাতার দুর্ভাগ্য দেখেই বোধহয় ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের সময় এক সাংবাদিক মেসিকে দিয়েছিলেন 'লাকি রেড রিবন' বা সৌভাগ্যের প্রতীকস্বরুপ একটি লাল ফিতে।
২০১৮ বিশ্বকাপে মেসির মুখোমুখি হয়েছিলেন ওই সাংবাদিক। কথা বলার এক পর্যায়ে বার্সা তারকাকে তিনি বলেন, "আমার মা আমার চেয়ে বেশি আপনাকে ভালোবাসে। তার দেওয়া একটি গুড লাক রিবন আমার কাছে আছে। আপনি চাইলে এটা আমি আপনাকে দিতে পারি।"
তখন মেসি জবাব দিয়েছিলেন, "হ্যা, অবশ্যই!" ফলে ওই সাংবাদিক মেসিকে লাল ফিতেটি দিয়ে বলেছিলেন, "এটা আমার মায়ের পক্ষ থেকে, তাই যত্ন করে রাখবেন দয়া করে।"
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গোল করার পর আবারও মেসির সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন সেই সাংবাদিক। সেদিন তিনি বলেছিলেন, "আপনার মনে আছে কিনা জানিনা, আমার মা আপনাকে একটা গুড লাক রিবন দিয়েছিল।"
সাথেসাথেই মেসি তার পায়ের দিকে দেখিয়ে সাংবাদিককে বলেন, "এই দেখো।" মেসি সেই লাল ফিতে পায়ের গোড়ালিতে পরেছিলেন। কিন্তু ওই সাংবাদিক নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে মেসি সত্যিই সেটা পরেছেন। চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে তিনি বলে ওঠেন, "সত্যিই? সত্যিই আপনি এটা নিজের পায়ে পরেছেন!?"
তখন মেসি বলেন, "হ্যাঁ, আমি পরেছি।" ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে সাংবাদিক তখন বলে ওঠেন- "প্রিয় মা, দেখো মেসি এটা পরেছে!"
কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, অচেনা সেই সাংবাদিকের দেওয়া 'গুড লাক রিবন' আজও মেসি তার পায়ে পরেন! এমনকি ক্লাব ও জাতীয় দলের দুয়েকজন সতীর্থ যখন খারাপ সময় পার করেছেন, তখন মেসি সেই রিবন তাদেরকেও পরতে দিয়েছেন বলে খবর রয়েছে।
২০১৮ বিশ্বকাপে ব্যর্থ হলেও এবার কাতার বিশ্বকাপে আর ব্যর্থ হননি ক্ষুদে জাদুকর। নিজের দুর্দান্ত পারফরমেন্সের পাশাপাশি দলকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ। জিতেছেন গোল্ডেন বল।
বিশ্বকাপ জেতার পরে উদযাপনের সময় তোলা বিভিন্ন ছবিতে মেসির পায়ে দেখা গেছে সেই লাল রিবন। সাতবারের ব্যালন দ'অর জয়ী মেসি যে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের পর বিশ্বকাপ পেয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই; কিন্তু নাম না জানা এক সাংবাদিকের দেওয়া উপহার যে তিনি মনে রেখেছেন এবং সেটিকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন, তা শুধু লিওনেল মেসি বলেই হয়তো সম্ভব হয়েছে!
সূত্র: এনডিটিভি